রাজনীতির আগুনে মৃত্যু মিছিল, বদলার আগুনেই কি জ্বলল বগটুই

রাজনীতির কঙ্কালসার চেহারার ছবিটা ফের দেখা গেল বাংলার বুকে। মৃত ব্যক্তিরা কোন দলের সমর্থক, তাঁদের কী অপরাধ, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে ঠিকই।

Written by দেবাশিস দাস Kolkata | March 23, 2022 2:17 am

প্রতীকী ছবি (Photo: SNS)

একটা খুনের ঘটনা এবং তাকে কেন্দ্র করে পাল্টা ঘটনায় মৃত্যুমিছিল বীরভূমের বগটুইতে। মৃতের সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। শেষ পর্যন্ত কত জন মানুষের মৃত্যু হল, তা নিশ্চয়ই সামনে আসবে।

কিন্তু রাজনীতির কঙ্কালসার চেহারার ছবিটা ফের দেখা গেল বাংলার বুকে। মৃত ব্যক্তিরা কোন দলের সমর্থক, তাঁদের কী অপরাধ, তা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ হবে ঠিকই। কিন্তু যাঁরা সারা জীবনের জন্য হারিয়ে গেলেন, তাঁদের পরিবারের লোকেদের কাছে এই দুঃস্বপ্ন কিন্তু আমৃত্যু তাড়া করে বেড়াবে।

ইতিমধ্যে এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। শাসক বিরোধী তরজায় রাজ্য রাজনীতি রীতিমতো সরগরম। কিন্তু একসঙ্গে এতগুলি মৃত্যুর জন্য কে দায়ী সেটাই এখন বড় কথা।

সোমবার রাত সাড়ে আটটায় তৃণমূলের উপপ্রধান ভাদু শেখ খুন হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অগ্নিসংযোগ করা হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা যাচ্ছে। আগুনে ঝলসে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল বলেন শর্টসার্কিট থেকে আগুন লেগেছে।

ছবি (Photo: SNS)

কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বলছে। অনুব্রত মণ্ডল এই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনার জন্য যে সাফাই দিক কেন, নিরপেক্ষ তদন্তে সবকিছু জলের মতো স্পষ্ট হয়ে যাবে, এমনটাই মনে করা হচ্ছে।

রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালবা জানিয়েছেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির এখনও পর্যন্ত কোনও যোগ খুঁজে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত শত্রুতার জেরে এই ঘটনা হয়ে থাকতে পারে স্বাভাবিকভাবে এই মৃত্যু মিছিলকে ঘিরে বড়সড় প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

শাসক দলের অন্যতম প্রভাবশালী নেতা অনুব্রত মণ্ডলের কথা যদি সত্যি বলে ধরে নেওয়া যায়, তাহলে শর্ট সার্কিটের মতো ঘটনায় কেন রামপুরহাট থানার ওসিকে ক্লোজড এবং রামপুরহাটের এসডিপিও’কে সরানো হল? তা বোধগম্য হচ্ছে না।

তবে খালি চোখে বুঝতে অসুবিধা হয় না শর্টসার্কিটের ঘটনার তত্ত্ব এখানে খাটছে না। রাজা পুলিশের ডিজি দাবি করেছেন, এই ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও যোগসূত্র নেই।

এদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় দাবি করেছেন, এটি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র। এই পরস্পরবিরোধী মন্তব্যকে ঘিরে অনেক প্রশ্ন উঁকি দিতে শুরু করেছে। বিজেপি এই ঘটনাকে হাতিয়ার করে রাজ্যে ৩৫৫ ধারার দাবিতে সরব হয়েছে।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দিল্লিতে এদিন দেখা করেছে বিজেপির প্রতিনিধি দল। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল ঘটনা সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে বাংলায় এলো বলে। কিন্তু প্রশ্ন একটাই। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আমলে এত বড়সড় ঘটনা এটাই প্রথম।

কিন্তু বিগত বাম সরকারের আমলে এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটেছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল রাজ্যের শাসক দল। এক্ষেত্রেও সেই একই অভিযোগ রয়েছে।

যে বা যারা এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত তাদের কাউকেই রেয়াত করা হবে না, এমনটাই বলছেন রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। তাহলে অনুব্রতর শর্টসার্কিটের তত্ত্ব যে কোনওভাবেই প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না, তা পুর ও নগরোন্নায়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যেই স্পষ্ট।

অন্যদিকে রামপুরহাটের বগটুইয়ের এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যের প্রশাসনিক এবং সাংবিধানিক প্রধানের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়েছে। দোষারোপ এবং পাল্টা দোষারোপের পালার মধ্যে সব চেয়ে বড় প্রশ্ন, এতগুলো মৃত্যুর কে দায় নেবে? রামপুরহাট থানার দূরত্ব কাটুই থেকে খুব বেশি দূর নয়।

এত বড়সড় ঘটনা ঘটতে চলেছে, আর পুলিশ প্রশাসন তার আঁচ পেল না, সেটাই সবচেয়ে বড় আশ্চর্যের এলাকায় একটি খুনের ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনের তরফে যে ধরনের অতিসক্রিয়তার প্রয়োজন ছিল, তার যে বড্ড অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

রাজনীতির এই কুটকাচালির মধ্যে পড়ে শিশু, মহিলা সহ নিরীহ মানুষজনের মৃত্যু বার বার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, এই লজ্জা ঢাকার মতো কোনও জায়গা নেই। এই লজ্জা আমরা রাখব কোথায়? করে আমাদের শুভ বোধের উদয় হবে?

এই ধরনের ঘৃণ্য রাজনীতি ঘেরাটোপ থেকে সত্যিই কি কোনওদিন পশ্চিমবঙ্গ মুক্ত হবে? বিহার পারলে আমরাই বা পারব না কেন এর উত্তরের অপেক্ষায় বাংলা।