একদিকে করোনা, অন্যদিকে আম্ফানের দাপট, তার মধ্যেই পুলিশি বিক্ষোভ বিড়ম্বনা বাড়িয়ে দিয়েছে নবান্নের। মঙ্গলবার রাতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেই তুমুল বিক্ষোভের সৃষ্টি হয় কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফের একাংশের মধ্যে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বুধবার সকালে নবান্নে যাওয়ার পথে বৃষ্টির মধ্যেও পুলিশ ট্রেনিং স্কুলে যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মঙ্গলবার রাতে পিটিএসের বাইরের রাস্তায় ক্যাট ফোর্স ও র্যাফের একাংশ কর্মী বিক্ষোভ দেখান। ডিসি কমব্যাট ফোর্সকে ঘিরে বিক্ষোভ চলে। রাতেই কলকাতা পুলিশ কমিশনার অনুজ শর্মা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘটনার কথা জানান। বুধবার সকালেই মুখ্যমন্ত্রী পিটিএসে পৌছন।
পুলিশকর্মীদের অভিযোগ, করোনা যুদ্ধে তারা সামনের সারিতে কাজ করলেও তাদের প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নেই। নেই মাস্ক, স্যানিটাইজার। এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ডিসি কমব্যাট ফোর্সের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন পুলিশকর্মীদের একাংশ। মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই ডিসি কম্ব্যাট ফোর্সকে সরানোর দাবি তোলা হয়। সবাই একসঙ্গে সরব হন পিটিএসের বিভিন্ন অব্যবস্থা নিয়ে।
মুখ্যমন্ত্রী তাদের বলেন, আপনারা ডিসিপ্লিনড ফোর্স। একজন বলুন। এরপর মুখ্যমন্ত্রী তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, ঝড়ঝঞ্ছা মিটলে করোনা পরিস্থিতি একটু স্থিতিশীল হলে তিনি নিজে পিটিএসে এসে আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলবেন।
বিক্ষোভকারী পুলিশকর্মীদের আরও অভিযোগ ছিল, যে সমস্ত কর্মীকে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে, তাদের সঙ্গে অন্য পুলিশকর্মীকেও রাখা হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগও শোনেন মন দিয়ে। এদিন সকাল থেকেই ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছিল। সেই বৃষ্টিতে ভিজেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে নালিশ করেন তারা। ক্যান্টিনের খাবার নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন কমব্যাট ফোর্স ও র্যাফের কর্মীরা।
পুলিশ একটি শৃঙ্খলাবদ্ধ বাহিনী। সেই বাহিনীর থেকে এমন বিক্ষোভ নিয়ে প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। সাম্প্রতিক সময়ে পুলিশের মধ্যে বিক্ষোভ খুব একটা ঘটেনি। পুলিশের ইউনিয়ন করার অধিকার খর্ব করা হয়েছে। বর্তমানে এই মামলা কলকাতা হাইকোর্টে বিচারাধীন। স্বাভাবিকভাবে যেসব পুলিশ আধিকারিকরা ফোর্সের দায়িত্বে থাকেন তাদের উপর নির্ভর করে পুলিশের ভালমন্দ।
পুলিশকর্মীদের একাংশের বক্তব্য, নীচুতলার পুলিশকর্মীদের মনোবল ক্রমশ ভাঙছে। কারণ তাদের হয়ে বলার কেউ নেই। কর্তার ইচ্ছায় সব হচ্ছে মুখ্যমন্ত্রীকে জানানোরও কেউ নেই। দায়িত্বে থাকা আধিকারিকেরাও কোপে পড়ার ভয়ে বা পাছে কিছু সমস্যা হয় সে কারণে নীচুতলার পুলিশকর্মীদের দাবিদাওয়া পূরণে খুব একটা সরব হন না।
আগের থেকে ডিউটির চাপ অনেক বেড়েছে, ফলে সে কারণে পরিবার-পরিজন থেকেও দূরে থাকতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে মানসিকভাবে পুলিশকর্মীদের চাঙা করার মতো কেউ নেই। অন্যদিকে বিক্ষোভের ঘটনায় এক শীর্ষ পুলিশ আধিকারিক আক্রান্ত হয়েছেন এমনটাও জানা গিয়েছে। যদিও এই নিয়ে পুলিশের শীর্ষ আধিকারিকরা মুখ খুলতে নারাজ।