এক ধাক্কায় নিজের গ্ল্যামার অনেকটাই বাড়ালেন সিপিএমের সায়রা

জয়ী প্রার্থীই আলোচনার শীর্ষে থাকেন। রাজ্যের দুই উপনির্বাচনে তাই সফল দুই প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা এবং বাবুল সুপ্রিয়ই চর্চায় রয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক।

Written by দেবাশিস দাস Kolkata | April 17, 2022 10:54 am

যে কোনও নির্বাচনে জয়ই আসল কথা। জয়ী প্রার্থীই আলোচনার শীর্ষে থাকেন। রাজ্যের দুই উপনির্বাচনে তাই সফল দুই প্রার্থী শত্রুঘ্ন সিনহা এবং বাবুল সুপ্রিয়ই চর্চায় রয়েছেন। এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু এবার যেন একটু ব্যতিক্রম হালকা হলেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বালিগঞ্জের বিজয়ী প্রার্থী বাবুল যতখানি প্রচারে আছেন, ঠিক ততটাই মুখে মুখে পরাজিত প্রার্থী সায়রা শাহ হালিমের নাম।

ব্যক্তিগত জীবনে রাজ্য বিধানসভার দীর্ঘ সময় স্পিকার থাকা হাসিম আব্দুল হালিমের পুত্রবধূ, চিকিৎসক তথা সিপিএম নেতা ফুয়াদ হালিমের স্ত্রী এবং অভিনেতা নাসিরুদ্দিন শাহের ভাইঝি এই সায়রা শাহ হালিম।

মাস্টারস্ট্রোক দিয়ে এই সায়রাকেই এবার বালিগঞ্জে দলীয় প্রার্থী করে আলিমুদ্দিন।

রাজনীতির অভিজ্ঞতা বলতে এক বছর আগে স্বামী ফুয়াদ হালিম যখন বালিগঞ্জ বিধানসভা ভোটে প্রার্থী হয়েছিলেন, তখন সক্রিয়ভাবে পথে নেমে ফুয়াদের পাশে ছিলেন।

ফলে ভোট বিষয়টি সম্পর্কে কিছুটা জ্ঞান ছিলই। সেই সায়রাকেই ঝুঁকি নিয়ে এবার প্ররপন্থী করে সিপিএম আর এই প্রথম ভোট রাজনীতিতে পা রেখেই বাজিমাত করেছেন সায়রা।

বছরখানেক আগের বিধানসভা নির্বাচনে এই একই কেন্দ্রে সংযুক্ত মোর্চা জোটের সিপিআইএম প্রার্থী ছিলেন সায়রার স্বামী ডাঃ ফুয়াদ হালিম।

প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে লড়ে ফুয়াদ পেয়েছিলেন ৮৪৭৪ ভোট বা ৫.৬১ শতাংশের মতো ভোট।

এক বছরের মাথায় সায়রা নির্বাচনী যুদ্ধ শেষ করলেন ৩০৮১৮ ভোট পেয়ে, শতাংশের হিসেবে যা ৩০%। বাবুল সুপ্রিয় ২০০৩৮ ভোটে জিতলেও তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কের ধস স্পষ্ট হয়েছে।

শাসক দলের ভোট কমেছে প্রায় ২২ শতাংশ। গত বিধানসভা ভোটে ৭০ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিলেন প্রয়াত সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

উপনির্বাচনের ফলাফল বলছে, এবার ওই ৭০ % ভোট নিচে নেমে ঠেকেছে ৪৮ শতাংশের কাছাকাছি। মাত্র ১ বছরেই তৃণমূলের ভোট কমে গিয়েছে ২২ শতাংশ। আর এর ফায়দা তুলেছে সিপিএম।

সাধারণ মানুষ এই কৃতিত্ব দিচ্ছেন সায়রা শাহ হালিমকেই। এই সায়রা-র হাত ধরেই খাস কলকাতায় অনেকটাই অক্সিজেন পেল সিপিএম।

তৃণমূলের তরফে প্রকাশ্যে স্বীকার করা না হলেও ঘনিষ্ঠ মহলে শাসক দলের অনেকেই বলছে, ‘নো ভোট টু বাবুল’ প্রচারটি ভোটে অনেকটাই প্রভাব ফেলেছে।

বাবুল আসানসোলে সাংসদ থাকাকালীন ঘটে যাওয়া কিছু হিংসার ঘটনাকে সামনে এনে ওই সময়ে তাঁর ভূমিকা নিয়ে এই ভোটে প্রচার হয়েছিল।

এই প্রচারেই সংখ্যালঘু ভোট তৃণমূলের থেকে সরে গিয়েছে। সেই ভোট এসেছে সায়রার বাক্সে।

তৃণমূল অবশ্য দাবি করেছে, রাজনীতির আঙ্গিনায় সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাবুলের তুলনা করা বোকামি। বালিগঞ্জে সুব্রতদার নিজস্ব ভোটব্যাঙ্ক ছিল। দলের উর্ধ্বে উঠে মানুষ সমর্থন করতেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে।

বাবুলের এই কম ভোট পাওয়ার অর্থ এই নয় যে বাংলায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সমর্থন হ্রাস পেয়েছে।

বিচ্ছিন্ন কোনও কারণে হয়তো বাবুল তুলনায় কম ভোট পেয়েছে। কিন্তু এতে প্রমান হয়না নেত্রীর প্রতি সমর্থন কমেছে।

এতখানি সরলীকরণ করা ঠিক নয়। তাহলে আসানসোলে রেকর্ড ভোটে শত্রুঘ্ন সিনহা জয়ী হতেন না ওদিকে ফলপ্রকাশের পর সায়রা দাবি করেছেন, ‘নীতিগতভাবে আমাদের জয় হয়েছে।

এদিকে বালিগঞ্জে বিজেপির অবস্থা একেবারেই শোচনীয়। গত বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি প্রার্থী পেয়েছিলেন প্রায় ২১ শতাংশ ভোট।

এবার ধুয়েমুছে সাফ। মাত্র ১০ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়ে জামানত খুইয়েছেন বিজেপি প্রার্থী।

তবে হেরে গেলেও নিজের গ্ল্যামার এক ধাক্কায় অনেকটাই বাড়িয়ে নিয়েছেন সিপিএমের সায়রা শাহ হালিম।