• facebook
  • twitter
Friday, 13 December, 2024

পূর্ণ জৌলুসেই কার্নিভাল, নিরাপত্তার মোড়কে রেড রোড

একটু চোখ রাখা যাক ইতিহাসের পাতায়। শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। প্রত্যেক বছর আকারে ও জমকে তা পাল্টেছে। বদলেছে ধরনও।

আলো নিভে গিয়েছে। খুলে ফেলা হচ্ছে প্যান্ডেল। ঘরে ফিরছেন ঢাকিরা। পুজো শেষ। আকাশে-বাতাসে এখন বিষাদের সুর। ‘আসছে বছর আবার হবে’ ধ্বনি দিয়ে ইতিমধ্যেই নতুন করে শুরু হয়েছে দিন গোনা। তবে দুর্গাপুজো শেষ হলেও উত্সব শেষ হয়নি। শত মন খারাপ, এক রাশ দুঃখকে দূরে সরিয়ে রেখেই এ বার পালা কার্নিভালের। এ বার পালা মাকে বিদায় জানানোর।
প্রতি বছরের মতো এ বছরও জমকালো কার্নিভাল দেখবে রাজ্যবাসী। তাই আজ কার্নিভাল উপলক্ষে সেজে উঠেছে রেড রোড। এক উৎসব শেষে যেন আরও একটা উৎসবের সূচনা। সুসজ্জিত শোভাযাত্রা, আলোর খেলা, নাচে-গানে-কবিতায় তুলে ধরা হবে বাংলার ঐতিহ্যকে। রেড রোডে ফের ধ্বনিত হবে ‘বলো দুগ্গা মাইকি জয়’।

নবান্ন সূত্রে খবর, এ বছর কার্নিভালে প্রায় একশোটি পুজো অংশগ্রহণ করবে। ২৮ হাজার আমন্ত্রণপত্র ছাপা হয়েছে এই কার্নিভালের জন্য। রেড রোডের বুকে জমিদার বাড়ির আদলে রাজকীয় ঘরানায় তৈরি হয়েছে মূল মঞ্চ। এই মূল মঞ্চে থাকছে র‍্যাম্প। প্রতি বছরের মতো এ বছরও উপস্থিত থাকবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিভিন্ন দেশের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর, বিশেষ অতিথিদের জন্য থাকছে পৃথক বসার ব্যবস্থা। এছাড়াও আমন্ত্রিত থাকছেন একাধিক শিল্পপতি।

নৃত্যশিল্পী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ের বিশেষ অনুষ্ঠান পরিবেশনের মাধ্যমে শুরু হবে এই পুজোর কার্নিভাল। রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, গত বছরের তুলনায় এ বছর কার্নিভালে বেশি সংখ্যক দুর্গাপুজো অংশ নেবে। যে কমিটির পুজোগুলি বিশ্ব বাংলা শারদ সম্মান পেয়েছে, শোভাযাত্রার পরেই সেই পুজো কমিটিগুলির দুর্গা প্রতিমা নিরঞ্জনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে সাংবাদিক বৈঠক করে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন এবং দপ্তরের সচিব শান্তনু বসু জানিয়েছিলেন, কলকাতা ও তার সংলগ্ন এলাকা, জেলা এবং বিদেশের পুজোগুলির মধ্যে থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সেরা পুজোগুলিকে বেছে নেওয়া হবে। সেই মতোই চলে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ। অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছরের কার্নিভালকে আরও আকর্ষণীয় করে তুলতে প্রস্তুত রাজ্য। এই কার্নিভাল শুধু রাজ্য নয়, তা নজর কেড়েছে দেশ থেকে বিদেশের পর্যটকদেরও। তাই কার্নিভালের দু’দিন আগে থেকেই শহরে পা রাখতে শুরু করেন একাধিক বিদেশী পর্যটক। শহরের এই জমজমাট কার্নিভালকে সামনে থেকে চাক্ষুষ করার জন্য তাঁদের উৎসাহ চোখে পড়ার মতো।

