ত্রাণ নিয়ে কোনও রাজনীতি করবেন না, বিধ্বস্ত এলাকা পরিদর্শনের পর নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর

ত্রাণ বণ্টন নিয়ে যেন কোনও রাজনৈতিক রং না লাগে, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে পাশে দাঁড়ানাের কথাও বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

Written by Rakesh Shil Kolkata | November 14, 2019 1:20 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। (File Photo: IANS)

কোনও রকম রং যেন দেখা না হয়, ক্ষতিগ্রস্তরা সকলেই যেন ত্রাণ পান। ত্রাণ নিয়ে যেন মানুষের মধ্যে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভ না থাকে। বুধবার ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উত্তর ২৪ পরগনা জেলার বসিরহাট মহকুমার সন্দেশখালি, হিঙ্গলগঞ্জ, হাসনাবাদ সহ বিভিন্ন ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আকাশ পথে ঘুরে দেখে এই নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

এরপর বসিরহাট মেরুদণ্ডী এলাকায় হেলিপ্যাডে নামেন সাড়ে বারােটা নাগাদ। পাশেই কর্মতীর্থে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মত প্রশাসনিক বৈঠকের আয়ােজন করা হয়। এই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, জেলাপরিষদের সভাধিপতি তথা স্বরূপনগরের বিশ্বায়ক বীণা মণ্ডল, বিধায়ক দীপেন্দু বিশ্বাস, সুকুমার মাহাত, জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ফিরােজকামাল গাজি, জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তী, বসিরহাটের পুলিশসুপার কঙ্করপ্রসাদ বারুই সহ প্রশাসনের আধিকারিকরা।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আকাশ পথে দেখলাম অনেক জায়গায় এখনও জল জমে রয়েছে। বাঁধ ভেঙে জলও ঢুকছে। ভয়াবহ পরিস্থিতি। কলকাতা থেকে বােঝা যায় না কতটা ক্ষতি হয়েছে। বুলবুলের তাণ্ডরে ক্ষতির পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। তা কয়েকশাে কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে। ১৫ লক্ষ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি পাকা ধানে মই পড়েছে বলেন তিনি।

বুলবুলের পরবর্তী পদক্ষেপে আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, ডায়রিয়া, কলেরা রােগের প্রকোপ বৃদ্ধি হতে পারে। তার জন্য ইতিমধ্যেই স্বাস্থ্য দফতরের তরফে মেডিকেল টিম গ্রামে গ্রামে গিয়ে কাজ করবে। পাশাপাশি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে এই দুর্যোগ মােকাবিলায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

ত্রাণ বণ্টন নিয়ে যেন কোনও রাজনৈতিক রং না লাগে, দল-মত নির্বিশেষে সবাইকে পাশে দাঁড়ানাের কথাও বলেন তিনি। বুলবুলের প্রভাবে নদীবাঁধ ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে, ক্ষতি হয়েছে পানের বরােজ, ধান ও শাকসবজির। বিশেষজ্ঞদের দাবি সুন্দরবনকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা করেছে ম্যানগ্রোভ। তাই বাঁধ ভাঙা রুখতে সেচ কর্তাদের ম্যানগ্রোভ অরণ্য বৃদ্ধির নির্দেশ দেন। পাশাপাশি ভাঙন দেখতে বন দফতর যে বিশেষ ঘাস ব্যবহার করেন সেই ঘাস ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।

সেচদফতরের কর্তাদের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, কংক্রিট করে বাঁধ রােখা যাবে না। প্রতিবছর বাঁধ ভাঙবে। তাই ম্যানগ্রোভ বৃদ্ধি করুন। আয়লার পর সুন্দরবনে সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল চাষের জমিতে নােনাজলের প্রবেশ। এর পরে পতিত হয়ে যায় বেশ কিছু জমি। এবারও বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তা ঘটেছে। দ্রুত সেই জমা জল সরানাের পাশাপাশি এই ঝড়ে যে ১২০০বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে দ্রুত সেইগুলি সারিয়ে বিদ্যুৎ পরিষেবা ফিরিয়ে আনার কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বিদ্যুৎ দফতরের কর্তারা জানান, ইতিমধ্যেই বেশিরভাগ অঞ্চলেই বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়েছে। এরপরে মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে সব অঞ্চলে এখনও বিদ্যুৎ পরিষেবা চালু হয়নি সেখানে মানুষের যাতে সমস্যা না হয় তার জন্য ৫ লিটার করে কেরােসিন এবং হ্যারিকেন দেবার নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। পানীয় জলেরও যেন কোনও সমস্যা না হয় সে জন্য ইতিমধ্যেই সাড়ে ছয় লক্ষ জলের পাউচ দেওয়া হয়েছে এবং আরও পঞ্চাশ লক্ষ দেওয়া হবে। অন্যদিকে প্রশাসনিক বৈঠক শেষ হবার পর এদিন মুখ্যমন্ত্রী ঝড়ে নিহতদের পরিবারের সদস্যদের হাতে ২ লক্ষ ৪০ হাজার টাকার চেক তুলে দেন।