বাংলায় সরকার গড়বে বিজেপি, হুঙ্কার অমিত শাহর

রবিবার শহিদ মিনার ময়দানের সভায় অমিত বলেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে বিজেপি।

Written by SNS Kolkata | March 2, 2020 2:58 pm

শহিদ মিনার ময়দানের সভায় অমিত শাহ। (Photo: IANS)

সামনেই পুরসভা নির্বাচন। বছর ঘুরলেই বিধানসভা ভোট। এই প্রেক্ষাপটে রাজ্যে বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের সভা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ ছিল না। এদিনের সভা থেকেই যে তিনি আগামী দিনে রাজ্য বিজেপির রণকৌশল তৈরি করবেন সে প্রসঙ্গেও বিভিন্ন পোস্টার, হাের্ডিংয়ের মাধ্যমে আভাস দেওয়া হচ্ছিল রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে। সেইমতে রবিবার সরাসরি রাজ্য সকারকে চ্যালেঞ্জ করে আগামী বিধানসভা নির্বাচনে সরকার গড়ার দাবি করলেন, বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ ।

রবিবার শহিদ মিনার ময়দানের সভায় অমিত বলেন, ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গড়বে বিজেপি। এমনকি মুখ্যমন্ত্রী হবে এই রাজ্যেই কোনও ভূমিপুত্ৰ, জানান তিনি। কে এই ‘ভূমিপুত্র’? তা স্পষ্ট না করলেও ইতিমধ্যেই এই মন্তব্যকে কেন্দ্র করে তৈরি হয়েছে জল্পনা।

রবিবার সভা শুরু হওয়ার কথা ছিল ১২ টা ৩০ মিনিটে। সিএএ লাগু করার জন্য রাজ্য বিজেপির পক্ষ থেকে তাঁকে সংবর্ধনা জানিয়ে এদিনের সভার আয়ােজন করা হয়েছিল। নির্ধারিত সময়ের প্রায় দেড় ঘন্টা পরে শহিদ মিনার ময়দানে মঞ্চে উপস্থিত হন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। এদিকে অমিত শাহের সভায় আশা অনুরূপ জমায়েত হয়নি। তিনি বিমানবন্দরে নামার পর থেকেই শহরের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ শুরু হয়। কিন্তু এই বিক্ষোভের আবহেও দলীয় কর্মীদের জয়ের আশ্বাস দিলেন বিজেপির ‘চাণক্য’। পুর নির্বাচনের ঠিক আগে কর্মীদের মনােবল বাড়াতে এই বক্তব্যই ‘অমিত দাওয়াই’ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

সিএএ, পুরভোট এবং আসন্ন বিধানসভা নির্বাচন, রবিবার শহিদ মিনার ময়দানে আয়ােজিত সভা থেকে একাধিক বিষয়ে বিজেপির অবস্থান স্পষ্ট করে দিলেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহ। শুরু থেকেই তাঁর নিশানায় ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজের বক্তব্যে পুরনির্বাচনের প্রসঙ্গ একবারও মন্তব্য করেননি তিনি বরং তার বক্তব্যের সিংহভাগ জুড়েই ছিল বিধানসভা নির্বাচন। নিজের বক্তব্যে তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন, ২০২১ সালের নির্বাচনে জয়ী হওয়ায় পাখির চোখ রাজ্য বিজেপির।

লােকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়ী হলেও রাজ্যের ৩টি আসনে উপনির্বাচনে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। এদিকে সিএএ এবং এনআরসি নিয়ে দেশজুড়ে বিক্ষোভের আবহে ব্যাকফুটে বিজেপি। স্বাভাবিকভাবেই এই পরিস্থিতিতে রাজ্য বিজেপি কর্মীদের ঝিমিয়ে পড়া মনােবল চাঙা করতে কি দাওয়াই দেন অমিত শাহ, তা নিয়ে জল্পনা তৈরি হয়েছিল।

এদিন অমিত শাহ স্পষ্ট জানান, এই রাজ্যে সিএএ লাগু হবেই। কিন্তু শুরু হিন্দুত্ববাদী বার্তা নয়, বর্তমান পরিস্থিতিতে এই রাজ্যে বিজেপি কর্মীদের মনােবল বাড়াতে তৃণমূল সরকারকে নিজের বক্তব্যের মধ্য দিয়ে লাগাতার আক্রমণ করে গেছে অমিত শাহ, মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অভিজ্ঞ মহলের কথায়, ভূমিপুত্রকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে এই বার্তার মধ্য দিয়ে দলীয় কর্মীদের সক্রিয়ভাবে একটি নির্দিষ্ট দিশাতে লড়াই করার বার্তা দিয়েছেন তিনি।

বাম, তৃণমূল ব্যর্থ, বিজেপিই পারে সােনার বাংলা গড়তে। এদিন বক্তব্য রাখতে উঠে এমনটাই বলেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, বিগত তিন দশক ধরে বাংলায় সরকার চালিয়েছে বাম সরকার। সেই সময় রাজ্যের ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লক্ষ ৯২ হাজার কোটি টাকা। তৃণমূল সরকারের ১০ বছর শাসকালে বাংলা আরও পিছিয়ে পড়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

অমিত শাহের কথায়, রাজ্যের ঋণের বােঝা বর্তমানে বেড়ে ৩ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটিতে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন, বাংলায় প্রতিটি শিশু ৪০ হাজার টাকার ঋণ নিয়ে জন্মাচ্ছে। রাজ্যে ২ শতাংশেরও কম বিদেশি বিনিয়ােগ রয়েছে বলে দাবি অমিত শাহের।

