টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সোমবার শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহারের একাধিক ত্রাণশিবিরে ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এই সফরের মধ্যেই কেন্দ্রকে একাধিক বিষয়ে কঠোর ভাষায় আক্রমণ করেন মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য, ‘আমি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখে অনুরোধ করেছি, যেন ইন্দো-ভুটান নদী কমিশন গঠন করা হয়। না হলে উত্তরবঙ্গ বারবার এমন দুর্ভোগের মুখে পড়বে। কিন্তু এখনও কোনও উত্তর পাইনি। দক্ষিণবঙ্গে যেমন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, পাঞ্চেত, মাইথন আছে, তেমনই উত্তরবঙ্গে ভুটানের ৫৬টি নদী আমাদের দিকে নামে। তারা ইতিমধ্যেই ৪০টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছে। তার জলের চাপেই এই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘আগে বাংলাদেশের সঙ্গে সীমান্তে গঙ্গা নিয়ে একটি যৌথ নদী কমিশন ছিল। এখন সেটা পাটনায় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমাদের সঙ্গে কোনও যোগাযোগ রাখছে না তারা। এইটাই আসল সমস্যা।’
Advertisement
ব্রিজ ধসে মৃত্যুর গুজব প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী জানান, ‘খবর ছড়িয়েছে যে, কেউ নাকি ব্রিজ ভেঙে মারা গিয়েছে, তা সম্পূর্ণ ভুল। এগুলি ছোট ছোট সেতু, যেগুলি বৃষ্টির জলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মিরিকে একটি নতুন সেতু তৈরি হচ্ছে, যেখানে পুরনোটি ভেঙে পড়েছে। আমি কাল মিরিকে গিয়ে নিজে দেখে আসব। আপাতত সেখানে অস্থায়ী সেতু তৈরি হচ্ছে, যা শেষ হতে প্রায় ২০ দিন সময় লাগবে।’
বন্যার আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোচবিহারে আগামীকালও প্লাবনের সম্ভাবনা রয়েছে। আমি গতকালই জেলা প্রশাসকের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলেছি। পরিস্থিতির ওপর আমরা ক্রমাগত নজর রাখছি। একটি মনিটরিং নম্বরও দেওয়া হয়েছে, যাতে মানুষ সরাসরি যোগাযোগ করতে পারেন।’
কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্র কোনও আর্থিক সাহায্য দেয় না। গঙ্গা পরিশোধনের জন্য যে গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান ছিল, তাও বন্ধ করে দিয়েছে।’ তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এটা বঞ্চনা, এটা বৈষম্য।’
তিনি আরও জানান, ‘ডিভিসিতে যে পরিমাণ জল থাকার কথা, তা ছয় লক্ষ মেট্রিক কিউসেক। কিন্তু ১৮ জুন থেকে তা এক হাজার কোটি কিউবিক মিটার ছাড়িয়েছে। এই জল দুই-তিন দিনের মধ্যে এসে প্রচণ্ড জলের চাপে সেতুগুলি ভেঙে দেয়। শুধু বাংলা নয়, দেখুন মুম্বইতেও একই অবস্থা। সারা দেশেই এখন বৃষ্টির তাণ্ডব চলছে।’
এদিন ত্রাণ শিবিরে ঘুরে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দেন মুখ্যমন্ত্রী। রাজ্য প্রশাসনকে দ্রুত ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট দিতে নির্দেশ তিনি দিয়েছেন, যাতে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্গঠন প্রক্রিয়া দ্রুত শুরু করা যায়।
Advertisement



