লকডাউনে বাংলার রেড জোনকে তিন ভাগ করে পরিকল্পনামাফিক ছাড় দেওয়ার ঘােষণা মুখ্যমন্ত্রীর

লকডাউনের মধ্যে রেড জোন নিয়ে নয়া পরিকল্পনা করে ওই এলাকার মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে তাও বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিলেন মমতা।

Written by SNS Kolkata | May 13, 2020 2:00 pm

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Photo: IANS)

এখনই করােনা যাবে বলে মনে হয় না। এই মারণ ভাইরাস নিয়েই বাঁচতে হবে সকলকে। মঙ্গলবার নবান্নে সাংবাদিক বৈঠক করে একথাই স্পষ্ট করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই করােনা মােকাবিলায় তাঁর ঘােষণা, করােনার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যেতে হবে। লকডাউন চলবে কড়াভাবে। কিন্তু লকডাউনের মধ্যে কাজও চলবে। আগামী তিন মাসের মধ্যে দীর্ঘ, মাঝারি এবং স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা করে ধাপে ধাপে সব স্বাভাবিক করতে হবে।

লকডাউনের মধ্যে রেড জোন নিয়ে নয়া পরিকল্পনা করে ওই এলাকার মধ্যে কোন কোন ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়া হবে তাও বিস্তারিতভাবে জানিয়ে দিলেন মমতা। সেইসঙ্গে পরিকল্পনা না করে কেন্দ্রীয় সরকার লকডাউন ঘােষণা করায় যে রাজ্যকে বিপাকে পড়তে হয়েছে সেই ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন। বিশেষ করে ভিনরাজ্যে আটক পরিযায়ী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে। কেন্দ্রীয় সরকার যে বিশেষ প্যাকেজ তাে দূরস্থান রাজ্যের প্রাপ্যটুকুও দিচ্ছে না তা নিয়েও অসন্তোষ জানাতে ছাড়েননি মমতা।

দেশজুড়ে তৃতীয় দফায় ১৭ মে পর্যন্ত লকডাউন ঘােষণা করা হলেও মমতা জানিয়েছিলেন ২১ মে পর্যন্ত বাংলায় বিধিনিষেধ বজায় থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিও সােমবার বলেছেন এটা (করােনা) অনেকদিন চলবে। তবে এর মধ্যে যাতে অর্থনীতিকে টেনে তোলা যায় সেজন্য বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধাপে ধাপে ছাড় দিতে হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে কী কী ছাড় দেওয়া হবে তা পর্যালােচনা করে ঠিক করবে পুলিশ।

প্রাথমিক পরিকল্পনায় রেড জোনকে এ, বি, সি তিনভাগে বিভক্ত করার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী। রেড-এ’ থাকবে সম্পূর্ণ লকডাউন। রেড-বি’ জোনে যেসব পরিষেবা চালু করলে কোনও ক্ষতি হবে না, সােস্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে তা চাল করা হবে। রেড-সি’ অর্থাৎ কনটেইনমেন্ট জোনের ব্যারিকেড সংলগ্ন অঞ্চলে ছাড়ের মাত্রা বাড়ানাে হবে। তিন দিনের মধ্যে এই ছাড়ের পরিকল্পনা ঘােষণা করা হবে।

লকডাউনের মধ্যে বেশ কিছু ক্ষেত্রে ছাড়ের কথা ঘােষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। সামাজিক দূরত্ব মেনে টলিপাড়ার কাজ শুরু হচ্ছে যেমন এডিটিং, মিক্সিং, ডাবিং-এর কাজ। তবে শুটিং চালু করতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিড়ি এবং চা শিল্পে কর্মরত শ্রমিকের সংখ্যা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫০ শতাংশ করা হল।

জেলার মধ্যে গ্রিন জোনে চলবে বাস এবং ট্যাক্সি। তবে সােস্যাল ডিসট্যান্সিং মানতে হবে। বাসে কুড়িজনের বেশি যাত্রী নেওয়া যাবে না। ছােট গাড়িতে তিন জনের বেশি যাত্রী নয়। আজ থেকেই কলকাতার পনেরােটি রুটে সরকারি বাস চালু করছে পরিবহণ দফতর। কলকাতা, হাওড়া, ব্যারাকপুর এবং সল্টলেকে অ্যাপ ক্যাব পরিষেবা চালু করা হয়েছে।