এত বড় আয়োজন উপলক্ষে নিরাপত্তাতেও কোনওরকম ফাঁক রাখতে চাইছে না রাজ্য সরকার। তাই প্রত্যেক বছরের মতো এ বছরও কড়া নিরাপত্তার মোড়কে রেড রোড। শুধুমাত্র রেড রোডেই মোতায়েন থাকবে ১৫০০ পুলিশ। তদারকিতে ২ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার। থাকবেন ১৬ জন ডেপুটি কমিশনার এবং ৮ জন জয়েন্ট সিপি বা যুগ্ম কমিশনার পদের আধিকারিক। বাজে কদমতলা ঘাটে থাকছে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী, রিভার ট্রাফিক পুলিশ। এছাড়াও নজরদারি চালাবে কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। মঙ্গলবার দুপুর থেকে রেড রোড, খিদিরপুর রোড, কিংসওয়ে, ক্যুইনসওয়ে, হসপিটাল রোডে যান চলাচল বন্ধ। পাশাপাশি একাধিক ওয়াচ টাওয়ার এবং ড্রোনে নজরদারি চলবে।

এ বছর কার্নিভালে অশান্তির আশঙ্কা করছে পুলিশ। কারণ আজই রানি রাসমণিতে দ্রোহের কার্নিভালের ডাক দিয়েছে  জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টর্স। যদিও তাতে ছাড়পত্র (নো অবজেকশন সার্টিফিকেট) দেয়নি কলকাতা পুলিশ। এই আবহে অশান্তির সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ রানি রাসমণি এবং রেড রোডের মাঝে মাত্র কয়েক মিটারের দূরত্ব। তাই অশান্তি এড়াতে আরও বেশি সজাগ কলকাতা পুলিশ।
এত আনন্দ, এত আয়োজন, এত উত্সাহের মাঝে একটা প্রশ্ন মানুষের মনে রয়েই গিয়েছে। পুজোর দিনগুলিতে বৃষ্টির হাত থেকে বাঁচলেও, কার্নিভালের দিন আবহাওয়া শত্রুতা করবে না তো? আর এই প্রশ্ন উঠতেই খারাপ খবর শুনিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর। কার্নিভালের আনন্দ মাটি করে দিতে পারে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে ভিজতে পারে শহর। বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে দক্ষিণের বেশ কিছু জেলায়। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে ভিজতে পারে কলকাতা, হাওড়া, হুগলি, উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর এবং ঝাড়গ্রাম। তবে যতই বৃষ্টি হোক, আবহাওয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়েই পুজো কার্নিভালের আনন্দে মেতে উঠেছে শহর থেকে রাজ্যবাসী।

এবার একটু চোখ রাখা যাক ইতিহাসের পাতায়। শুরুটা হয়েছিল ২০১৬ সালে। দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পরই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে শুরু হয়েছিল দুর্গাপুজোর কার্নিভাল। প্রত্যেক বছর আকারে ও জমকে তা পাল্টেছে। বদলেছে ধরনও।

তবে প্রতি বছর কার্নিভালের জনপ্রিয়তা যেন বেড়েছে আরও বেশি করে। ২০২০ এবং ২০২১ সালে করোনা অতিমারির কারণে কার্নিভাল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। ২০২২ থেকে ফের নতুন উদ্যমে চালু হয় কার্নিভাল। ২০২২ সালে কলকাতার দুর্গাপুজোকে ইউনেস্কো স্বীকৃতি দেওয়ার পর থেকে এই কার্নিভালও যেন আত্মপ্রকাশ করেছে নতুন রূপে। তাই এ বছরও জমজমাট কার্নিভাল  দেখার আশায় গোটা রাজ্যবাসী। এবারের কার্নিভালও হবে জৌলুসপূর্ণ।