নৈহাটিতে বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ

বাজেয়াপ্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বঙ্কিমের শহর নৈহাটি। বাদ যায়নি গঙ্গার ওপারে চুঁচুড়াও।

Written by SNS Barrackpore | January 10, 2020 3:04 pm

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

বাজেয়াপ্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণে কেঁপে উঠল বঙ্কিমের শহর নৈহাটি। বাদ যায়নি গঙ্গার ওপারে চুঁচুড়াও। গােটা ঘটনায় আহত হয়েছে দুই শিশু সহ এক বৃদ্ধ।

বৃহস্পতিবার নৈহাটির রামাঘাটের ছাইমাঠ এলাকায় বাজেয়াপ্ত বাজি নিষ্ক্রিয় করার সময় ঘটে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। যার জেরে আশপাশের প্রায় এক কিমি অঞ্চল জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় তিরিশটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আহত হয় দুই শিশু সহ এক বৃদ্ধ। ক্ষতিগ্রস্ত হয় স্থানীয় একটি স্কুলও। এরপরেই স্থানীয়দের রােষ এসে পড়ে পুলিশের ওপর। ভাঙচুর করা হয় পুলিশের গাড়ি। এমনকি আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয় পুলিশের দুটি গাড়িতে। স্থানীয়দের হাতে আক্রান্ত হয় পুলিশ কর্মীরা।

প্রসঙ্গত চলতি মাসের ৩ তারিখ নৈহাটির মামুদপুর পঞ্চায়েতের দেবক গ্রামের মসজিদ পাড়ায় একটি বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণ হয়। তাতে প্রাণ হারাণ চারজন। তারপর থেকেই ওই এলাকার বাজি কারখানাগুলি তল্লাশি চালিয়ে প্রচুর পরিমাণ বাজি ও বাজি তৈরির মশলা বাজেয়াপ্ত করে নৈহাটি থানার পুলিশ। বাজেয়াপ্ত করা ওই বাজিই বেশ কয়েকদিন ধরেই নিষ্ক্রিয় করার কাজ চালাচ্ছিল বােম্ব স্কোয়াড ও পুলিশ।

এদিনও বেলা দেড়টা নাগাদ রামঘাটের গঙ্গার পাশে ছাইমাঠ অঞ্চলে বাজি নিষ্ক্রিয় করার কাজ চলছিল। সেই সময় প্রচন্ড শব্দে বিস্ফোরণ হয়। কেঁপে ওঠে রামঘাট লাগােয়া বেশ কয়েকটি বাড়ি। ভেঙে পড়ে কাচের জানালা, দরজা। এছাড়াও রামঘাটের ওপারে অবস্থিত চুঁচুড়ার বেশ কয়েকটি বাড়িও এই বিস্ফোরণের ফলে ক্ষতি হয়।

বােমা নিষ্ক্রিয়করণের পদ্ধতি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন স্থানীয়রা। পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বচসা বেঁধে যায় দু’পক্ষের। তারপরই পরপর দুটি পুলিশের গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। এমনকি দুটি গাড়ি ভাঙচুরও হয়। স্থানীয়দের রােষে পড়ে বােম্ব স্কোয়াডের দুই কর্মী ও দুই জন সাব ইন্সপেক্টর মােট চার পুলিশ কর্মী আহত হন। তবে কেউ হতাহত না হলেও বাড়ির এসবেস্টরস চাপা পড়ে নৈহাটি নরেন্দ্র প্রাথমিক বিদ্যানিকেতনের প্রথম শ্রেণির ছাত্র সােহম মন্ডল গুরুতর জখম।

ঘটনার সময় সােহম ঘরে ঘুমাচ্ছিল। সােহমের ঠাকুরদা হারু মন্ডলের মাথায় এসবেস্টরস ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন। এছাড়াও দেড় বছরের সজল দাস নামেও এক শিশু আহত হয় এই ঘটনায়। স্থানীয়দের দাবি দুই ট্রাক বাজি কোন রকম পরিকল্পনা ও পদ্ধতি না মেনেই নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয়দের আরও দাবি, তারা পুলিশকে জানিয়েছিল ওই স্থানে বাজি নিষ্ক্রিয় না করতে। তবে পুলিশ ঘরে ঢুকিয়ে দিল।

তারপরেই বিস্ফোরণের জেরে কারও বাড়ির দেওয়াল ফাটল, কারও জানালা দরজার কাচ ভেঙে পড়ে। এমনকি কারও কারও বাড়ির এসবেস্টরস ভেঙে পড়ে। এরপরেই ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পুলিশের প্রতি ক্ষোভ উগরে দেয়। পুলিশ কর্মীদের মারধর করা হয়। ঘটনাস্থলে তীব্র উত্তেজনা থাকায় পুলিশ মােতায়েন করা হয়েছে। যদিও স্থানীয়দের দাবি পুলিশের গাড়িতে বিস্ফোরক কিংবা বারুদ ছিল। বিস্ফোরণে আগুনের ফুলকি গিয়ে পুলিশের দুটি গাড়ির ওপর পড়লে সেই গাড়ি জ্বলে ওঠে।

