প্রেমে ‘প্রত্যাখ্যাত’ হয়ে বহরমপুরে সুতপা চৌধুরীকে ৪২ বার কুপিয়ে খুনের ঘটনায় অভিযুক্ত সুশান্ত চৌধুরির ফাঁসির সাজা রদ করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। ২০৬৮ সালের মে মাসের আগে অর্থাৎ আগামী ৪০ বছর সাজা মাফ চেয়ে আবেদন জানাতে পারবে না সে। এছাড়া দোষীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন বিচারপতি দেবাংশু বসাকের ডিভিশন বেঞ্চ। এই রায়ে খুশি নয় সুতপার পরিবার। রাজ্য সরকারের কাছে তাঁরা আবেদন জানিয়েছেন, ডিভিশন বেঞ্চের এই রায় চ্যালেঞ্জ করে যেন সুপ্রিম কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়।
গত ২০২২ সালের ২ মে সন্ধে ৬.৩০ নাগাদ বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় সুতপাকে খুন করে সুশান্ত। জানা যায়, সুতপা ও সুশান্তের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে চেয়েছিলেন সুতপা। তা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারেনি সুশান্ত। এরপরই প্রেমিকাকে বিরক্ত করা শুরু করে সে। এর জেরে সুতপার পরিবার তাঁকে বহরমপুরের একটি কলেজে ভর্তি করে দেয়। খবর পেয়ে সুশান্ত বহরমপুরের গোরাবাজার এলাকায় একটি মেস বাড়ি ভাড়া নিয়ে সুতপাকে ফলো করতে থাকে। সুতপাকে খুন করার জন্য সে একটি ছুরি এবং একটি খেলনা পিস্তল কেনে। ২ মে সুতপা যখন একা নিজের মেসে ফিরছিলেন, সেই সময় আচমকা তাঁর উপর হামলা চালায় সুশান্ত। তাঁকে ছুরি দিয়ে এলোপাথারি কোপাতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা যাতে সুতপাকে বাঁচাতে আসতে না পারে তার জন্য খেলনা পিস্তল দিয়ে ভয় দেখায় সুশান্ত। তারপর এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায়। যদিও কয়েক ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেপ্তার করে বহরমপুর থানার পুলিশ।
এই ঘটনায় বহরমপুরের তৃতীয় ফাস্ট ট্র্যাক আদালতের অতিরিক্ত ও জেলা দায়রা বিচারক সন্তোষকুমার পাঠক সুশান্তকে দোষী সাব্যস্ত করেন। ২০২৩ সালের ৩১ আগস্ট তাকে ফাঁসির সাজা শোনান বিচারক। নিম্ন আদালতের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে আবেদন করে সুশান্ত। এই মামলায় হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, অপরাধের সময় সুশান্তের বয়স ছিল মাত্র ২১। সেটি মাথায় রেখে তার মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া আদালত তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানাও করেছে। জরিমানার টাকা না দিলে আরও ৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট।