প্রাথমিকে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের কারা ও ক্ষুদ্র-কুটির শিল্পমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ গ্রেপ্তার হবেন, নাকি আপাতত শর্তসাপেক্ষ জামিনে মুক্ত থাকবেন, সেই প্রশ্নের উত্তর মিলবে মঙ্গলবার। শনিবার কলকাতার বিচার ভবনে দীর্ঘ শুনানি শেষে এই সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত রেখেছেন বিচারক।
চন্দ্রনাথ আদালতের বাইরে জানান, তিনি বিচারব্যবস্থার উপর পূর্ণ আস্থা রাখেন। তাঁর কথায়, ‘আদালতের উপর আস্থা ছিল, আছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।’
Advertisement
এদিকে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডির অভিযোগ, চন্দ্রনাথ তদন্তে বারবার অসহযোগিতা করছেন। তাঁদের বক্তব্য, ২০২৪ সালে মন্ত্রীর বাড়ি থেকে ৪১ লক্ষ টাকা ও একটি মোবাইল উদ্ধার হয়। মন্ত্রী দাবি করেছিলেন, ওই অর্থ জমি বিক্রি ও কৃষিকাজ থেকে পাওয়া। কিন্তু ইডির বক্তব্য, এই ব্যাখ্যা সন্তোষজনক নয়। তাদের অভিযোগ, চন্দ্রনাথ ইচ্ছে করেই প্রয়োজনীয় নথি দিতে দেরি করেছেন। এমনকি চার্জশিট জমা পড়ার কয়েক ঘণ্টা পরেই কাগজপত্র পাঠিয়েছেন।
Advertisement
এদিন ইডির আইনজীবী আদালতে বলেন, ‘চন্দ্রনাথ অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। শুরুতেই যদি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হত, তাঁর সহযোগীরা সতর্ক হয়ে যেত। তাই পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ হাতে পাওয়ার পরই আমরা হেফাজতের আবেদন করেছি।’
চন্দ্রনাথের আইনজীবীর পাল্টা যুক্তি, তদন্তের জন্য হেফাজতের প্রয়োজন নেই। তাঁর বক্তব্য, চার্জশিট দাখিল হয়ে গিয়েছে, এখন ফের হেফাজতের দাবি তোলার কোনও যুক্তি নেই। আদালতে আইনজীবী প্রশ্ন তোলেন, ‘যে সমস্ত নথি ইডি চেয়েছিল, তার অধিকাংশই জমা দেওয়া হয়েছে। কিছু নথি সহজলভ্য নয়, তাই সময় লেগেছে।’
বিচারক অবশ্য মন্ত্রীর আইনজীবীর যুক্তি খারিজ করে নানা প্রশ্ন তোলেন। জমি কেনাবেচার দলিল যদি থেকে থাকে, তবে তা কেন তৎক্ষণাৎ হাজির করা গেল না, সেই প্রশ্ন করেন তিনি। বিচারক আরও উল্লেখ করেন, মন্ত্রীর স্ত্রী তাঁর বয়ানে জানিয়েছেন, সমস্ত বিষয়েই অবগত ছিলেন চন্দ্রনাথ। ফলে দায় এড়ানোর অবকাশ নেই।
উল্লেখ্য, গত ৬ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করেছিলেন চন্দ্রনাথ। ইডি তখন তাঁকে হেফাজতে চেয়ে আবেদন করে। তবে আদালত শর্তসাপেক্ষে জামিন মঞ্জুর করে। শর্ত অনুযায়ী, মন্ত্রী আপাতত কলকাতা ও নিজের বিধানসভা কেন্দ্র ছাড়া অন্যত্র যেতে পারবেন না এবং তদন্তে সহযোগিতা করতে হবে।
এখন আদালতের রায়কে কেন্দ্র করেই উত্তেজনা। ইডি চাইছে, তাঁকে হেফাজতে নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ করতে। অন্যদিকে মন্ত্রীর পক্ষের বক্তব্য, সব নথি ইতিমধ্যেই জমা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্যের রাজনৈতিক মহলও বিষয়টি নিয়ে সরগরম হয়ে উঠেছে। একাংশ মনে করছে, এই মামলার রায় রাজ্য রাজনীতিতে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। মঙ্গলবারের রায় ঘোষণার দিকে তাই তাকিয়ে প্রশাসন থেকে সাধারণ মানুষ— সকলেই।
Advertisement