এদিন আহত শিশু সােহমের মা সৰ্বানি মন্ডল কাঁদকে কাঁদতে বললেন, বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ছিল ঘরের এসবেস্টরসের ছাউনি ভেঙে ছেলে গুরুতর আহত হয়েছে। গায়ে লেপ থাকায় ছেলে অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে গেল। পাশের ঘরে শ্বশুর ছিল। এসবেস্টরস ভেঙে শ্বশুরের মাথায় পড়েছে।

এদিকে সন্ধ্যায় বিস্ফোরণ স্থল পরিদর্শনে যান বারাকপুরের পুলিশ কমিশনারর মনােজ বার্মা। পনেরাে মিনিট ঘটনাস্থলে থাকেন। পরিদর্শনের পর মনােজ বার্মা জানান, দিন কয়েক আগে দেবক গ্রামে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে বিস্ফোরক উদ্ধার হয়। তারপর থেকেই প্রতিদিন ওই এলাকায় তল্লাশি চলছে। তল্লাশিতে বিস্ফোরক মিলেছে। এখন এইসব বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করার কাজ করে থাকেন বম্ব ডিসপােজাল স্কোয়াডের বিশেষজ্ঞরা। তাঁরাই ঠিক করেন কীভাবে সেই বিস্ফোরক নিষ্ক্রিয় করা হবে। একবারে কতটা পরিমাণে নিষ্ক্রিয় করা হবে তা বিশদে তারাই বলতে পারবেন। আমার জানা নেই। ফরেন্সিক তদন্ত হবে।

অন্যদিকে এই ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। ঘটনার পরেই বিস্ফোরণের জায়গায় যান বিজেপি সাংসদ লকেট চ্যাটার্জি, বিধায়ক শুভ্রাংশু রায়। তারা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলি খতিয়ে দেখেন। কথা বলেন বাড়ির লােকজনের সাথে। এরপরে বিজেপি সাংসদ গােটা ঘটনার জন্য মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করেন। গােটা ঘটনার দায় মুখ্যমন্ত্রীকে নিতে হবে বলে দাবি করেন।

তিনি আরও বলেন, কোনও বাজি নয় অন্যকিছু নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছিল। এর এনআইএ তদন্ত দরকার। তিনি এই ঘটনার পিছনে মুখ্যমন্ত্রীর চক্রান্ত রয়েছে বলেও দাবি করেন। সিপিএম নেতা মহম্মদ সেলিমও মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল সরকারকে দায়ী করেন। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রী, পুলিশকে বাজি ও বােমাকে মিলিয়ে দিতে বলেছেন। যার পরিনামেই এই ঘটনা। আরএসএস ও তৃণমূলের কোনও পার্থক্য নেই।

তবে শাসক দলের তরফে অভিযােগ অস্বীকার করে স্থানীয় বিধায়ক পার্থ ভৌমিক জানায়, রাজনীতি করার জন্য কেউ কেউ এসেছে সাহায্যের জন্য নয়। তারা মানুষের পাশে আছে। তিনি নিজে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনাস্থলে রয়েছে। সাহায্যের প্রক্রিয়া চলছে। তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি জানান, পুলিশ কেন এটা করল প্রশাসনিক স্তরে তদন্ত নিশ্চয়ই হবে। তবে ৩৪ বছর ধরে কত মানুষ মারা গিয়েছে তা মানুষ দেখেছে। সেলিম হালিমরা এসব বলবে। মমতা খাটবে আর বিরােধীরা মোয়া খাবে তা মমতা ব্যানার্জি খেতে দেবে না। এদিন রাজ্যপাল এ বিষয়ে টুইট করে গােটা ঘটনায় বিশেষজ্ঞ তদন্তের দাবি জানায়।

এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী বারাসতের মঞ্চ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সাহায্যের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, যদি কারও বাড়ি ক্র্যাক হয়ে থাকে এবং সে ক্ষেত্রে প্রয়ােজনীয় সাহায্য করা হবে। চিন্তা করবেন না। একটা কারও ক্ষতি হয়ে থাকে সেটা তাে নিশ্চয়ই আমাদের দেখার দায়িত্ব এটা আমরা দেখবাে। যতটা ক্ষতি হয়েছে সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সাহায্য করব, চিন্তা করবেন না।