বর্ষশেষের পার্ক স্ট্রিটে বাঁধ, প্রশাসনের বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ার জনতার

বছরের শেষদিনে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ একা পারবে না কোভিড নিয়ন্ত্রণে মানুষের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন।”

Written by SNS Kolkata | January 1, 2022 3:10 pm

করোনার নতুন ঢেউ ঢুকে পড়েছে দেশ ছাড়িয়ে রাজ্যে। তবুও বছরের শেষ দিনে পার্ক স্ট্রিটে জনসুনামি আটকানো যায়নি। নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার জন্য তুমুল উন্মাদনায় মেতেছে মানুষ।

তবে সেই বাঁধভাঙা আনন্দে রাশ টানতে বর্ষবরণের সন্ধে থেকেই পার্ক স্ট্রিটকে নন ওয়াকিং স্ট্রিট হিসেবে ঘোষণা করল পুলিশ। পুজোর কলকাতার মতোই এদিন পার্ক স্ট্রিটের রাস্তাকে ফাঁকা রাখা হল শুধুই গাড়ি চলার জন্য।

গার্ড রেল দিলে পার্ক স্ট্রিটের ফুটপাথকে এমন ভাবে ঘিরে দেওয়া হল, যাতে পায়ে হেঁটে অবাধে ঘোরাঘুরির কোনও সুযোগই না থাকে। সেইসঙ্গে ফুটপাথেও মানুষের অবাধ বিচরণে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে।

তবে পথচারীদের ভিড়ে লাগাম পরালেও যান চলাচলে কোনও বাধা ছিল না। তবে পার্ক স্ট্রিটে ভিড় এবং নিরাপত্তার জন্য এতসব বজ্র আঁটুনির মধ্যে মানুষ ফাক গলে বেরনোর চেষ্টা করেছে ঘনঘন মাইকিং-এর মাধ্যমে মনে করানোর চেষ্টা করা হয়েছে জটলা করা বারণ।

মাস্ক পরতে, পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখতে বলা হয়েছে। ১১ টা টাওয়ার নজরদারি চালানো হয়েছে পার্কস্ট্রিটে। কুইক রেসপন্স টিমকেও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নিরাপত্তার দেখভালের জন্য। প্রতিবারের মতো এবারও পার্ক স্ট্রিটের হোটেল রেস্তোরাগুলিতে ছিল যথারীতি উপচে পড়া ভিড়।

কেউ আবার আগে থেকেই হোলনাইট হোটেলের টেবিল বুকিং করে রেখেছেন। যদিও বর্ষবরণের সন্ধে মানুষের ঢল নেমেছে পার্ক স্ট্রিটে তবে তা বড়দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কম। তবে যাঁরা এসেছেন, তাদের অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না।

এই মাস্কহীন মানুষদের নিয়েই বেশি উদ্বেগ প্রশাসনের ভিক্টোরিয়া, চিড়িয়াখানার সামনে রীতিমতো মাইক নিয়ে করোনাবিধি মানার জন্য প্রচার চালানো হয়েছে।

ওমিক্রন আতঙ্কে এবার রাজ্যে এমনিতেই বিধিনিষেধের পরিসর বেড়েছে। সারা কলকাতার দর্শনীয় স্থানগুলিতে বাড়ানো হয়েছে পুলিশি ব্যবস্থা। নিষেধাজ্ঞা না থাকলেও বর্ষবরণের বহু অনুষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। সেন্ট পলস ক্যাথিড্রালের গেট সর্বসাধারণের প্রবেশের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে সন্ধে থেকেই।

রাত দশটার পরে কিছু আমন্ত্রিত অতিথিকে চার্চের ভেতরে প্রার্থনাসভায় যোগ দেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ওমিক্রন আতঙ্কে কাশীপুর উদ্যানবাটীতে কল্পতরু উৎসবে এবার আর অনুমতি মিলছে না।

শহরে হাতে গোণা যে কয়েকটি বর্ষবরণের অনুষ্ঠান হচ্ছে, সেখানেও তীব্র কড়াকড়ি। তবে এসবের মধ্যেও মানুষের তেমন হুঁশ ফেরেনি। হাজারো বিধি বাঁধনকে ভেঙে ফেলে বেশ কিছু মানুষ মেতে উঠতে চেয়েছে আনন্দে। এই দড়ি টানাটানির মধ্যে দিয়ে একুশ পেরিয়ে বাইশে পা রাখল তিলোত্তমা।

বড়দিনে পার্ক স্ট্রিটে যে ভয়াবহ ভিড়ের ছবি দেখা গিয়েছিল, তা আর দেখা যাবে না বর্ষবরণের রাতে। অন্তত তেমনই দাবি করলেন কলকাতার নতুন নগরপাল বিনীত গোয়েল। শুক্রবার দায়িত্ব নিয়ে বিনীত জানিয়েছেন, শুক্রবার বর্ষবরণের রাতে পার্ক স্ট্রিট নিয়ন্ত্রণে মোতায়েন থাকবে বাড়তি পুলিশ বাহিনী।

আসা বিনীত আরও জানিয়েছেন, প্রয়োজনে মাস্ক না-পরে মাস্ক দিয়ে সাহায্যও করা হবে। কিন্তু তার পরেও মাস্ক না পরলে কড়া ব্যবস্থা নেবে পুলিশ। একইসঙ্গে জনগণকে মাস্ক পরে বাইরে বেরনোর, স্যানিটাইজার ব্যবহার করার এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার আবেদনও জানান তিনি।

বছরের শেষদিনে দায়িত্ব গ্রহণের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, “পুলিশ একা পারবে না কোভিড নিয়ন্ত্রণে মানুষের সহযোগিতা বিশেষ প্রয়োজন।”

বিনীত আরও বলেন, “করোনার জন্য গত দু’বছরে মানুষের চরম ভোগান্তি হয়েছে। মাঝে পরিবেশ একটু শুধরেছিল। কিন্তু ফের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় উদ্বেগও বাড়ছে। পুলিশের একার পক্ষে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। সংক্রমণ রুখতে মানুষের সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।

এই পরিস্থিতিতে মানুষকেই মানুষের পাশে দাড়াতে হবে।” কোভিড পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা ছাড়াও কলকাতা পুলিশ ট্র্যাফিক ও সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণেও বিশেষ নজর দেবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।