তাঁর কথায়, বাংলায় একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কৃষকদের সাহায্য করার জন্য ৬ হাজার টাকা করে দিতে চাইছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু রাজ্য সরকার সেই অর্থ দিতে দিচ্ছে না বলেই দাবি করেন তিনি।

এরপরেই অমিত শাহ বলেন, বাম এবং তৃণমূল দুই দল দীর্ঘদিন বঙ্গে সরকার চালানাের পরও সােনার বাংলা তৈরি করতে পারেনি। ২০২১ সালে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে সুযােগ দেওয়ার জন্য রাজ্যবাসীকে অনুরােধ করে অমিত শাহ জানান, যদি বিজেপি এই রাজ্যে ক্ষমতায় আসে সেক্ষেত্রে ৫ বছরেই সােনার বাংলা গড়ে তুলবে।

দেশজুড়ে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিক্ষোভ চললেও মােদি সরকার। নিজের অবস্থান থেকে বিন্দুমাত্র সরবে না, রবিবার তা স্পষ্ট করে দেন অমিত শাহ। তিনি বলেন, সিএএ লাণ্ড হবেই। পাশাপাশি এদিনের সভা থেকে তিনি সংখ্যালঘুদের উদ্দেশে বার্তা দেন। অমিত শাহ বলেন, সংখ্যালঘুদের বােঝানাে হচ্ছে এই আইনের ফলে তাদের নাগরিকত্ব চলে যাবে। কিন্তু এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল বলেও দাবি করেন অমিত শাহ। তাঁর কথায়, সিএএ নাগরিকত্ব দেওয়ার জন্য। কারওর নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার জন্য নয়।

পাশাপাশি এদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিএএ-বিরােধী অবস্থানের তীব্র সমালােচনা করে অমিত শাহ বলেন, শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেওয়া নিয়ে একসময় সবর হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বর্তমানে তিনি তুষ্টিকরণের রাজনীতি করছে বলেও দাবি করেন তিনি। সিএএ’র বিরােধিতা করা মানে হরিচাঁদ ঠাকুর, গুরুচাঁদ ঠাকুর বিরােধিতা করা। সিএএর বিরােধিতা করা মহাত্মা গান্ধি, আম্বেদকরের প্রতিশ্রুতির বিরুদ্ধে কাজ করা বলেও মন্তব্য করেন বিজেপির প্রাক্তন সর্বভারতীয় সভাপতি।

সিএএ নিয়ে বঙ্গে বাম, কংগ্রেস, তৃণমূল একযােগে বিরােধিতা করছেন বলেও দাবি করেন তিনি। কিন্তু সমস্ত বিরােধিতা সত্ত্বেও সত্তর বছর ধরে সমস্যায় থাকা এই সাধারণ মানুষজনের নাগরিকত্ব দিয়েই ছাড়বেন বলে জানান শাহ। অর্থাৎ সিএএ লাগু করার সিদ্ধান্ত থেকে যে একবিন্দু নিজের অবস্থান সরবে না মােদি সরকার তা স্পষ্ট করে দেন অমিত শাহ। 

পুরভােটের ঠিক আগে রাজ্য শাসক দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘােষণা করলেন অমিত শাহ। রবিবার শহিদ মিনার ময়দানের মঞ্চ থেকে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আর নয় অন্যায়’ কর্মসুচির সূচনা করেন। এই কর্মসূচির আওতায় তৃণমূল সরকারে অপশাসনের দিকগুলি তুলে ধরা হবে। একটি নাম্বারে মিসকল দিয়ে অথবা একটি নির্দিষ্ট সাইটে লগইন করে সাধারণ মানুষও তৃণমূল সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে পারবে বলে ঘােষণা করা হয় বিজেপির পক্ষ থেকে।

এদিন অমিত শাহ বলেন, বাংলার সাধারণ মানুষ আর কোনও রকম অন্যায় সহ্য করবে না। এই রাজ্যের সাধারণ মানুষ তৃণমূল সরকারকে চিনে ফেলেছে। আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মানুষই তৃণমূলের অপশাসনের জবাব দেবেন বলে জানান তিনি।

এদিন সভাস্থলে উপস্থিত বিজেপির কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে অমিত শাহ বলেন, ‘দিদিকে বলো’ অনুষ্ঠানে ফোন করে এবার থেকে বলবেন আর নয় অন্যায়। এই কর্মসূচির আওতায় বিজেপি কর্মীরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে গিয়ে তৃণমূল সরকারের বঞ্চনা প্রসঙ্গে জানতে চাইবেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূল সরকারকে তীব্র আক্রমণ করে এদিন অমিত শাহ বলেন, লােকসভা নির্বাচনের সময় বঙ্গে সভা করার জন্য হেলিকপ্টার নামার অনুমতি দেয়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। কিন্তু লােকসভা নির্বাচনে ১৮টি আসনে জয়লাভ করার পর কলকাতার বুকে বিজেপিকে সভা করতে দিতে বাধ্য হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মােটের ওপর পুরভােট এবং আগামী বছরে বিধানসভা নির্বাচনের আগেই তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে জোরদার প্রচার চালাতে চায় বিজেপি। একদিকে যখন ‘দিদি বলাে’ কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের অভাব-অভিযোেগ শুনে তা সমাধানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন জয় করতে চাইছে তৃণমূল, তখন পাল্টা তৃণমূলের অপশাসন নিয়ে জনমত গঠন করতে চাইছে বিজেপি, ব্যাখ্যা অভিজ্ঞ মহলের।