গ্রিন জোনের মধ্যে বেসরকারি বাস পরিষেবাও শর্তসাপেক্ষে চালু করার জন্য ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে। এজন্য আজ বুধবার পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী বৈঠক ডেকেছেন। আগামীদিনে কনটেইনমেন্ট জোনের মধ্যেও বাস চলাচল সম্ভব কিনা তা খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। গয়নার দোকান, বৈদ্যুতিন সামগ্রীর দোকান, রঙের দোকান, মােবাইল কিংবা ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার দোকান খােলা থাকবে। রেস্তরাঁ ছাড়া চপের দোকান ও সবরকম খাবারের দোকান খােলা থাকবে। দুপুর বারােটা থেকে সন্ধে ছ’টা পর্যন্ত সব দোকান খােলা থাকবে।

তাঁতের হাট বিশ্ব বাংলা হাট খােলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে। গ্রামে বাংলার বাড়ি, সড়ক নির্মাণ, জনস্বাস্থ্য ইত্যাদি ক্ষেত্রে যেসব নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত আছে, তা চালু করা হবে। প্রয়ােজনে একশ দিনের কাজে শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ানাে হবে। বাইরে থেকে যারা কাজ খুইয়ে এসেছেন সুযােগ থাকলে তাদেরও একশ দিনের কাজে নেওয়া হবে।

ক্ষুদ্র, ছােট এবং মাঝারি শিল্পের কাজের ক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক এগােতে হবে। যারা ভিনরাজ্য থেকে কাজ খুইয়ে এসেছেন তারা কোন কোন শিল্পের সঙ্গে যুক্ত তার একটি তালিকা প্রস্তুত করার জন্য সচিব সেলিমকে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই রাজ্যের মধ্যেই তাদের কর্মসংস্থানের জন্য আগামীদিনে পরিকল্পনা না হবে। স্বনির্ভর গােষ্ঠীর কর্মীরা ইতিমধ্যেই গ্লাভস, মাস্ক, স্যানিটাইজার তৈরি করছে। তাদের সেই কাজের পরিধি বাড়ানাের কথা জানান মুখ্যমন্ত্রী। ১১ লক্ষ কিষাণ ক্রেডিট কার্ডও দেওয়া হচ্ছে যাতে কৃষকরা শস্যবিমার সুযােগ পায়।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন, দু’মাস ধরে আয় নেই রাজ্যের। এর মধ্যে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকরা বেতন যতদিন পারবে দিয়ে যাবে রাজ্য। জয় বাংলা প্রকল্পের জুন-জুলাই মাসের সামাজিক পেনশনও দিয়ে দেওয়া হবে। যাদের ডিজিটাল রেশন কার্ড নেই, তাদেরও রেশন দেওয়া হবে। গ্রামাঞ্চলে এক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে জেলাশাসকদের তা সমাধান করতে নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। সােশ্যাল ডিসট্যান্সিং ঠিকমতাে বজায় রাখা হচ্ছে কিনা সেজন্য স্থানীয় ক্লাব এবং এনজিওগুলিকে দায়িত্ব নেওয়ার জন্য আবেদন রাখেন মুখ্যমন্ত্রী।

করােনা প্রতিহত করতে লকডাউন মেনে চলার সঙ্গে সঙ্গে অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার মধ্যে একটি ভারসাম্য রেখে অন্তত আগামী তিন মাস চলার জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য সরকার। তবে লকডাউন ঘােষণা করার ক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার অভাব ছিল বলে অভিযােগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য যে বিশেষ ট্রেনের বন্দোবস্ত এখন করা হচ্ছে, সেটা আগে করা হলে শ্রমিকরা প্রায় দু’মাস ভিন রাজ্যে থেকে এত বিপর্যস্ত হয়ে পড়ত না। আগামী দিনে পরিযায়ী শ্রমিকদের এই রাজ্যে থাকার জন্য পরামর্শ দেন মমতা। বলেন, যারা দুর্দিনে তাড়িয়ে দেয়, তাদের কাছে যাবেন না।

আন্তর্জাতিক বিমান পরিষেবা চালু করার ক্ষেত্রেও কেন্দ্রীয় সরকার সময়মতাে সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি। এছাড়া রাজ্য যে ৫২ হাজার কোটি টাকা কেন্দ্রের কাছ থেকে পায়, সেই টাকাও এখনও দেয়নি। কোভিড নিয়ে লড়াইয়ের মধ্যেও বিজেপি কুৎসা, ষড়যন্ত্র, অপপ্রচার চালাচ্ছে তারও সমালােচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী।