করোনার থাবায় কলকাতায় প্রথম মৃত্যু

দমদমের করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রৌঢ় রেলকর্মী সমীর মিত্র সোমবার দুপুর ৩:৩৫ মিনিট নাগাদ মারা গেলেন সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে।

Written by SNS Kolkata | March 24, 2020 10:42 pm

কলকাতায় লকডাউন। (Image: Twitter@KPSoutheastDiv - Debasmita Das, IPS, Deputy Commissioner of Police, South East Division, Kolkata)

দমদমের করোনাভাইরাস আক্রান্ত প্রৌঢ় রেলকর্মী সমীর মিত্র সোমবার দুপুর ৩:৩৫ মিনিট নাগাদ মারা গেলেন সল্টলেকের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেই সময় নবান্নে করোনা সতর্কতায় সর্বদলীয় বৈঠক করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

সংবাদটি শোনার পর তিনি পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মাকে নির্দেশ দেন, যে ব্যক্তি মারা গিয়েছে, তার মৃতদেহ থেকে যেন কোনওভাবে সংক্রমণ না ছড়ায়। ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যুর পর কী করণীয়, তা জানতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ওই ব্যক্তির মরদেহ দাহ করার ক্ষেত্রেও বিশেষ নিয়ম মানা হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মেনে যাতে গোটা প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়, সেজন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। 

সোমবার দুপুরে নোভেল করোনাভাইরাস আক্রান্ত হয়ে সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে মৃত্যু হল ফেয়ারলির রেলকর্মী বছর সাতান্নর প্রৌঢ় সমীর মিত্রের। প্রথমে মনে করা হয়েছিল, দমদমের বাসিন্দা ওই ব্যক্তির সরাসরি বিদেশযাত্রার কোনও রেকর্ড নেই। শুকনো কাশির সমস্যা নিয়ে গত ১৩ মার্চ জ্বর এবং সর্দি-কাশি নিয়ে তিনি সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। ১৯ মার্চ তার শ্বাসকষ্ট বাড়তে থাকায় ভেন্টিলেটরে দেওয়া হয়। ২০ মার্চ তার লালারসের নমুনা নাইসেডে এবং এসএসকেএম-এ পাঠানো হয়েছিল। যার রিপোর্ট থেকে জানা যায়, তিনি কোভিড ১৯ ভাইরাসে আক্রান্ত। 

সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে এক্সট্রাকর্পোরিয়েল মেমব্রেন অক্সিজেনেশনে রাখা হয়েছিল তাকে। ২৩ মার্চ সোমবার সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থান অবনতি হতে থাকে। চিকিৎসকদের আপ্রাণ চেষ্টার পরেও সোমবার দুপুরে থেমে যায় তার জীবন। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন দুর্বল হৃদযন্ত্রের কারণেই তাকে অনেক চেষ্টা বাঁচানো যায়নি। 

অন্যদিকে সোমবার বেলেঘাটায় আইসোলেশনে থাকা দুই করোনা আক্রান্তেরও এদিন তীব্র শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়। এঁদের মধ্যে একজন লন্ডন ফেরত পণ্ডিতিয়া রোডের আবাসনের বাসিন্দা। অন্যজন স্কটল্যান্ড ফের তরুণী। দমদমের বাসিন্দা ওই প্রৌঢ়ের সরাসরি বিদেশযাত্রার রেকর্ড না থাকলেও ভিন রাজ্য থেকে সংক্রমণ নিয়ে আসার যোগসূত্র রয়েছে। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় বৈঠকে জানান, ওই ব্যক্তির সঙ্গে ইতালি ফেরত পারিবারিক সদস্যের যোগ রয়েছে।

একটি অসমর্থিত সূত্রের খবর ওই প্রৌঢ় দিনকয়েক আগে আগ্রা গিয়ে তার ইতালি থেকে আগত পুত্রের সঙ্গে দেখা করেন। মৃতের পরিবার অবশ্য এই ঘটনা স্বীকার করেননি। 

অন্যদিকে স্বাস্থ্যভন্ন সূত্রে খবর, গত ফেব্রুয়ারি মাসে এক আত্মীয়ের বিয়েতে যোগ দিতে তিনি বিলাসপুরে গিয়েছিলেন। তারপর ২ মার্চ পুণে হাওড়া আজাদ হিন্দ এক্সপ্রেসে চেপে তিনি কলকাতা ফেরেন। পুণেতেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বিয়েবাড়িতে কয়েকশো মানুষের সংস্পর্শে আসেন ওই প্রৌঢ়। যাদের অনেকেই ট্রেনে চেপে ফিরেছেন। তাদেরকেও চিহ্নিত করার কাজ চলছে ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে ওই প্রৌঢ়ের পিরজন এবং পরিচিতদের কয়েকজনও হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। অনেককে গৃহ পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। মৃত সমীর মিত্র ছিলেন রেলের উচ্চপদস্থ কর্মী। কলকাতায় ফিরে তিনি পাঁচদিন অফিস করেন। ১০ মার্চ অসুস্থ বোধ করার আগে জন্মদিন উপলক্ষে নিউটাউনের শপিং মলে গিয়েছিলেন। সল্টলেকের বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর দুই চিকিৎসক তাকে দেখেন। 

একজন স্বাস্থ্যকর্মী বাড়িতে এসে তার রক্তের নমুনা নিয়ে যান। এমনকী এক্সরে করার জন্য সল্টলেকের একটি ডায়াগোনাস্টিক সেন্টারেও গিয়েছিলেন। সমীরবাবু। সেইসময় এক রিকশাচালক এবং ডায়াগোনাস্টিক সেন্টারের এক কর্মী ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছিলেন। এদের সকলকেই চিহ্নিত করার কাজ চলছে। এছাড়া ওই প্রৌঢ়ের বাড়ির দুই পরিচারিকা এবং প্রতিবেশি বৃদ্ধ দম্পতিকেও পর্যবেক্ষণে রাখা উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্যকর্তারা।

ওই ব্যক্তির সঙ্গে বিদেশের যোগাযোগের কথা পারিবারিক সদস্যরা স্বীকার করায়, রাজ্যজুড়ে আতঙ্ক ছড়ায় যে, রাজ্যে কমিউনিটি ট্রান্সমিশন তথা বিদেশি যোগ ছাড়াই গোষ্ঠী সংক্রমণ শুরু হয়ে গেল। তবে ওই মৃত ব্যক্তির সঙ্গে সরাসরি না হলেও বিদেশি যোগাযোগের হদিশ মেলে শেষ পর্যন্ত। যা মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন ওই প্রৌঢ়ের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর।