লকডাউনে একগুচ্ছ নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের

বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে একগুচ্ছ সরকারি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Written by SNS Kolkata | March 26, 2020 7:35 pm

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (File Photo: IANS)

রাজ্যে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ৩১ মার্চ পর্যন্ত। এই পরিস্থিতিতে জনজীবন যাতে থমকে না যায় সেজন্য বুধবার নবান্নে সাংবাদিক সম্মেলন করে একগুচ্ছ সরকারি পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে লকডাউনের সময় অত্যাবশকীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা যাতে অব্যাহত থাকে সেজন্য প্রশাসনকে বেশ কিছু নির্দেশ দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।

বললেন সব্জিওয়ালা, হোম ডেলিভারিম্যানদের আটকানো যাবে না, কৃষকদের মাঠে চাষ করতে দিতে হবে। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আওতা থেকে বাদ যাবেন না প্রশাসনিক আধিকারিকরাও। অন্যদিকে জনতাকে সচেতন করতে মমতার আহ্বান, করোনা আতঙ্কে মানুষকে সামাজিকভাবে বয়কট করবেন না, শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন।

গত ক’দিনে করোনা আতঙ্কে বেশ কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছে। কোথাও জ্বর হলে তাদের পাড়ায় থাকতে না দেওয়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। করোনা পরিষেবা যাঁরা দিচ্ছেন, সেই স্বাস্থ্যকর্মী কিংবা নার্সরা যেসব ভাড়া বাড়িতে থাকছেন, কোথাও তাদের বাড়ি ছাড়তে বলা হচ্ছে। এই ধরনের ঘটনার প্রতিকারে মমতার আহ্বান, সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখুন কিন্তু কাউকে সামাজিকভাবে বয়কট করবেন না।

এছাড়া অত্যাবশকীয় পণ্যের সরবরাহ যাতে কোনও বাধা না পায়, হোম ডেলিভারিম্যানদের যাতে আটকানো না হয়, সেজন্য থানার ওসিদের দায়িত্ব নিতে বলেন মুখ্যমন্ত্রী। অনেক সময় নিয়ম না জানায় সব্জিওয়ালা, মুটেদের আটকানো হচ্ছে। তা যাতে না ঘটে সেজন্য নজর দিতে বলেন জেলাশাসক, বিডিও, এসডিও, এসপি সকলকেই। বলা হয়েছে হোম ডেলিভারিম্যানদের জন্য পাস দেওয়া হবে। একই সংস্থায় একাধিক হোম ডেলিভারিম্যান থাকলে তারা সেলফ অ্যাটেস্টেড করা পাসের জেরক্স কপি ব্যবহার করতে পারেন।

হোম ডেলিভারিম্যানরা বিভিন্ন জেলা থেকে আসতে পারে। সেক্ষেত্রে তারা যাতে বাধা না পায়, সেজন্য জেলা পুলিশের মধ্যে সমন্বয়ী ব্যবস্থা থাকবে। জরুরি পরিষেবা যাতে বাধাপ্রাপ্ত না হয়, সেজন্য নজর রাখতে বলা হয়েছে পুলিশকে। সব্জিওয়ালা, মুটেদের কোনওভাবেই আটকানো যাবে না। কৃষকদের মাঠে কাজ করতে দিতে হবে। সংবাদপত্র বিলিতেও কোনও বিধিনিষেধ নেই। সংবাদপত্রের হকারদের জন্যও পাস বিতরণের কথা জানান মমতা ।

করোনা আতঙ্কে যাতে মানুষের ওপর অকারণে চাপ সৃষ্টি করা না হয়, সেজন্যও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। কারো জ্বর হলে তাকে সামাজিকভাবে বয়কট করবেন না। নিকটবর্তী থানায় কিংবা পুরসভায় খবর দিন। ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা যথেষ্ট সতর্কতা নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন করোনা মোকাবিলায়। তাদের অস্পৃশ্য বলে ভাববেন না। সকলের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা- দানবিক নয়, মানকি হন।

করোনা পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করতে বুধবার একাধিক মানবিক কর্মসুচিও ঘোষণা করলেন মমতা। ফুটপাথবাসী বা ভবঘুরেদের নাইট শেল্টারে আশ্রয় নিতে বলেন। এমনকী তাদের খাওয়া দাওয়ার বন্দোবস্তও থানা কিংবা পুরসভা থেকে করা হবে বলে ঘোষণা করেন। রাজ্যের যে সমস্ত কমিউনিটি কিচেন রয়েছে, সেগুলিকেও এজন্য কাজে লাগানো হবে।

মমতা বলেন, কেউ ক্ষুধার্ত জানলে থানায় খবর দিন। এই প্রসঙ্গে শিখ গুরুদুয়ারার মতো সংগঠনের বিনামুল্যে খাদ্য বিতরণ কর্মসুচিকে আদর্শ বলে মনে করেন মমতা । জনগণের পেটে যাতে টান না পড়ে সেজন্য সরকারের পক্ষ থেকেও একমাসের রেশনের চাল, গম ইত্যাদি দেওয়া হবে বলে জানিয়ে দেন। তাহলে তাদের বারবার রেশন তুলতে আসতে হবে না।

একইভাবে মাসের মিড ডে মিলের উপকরণও একসঙ্গে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। বিধবা পেনশন, কিষাণ পেনশন, জয় জোহার ইত্যাদি সামাজিক পেনশনের টাকাও একসঙ্গে দু’মাসের (মার্চ-এপ্রিল কিংবা এপ্রিল-মে) দেওয়া হবে।

ডাক্তার, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, হাসপাতালের নিরাপত্তারক্ষীদের থাকার জন্য হোটেল, গেস্ট হাউসের ব্যবস্থা আগেই করা হয়েছে। একই পরিষেবা দিতে জেলাতেও বিয়েবাড়ি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী শহর এবং জেলার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন রেখেছেন, তাদের প্রতিদিনের খাওয়া দাওয়ার দায়িত্ব নিতে। আবাসনগুলিতে কোনও বয়স্ক মানুষ থাকলে তাদের। পাশে দাঁড়াতে আবেদন রাখেন।

করোনা পরিস্থিতির মোকাবিলায় খাদ্য দফতর, স্বাস্থ্য দফতর, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, অর্থ দফতর, বিদ্যুৎ দফতর একজোট হয়ে কাজ করছে। পঞ্চায়েত ও জনস্বাস্থ্য দফতরকে পরিশোধিত জলের জন্য প্রাণধারা বোতল সরবরাহের জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবহন দফতরকে মানুষকে যথাস্থানে পৌছে দিতে বলা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, গোটা পরিস্থিতির দিকে নজর রাখতে দুটি টাস্ক ফোর্স গড়া হয়েছে। একটি মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে, অন্যটি পুলিশের টাস্ক ফোর্স। এছাড়া যেকোনও ধরনের তথ্য জানাতে রাজ্যে একটা হেল্পলাইন চালু করা হয়েছে। যার টোল ফ্রি নম্বর ১০৭০। এছাড়া একটি ল্যান্ডলাইন হেল্পলাইন ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ চালু রাখা হবে।

বুধবারই রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে এজন্য কেন্দ্রীয় টেলিকম সংস্থার কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। তিন শিফটে চব্বিশ ঘন্টাই এই হেল্পলাইন চালু রাখার নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
করোনা মোকাবিলায় সরকারি সাহায্যের সঙ্গে জরুরি জনগণের সচেতনতাও। এদিন মুখ্যমন্ত্রী ব্ল্যাকবোর্ডে এঁকে দেখিয়ে দেন দোকান বাজারে গেলে কীভাবে পারস্পারিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।