দময়ন্তী সেনের হাতে ৪টি ধর্ষণ মামলার তদন্তভার

মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চারটি পৃথক ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলায় তদন্তভার তুলে দেওয়া হলো আইপিএস দময়ন্তী সেনের উপর।

Written by মোল্লা জসিমউদ্দিন Kolkata | April 13, 2022 6:42 pm

দময়ন্তী সেন (Photo: SNS)

মঙ্গলবার দুপুরে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে চারটি পৃথক ধর্ষণ সংক্রান্ত মামলায় তদন্তভার তুলে দেওয়া হলো আইপিএস দময়ন্তী সেনের উপর। জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজ্যের চারটি ধর্ষণের মামলার তদন্ত চলবে কলকাতা হাইকোর্টের নজরদারিতে।

আদেশনামায় উল্লেখ রয়েছে, হাইকোর্টের তদারকিতে বিশেষ টিম গঠন করে তদন্ত চালানো হবে। আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করেছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব ও বিচারপতি রাজর্ষি ভাল্লাজের ডিভিশন বেঞ্চ।

এদিন শুনানি পর্বে হাইকোর্ট জানিয়েছে মাটিয়া, ইংরেজবাজার, বাঁশদ্রোণী এবং দেগঙ্গার ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত চলবে কলকাতার হাইকোর্ট গঠিত টিমের নজরদারিতে। দাখিল পিটিশনে মামলাকারীরা দাবি করেছিলেন তদন্ত চালাতে হবে দময়ন্তী সেনের নেতৃত্বে।

এই শুনানি চলাকালীন প্রধান বিচারপতি এজলাসে জানান, হাইকোর্ট থেকে একটি বিশেষ দল গঠন করা হবে যে দলের সদস্যরা রাজ্যের সমস্ত ধর্ষণ মামলার তদন্ত তদারকি করবেন। এই দলের নেতৃত্বে থাকবেন আইপিএস অফিসার দময়ন্তী সেন। তাঁর যদি কোনও সমস্যা হয় তবে তিনি আদালতকে তা জানাবেন’।

আগামী ২০ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে বলে জানা গেছে। গত কয়েকদিন ধরে পশ্চিমবঙ্গে একের পর এক ধর্ষণের ঘটনা সামনে আসছে। হাঁসখালি থেকে নামখানা, মাটিয়া থেকে বোলপুর পরপর নারী নির্যাতন। ঘটনা ক্রমশ বাড়ছে রাজা জুড়ে। এই পরিস্থিতিতে কলকাতা হাইকোর্টে এদিন শুনানি শুরু হয় মাটিয়া ও ইংরেজবাজার ধর্ষণের মামলার।

পরপর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে বিচারপতির প্রশ্নের উত্তরে এজি বলেছেন, ‘রাজ্যের প্রতিটি স্তরে রাজনীতি বিরাজ করছে। প্রতিটি ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। শুনানি শেষে আদালত রায় দেয় চারটি ধর্ষণ মামলার তদন্ত চলবে আদালতের নজরদারিতেই।

আগামী ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি রয়েছে। এই তদন্ত কমিটির নেতৃত্বে রাখা হয়েছে আইপিএস দময়ন্তী সেনকে। গত ২০১২ সালে পার্ক স্ট্রিট গণধর্ষণ মামলায় তদন্ত করেছিলেন তিনি। সেইসময় তাঁর স্বচ্ছ ভাবমূর্তি প্রশংসনীয় হয়ে উঠেছিল অনেকেরই কাছে।

তবে ওই মামলার তদন্ত ঘিরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে চাপানউতোর তৈরি হয়েছিল দময়ন্তী সেনের। তাঁকে কলকাতা পুলিশের পদ থেকে বদলি করা হয়। সাত বছর পর আবার তিনি কলকাতা পুলিশে ফিরে এসেছেন। এখন তিনি কলকাতা পুলিশের স্পেশ্যাল কমিশনার। পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের দায়িত্বে রয়েছেন।

এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ডিভিশন বেঞ্চ শুনানিতে মাটিয়া মামলার তদন্তভার দময়ন্তী সেনকে দেওয়ার আর্জি জানায় মামলাকারী। মামলাকারীর আইনজীবী এজলাসে জানান, এই রনের তদত্তের অভিজ্ঞতা রয়েছে এই আইপিএস অফিসারের’।

প্রত্যুত্তরে প্রধান বিচারপতি প্রকাশ শ্রীবাস্তব বলেন, ‘দময়ন্তী সেন পুলিশ ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সঙ্গে যুক্ত। সেই কাজে ক্ষতি হবে। মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, ‘তিনি শুধু পুলিশ অ্যাকাডেমির সঙ্গে যুক্ত।

মঙ্গলবার দুপুরে একের পর এক ধর্ষণের অভিযোগ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেন প্রধান বিচারপতি। প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘রাজ্যে পরপর একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। রাজ্যের পরিকাঠামো থাকার পরও কেন ঘটছে। আমরা প্রতিটি ঘটনা আলাদা করে তদন্ত করব। যেখানে মনে হবে তদন্তকারী সংস্থার হাতে তদন্তভার দেওয়া হবে।

এদিন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘তদন্তে নজরদারি করতে কোনও আপত্তি থাকলে তা জানাতে পারেন দময়ন্তী সেন’। ২০ এপ্রিল মামলার পরবর্তী শুনানি। তিনি তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দিতে পারবেন কি না? তদন্ত কমিটির নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে তিনি কোনও আপত্তি জানান কি না, সেটাই এখন দেখার।

ঘটনা ১: গত ২৪ মার্চ উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাটের মাটিয়ায় ১১ বছরের এক নাবালিকাকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। উপহারের লোভ দেখিয়ে নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে এক যুবক তাকে যৌন নির্যাতন করে। নির্যাতিতাকে ভর্তি করা হয় আরজিকর হাসপাতালে। ১১ এপ্রিল হাসপাতাল থেকে তাকে ছাড়া হয়।

ঘটনা ২: গত ২৭ মার্চ মালদা জেলার ইংরেজবাজারের শোভানগর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে প্রতিবেশী যুবকের বিরুদ্ধে। বাড়িতে ঢুকে কিশোরীর মুখ, হাত বেঁধে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে ধর্ষণ করা হয়।

গুরুতর আহত অবস্থায় ওই কিশোরীকে মালদা মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি করা হয়। জানা গিয়েছে, ওই কিশোরী এ বছর মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছে। ঘটনা ৩ গত ২৮ মার্চ দেগঙ্গায় এক মহিলার অর্ধনগ্ন মৃতদেহ উদ্ধার হয় ।

অভিযোগ, মদ খাওয়ানোর পর ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে তাঁকে। পুলিশ মহিলার রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকে মদের বোতল, জলের বোতল সহ বেশ কিছু জিনিস পেয়েছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ।

ঘটনা ৪ গত ১৮ মার্চ দোলের দিন বাঁশদ্রোণীতে ১৩ বছরে এক কিশোরীকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। ওইদিন বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ওই কিশোরী। অভিযোগ পাড়ার দুই যুবক তাকে তুলে নিয়ে একটি বাড়িতে যায়। সেখানে ধর্ষণ করা হয়।

বাড়ি ফিরে প্রথমে কিছুই বলতে পারেনি কিশোরী। পরদিন বাবা-মাকে সব ঘটনা জানায়। এরেই মধ্যে নদীয়ার হাঁসখালি কান্ডে কেস ডায়েরি তলব করেছে কলকাতা হাইকোর্ট।