লকডাউনে প্রায় শাটডাউন শহর ও জেলা

রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের কড়া লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় শহরটা প্রায় শাটডাউনের চেহারা নিল।

Written by SNS Kolkata | July 24, 2020 6:36 pm

ড্রোন উড়িয়ে চলছে পুলিশের নজরদারি। (Photo: Kuntal Chakrabarty/IANS)

রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ফের কড়া লকডাউনের নির্দেশ দিয়েছিল নবান্ন। বৃহস্পতিবার পুলিশ প্রশাসনের তৎপরতায় শহরটা প্রায় শাটডাউনের চেহারা নিল। দেশে প্রথম দফার লকডাউনের ছবিটাই যেন ধরা পড়ল এদিন। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই শুনশান ছিল শহরের রাস্তাঘাট। জায়গায় জায়গায় পুলিশের ব্যারিকেড। বাজারহাট, দোকানপাট সম্পূর্ণ বন্ধ।

রাস্তায় কেউ বাইক বা গাড়ি নিয়ে বের হলে তাদেরকে বেরনোর কারণ দেখিয়ে হাজার কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। দেখাতে হয়েছে পরিচয়পত্রও। প্রয়োজন ছাড়া কেউ বেরোলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় নাকা চেকিং হয়েছে। শহরের রাস্তায় এদিন নাকা চেকিং হয়েছে। বড় রাস্তাগুলিতে গার্ড রেল দিয়ে যাতায়াতের রাস্তা ছোট করে দেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ কলকাতার রাসবিহারী অ্যাভিনিউ, গড়িয়াহাট, টালিগঞ্জ, তারাতলা, চেতলা, বেহালা, উত্তর কলকাতার শ্যামবাজার, রাজাবাজার, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙা- সর্বত্রই চিত্রটা প্রায় একই ধরনের। জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তি ছাড়া যারা বাইরে বেরিয়েছেন তাদের সবাইকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে নানান টালবাহানার মধ্যেও এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে উড়ান বন্ধ হয়নি। রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে যাঁদের যাতায়াতে ছাড় দেওয়া হয়েছিল সেখানে উড়ান এবং ট্রেন পরিষেবা ছিল না। কিন্তু তা সত্ত্বেও বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ উড়ান বন্ধে রাজ্যের আবেদন মানেনি। তবে এদিন অনেক কম, সারাদিনে মোট চল্লিশ-বিয়াল্লিশটির মতো বিমান ওঠানামা করেছে। কিন্তু ওলা, উবের বন্ধ থাকায়, ওইসব বিমানে কলকাতায় আসা যাত্রীদের ভলভো বাস কিংবা সরকারি পরিবহণে তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।

রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আগেই ঘোষণা করা হয়েছিল যে, সপ্তাহে দু’দিন করে অর্থাৎ বৃহস্পতি এবং শনিবার রাজ্যজুড়ে হবে সম্পূর্ণ লকডাউন। ওষুধের দোকান, জরুরি পরিষেবা এবং সামান্য কিছু যানবাহন চলাচল ব্যতীত অন্য সমস্ত কিছুই বন্ধ থাকবে। সেই মতো এদিন সাপ্তাহিক লকডাউনের প্রথম দিনে উত্তর ২৪ পরগনা জেলাজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় চিত্রটা অন্যান্য দিনের চেয়ে একেবারেই আলাদা। দোকানপাট বন্ধ। রাস্তাঘাট শুনশান। গুটিকয়েক লোককে রাস্তায় দেখা গেলেও পুলিশি টহল এবং ধরপাকড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

প্রসঙ্গত, এদিন সকাল থেকেই তৎপর ছিল বিধাননগর কমিশনারেটের পুলিশকর্মীরা। সল্টলেক, নিউটাউন, রাজারহাট, লেকটাউন সহ বিধাননগরের বিভিন্ন জায়গায় চলে পুলিশির তরফ থেকে নাকা চেকিং। এ বিষয়ে বিধাননগর পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার জানিয়েছে, প্রতিটি গাড়ি চেক করা হচ্ছে।

যারা অতি প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছে, নির্দিষ্ট কারণ এবং উপযুক্ত নথি দেখে তবেই তাদেরকে ছাড়া হচ্ছে। যারা কোনও কারণ বা নথি দেখাতে না পারছে, তাদেরকে আটক করা হচ্ছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর পুলিশ।

উল্লেখ্য, এদিন সকাল থেকে পুলিশ কমিশনার মুকেশ কুমার নিজে সরেজমিনে নিরাপত্তা বিষয়ক যাবতীয় বিষয় খতিয়ে দেখতে নিউটাউনে নিজের আবাসন থেকে বেরিয়ে সারা নিউটাউন, এয়ারপোর্ট, লেকটাউন হয়ে বিধাননগরের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেন।

অন্যদিকে বারাসত শহরেও সকাল থেকেই দেখা গেল পুলিশি তৎপরতা। সামান্য দু-একটি গাড়ি রাস্তায় দেখা মিললেও রাস্তাঘাট কার্যত ফাঁকা। ওষুধের দোকান ব্যতীত বন্ধ রয়েছে দোকানপাট সহ সব কিছুই। এখানেও বিভিন্ন জায়গায় দেখা যায় পুলিশের নাকা চেকিং। রাস্তায় বেরোনোর সঠিক কারণ না দেখাতে পারলে, হয় তাদের ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে, নয়তো আটক করা হচ্ছে।

পুলিশের এই তৎপরতা খতিয়ে দেখতে রাস্তায় নেমেছেন খোদ বারাসতের জেলা পুলিশ সুপার অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন তিনি জানান, কঠোরভাবে লকডাউন পালন করতে প্রস্তুত প্রশাসন। আইন ভাঙলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে শুধু বারাসতের নয়, মধ্যমগ্রামের বিভিন্ন অঞ্চলেও সমান তালে চলে পুলিশি ধরপাকড়।

এমনকি সেখানে ড্রোন উড়িয়েও চলে পুলিশের নজরদারি। বারাকপুরেও চলে সমানভাবে নজরদারি। করোনা রুখতে কড়া হতে হল পুলিশকে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বারুইপুর পুলিশ জেলার ১৫টি থানার পুলিশকর্মীরা পথে নামলেন। মাস্ক ছাড়া আবার বিনা প্রয়োজনে বাইরে বেরোনো ৯৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

এ খবর জানালেন বারুইপুর পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার। জানা গেল, নরেন্দ্রপুর থানার ৮, সোনারপুর ৫, ভাঙড় ১০, কাশীপুর ৬, বারুইপুর ১০, জয়নগর ২৫, বকুলতলা ৪, ক্যানিং ৫, জীবনতলা ৩, বাসন্তী ৪, গোসাবা ৫, ঝড়খালি উপকূল থানায় ৯ জন সহ মোট ৯৪ জন গ্রেফতার।

কুলতলি মৈপীঠ উপকূল থানা ও সুন্দরবন উপকূল থানা এলাকাতে কোনও গ্রেফতারের খবর নেই। জানা গেল, এবার আর মাস্ক না পরলে কোনও অনুরোধ নয়, সোজা শ্রীঘরে। বেশির ভাগ মানুষ নিয়ম মানলেও কিছু মানুষের উদ্ধত আচরণে করোনা সংক্রমণ ছড়াচ্ছে শন্ত্র ও গ্রামে। পুলিশকে কঠোর হতে দেখে খুশি গ্রামের মানুষ। পুলিশই পারবে সহবত শেখাতে।