বিজেপির সংসদীয় দল এলাকা ছাড়তেই ফের উত্তপ্ত ভাটপাড়া

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধি দল এলাকা ছাড়তেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া।

Written by SNS Barrackpore | June 23, 2019 2:48 pm

এসএস আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধি দল এসে পৌঁছায় ভাটপাড়ায় (Photo: IANS)

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রীকে দায়ী করে বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধি দল এলাকা ছাড়তেই ফের উত্তপ্ত হয়ে উঠল ভাটপাড়া। শুক্রবারের পর শনিবারও পুলিশকে ঘিরে ধরে বিক্ষোভ শুরু করে গেরুয়া কর্মী সমর্থকরা। পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছােড়া হয়। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ। সে সময় এক বিজেপি কর্মীর মাথা ফেটে যায় বলে অভিযােগ।

প্রকাশ, বিজেপির সংসদীয় দল ফিরে যাওয়ার পরই কঁকিনাড়ার কাছারি রােডে টহলরত পুলিশ কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকাবাসীরা। তারপরেই পুলিশ-কর্মীদের ঘিরে ধরে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন এলাকাবাসীরা। তারপরেই পুলিশ-জনতার দফায় দফায় সংঘর্যে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ছােড়া হয় ইট, পাথর। পাল্টা লাঠিচার্জ করে পুলিশ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসেন খােদ পুলিশ কমিশনার মনােজ বর্মা। এরপরেই বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে কাছারি ওসডে রুটমার্চ করে এলাকাবাসির মধ্যে ‘কনফিডেন্স বিল্ডাপের’ কাজ করেন তিনি। বিজেপি কর্মী সমর্থকদের অভিযােগ, পুলিশ এলাকায় ঘুরছে। কিন্তু তার ফাঁকেই গুলি চলছে, বােমা পড়ছে। এলাকায় ঢুকছে বহিরাগতরা। পুলিশ তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। বারংবার অভিযােগ জানিয়ে লাভ হচ্ছে না। সামাজিক জীবন বিপন্ন। এই অবস্থায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ব্যর্থ প্রশাসন। তাই উপায় না দেখে এই বিক্ষোভ আন্দোলন।

এলাকাবাসির দাবি, পুলিশি নিষ্ক্রিয়তারও অভিযােগ তােলেন এদিন। তাদের দাবি, পুলিশ নয়াবাজার, ১, ২, ৩, ৪, ৫, ৬ নম্বর গলি না গিয়ে এখানে পড়ে রয়েছে। বাজার খুলতে বলেও বাজারের মধ্যে গুলি চালালাে। ঘটনা ঘটেছে ভাটপাড়ায় আর গুলি চালালাে কাঁকিনাড়া বাজারে।

প্রসঙ্গত, এদিন সকাল থেকেই একটা থমথমে পরিস্থিতি ছিল ভাটপাড়া-কাঁকিনাড়া এলাকায়। সকাল সাড়ে এগারােটা নাগাদ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল কঁকিনাড়া। বারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি অজয় ঠাকুরকে ঘিরে বিক্ষোভে তারাও আটকে পড়েন। পরে প্রতিনিধি দলের সদস্য বিরােধী দলনেতা কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল মান্নান, বাম পরিষদীয় নেতা সুজন চক্রবর্তী, বিধায়ক তন্ময় ভট্টাচার্য, মানস মুখার্জি, বারাকপুরের সিপিএম নেত্রী গার্গী চ্যাটার্জিগুলিতে নিহত দুই ব্যক্তির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের লােকেদের সঙ্গে দেখা করেন।

এরপরে দুপুর দেড়টা নাগাদ ভাটপাড়ায় যান বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধি দল। সেই দল বর্ধমান-দুর্গাপুরের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া ছাড়াও ছিলেন বাগপতের বিজেপি সাংসদ ঝাড়খণ্ড পুলিশের পুলিশ কমিশনার সত্যপাল সিং, পালামৌ-এর বিজেপি সাংসদ ঝাড়খণ্ড পুলিশের প্রাক্তন ডিজি বিষুদয়াল রাম। এলাকায় পৌঁছেই এসএস আলুওয়ালিয়ার নেতৃত্বে তিন সংসদীয় দল।

এলাকার সাংসদ অর্জুন সিংকে নিয়েই নিহত রােহিত ওরফে রামবাবু সাউয়ের বাড়িতে যান। কথা বলেন পরিবারের সঙ্গে। পরে হেঁটেই ধরমবীর সাউয়ের বাড়িতে পৌঁছন তারা। সেখানে তার বিধবা স্ত্রী, পুত্র ও কন্যার সাথে কথা বলে সবরকম সাহায্যের আশ্বাস দেন আলুওয়ালিয়া।

শুধু নিহত দুই পরিবারের সদস্যদের সাথেই তারা দেখা করেননি তাছাড়াও তারা বিগত কয়েক দিনে কাঁকিনাড়ার জুট মিল সাইডিংয়ে যে হামলা হয়েছে তাও ঘুরে দেখেন। কথা বলে এসএস আলুওয়ালিয়া মন্তব্যঢ় করেন, ‘এসএল আর, ইনসাস থেকে পুলিশ গুলি চালিয়েছে। পুলিশ বলছে হাওয়ায় গুলি ছুঁড়েছে। হাওয়ায় গুলি ছুঁড়লে মানুষের শরীরে লাগল কী করে? মানুষ কি তাহলে হাওয়ায় উড়ছিল? বেছে বেছে গুলি করা হয়েছে। মৃত্যের পরিবারের সদস্যরাও একই কথা বলেছে। আমরা এই ঘটনায় মর্মাহত। আমরা খুব শীঘ্রই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে রিপাের্ট পাঠাব। একপক্ষকে লাঠি চালাব, আর অন্যপক্ষকে গুলি মারব। ঘটনার দিন এই সিদ্ধান্তটা কে নিয়েছিল?’

তিনি আরও বলেন, ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি। রাজ্যের শাসক দল হার মেনে নিতে পারছে না। তাই হিংসার বশবর্তী হয়েই এই সব কাজ করে চলেছে। একটা ফুচকাওয়ালার আয় কত? সেই ছিল সংসারের আয়ের উৎস। তাঁকেই পুলিশ গুলি করে মারল। রাজ্য সরকারের কেউ এসে সমবেদনা জানায়নি। যেদিন থেকে নির্বাচন শুরু হয়েছে সেদিন থেকে সন্ত্রাস শুরু হয়েছে। নির্বাচন শেষ হলেও সন্ত্রাস থামেনি বলে তিনি অভিযােগ করেন।

তৃণমূলকে বিতর্কে অংশ নেওয়ার আবেদন করেছেন তিনি। তিনি আরও বলেন, সাংসদ অর্জুন সিং নিহতদের পরিবারকে ১০ লক্ষ টাকা সাহায্য দেবেন। ধরমবীর সাউয়ের সন্তানদের পড়াশােনার দায়িত্ব নেবেন তিনি। নির্বাচন গােটা দেশে হয়েছে, তবে হিংসা শুধু বাংলায়।

অন্যদিকে, এদিন বাম কংগ্রেস প্রতিনিধি দল প্রথমে কাঁকিনাড়ার মানিকপীর কাছারি রােড ধরমবীর সাউয়ের বাড়িতে যান। তারা মৃতের দাদা রাজকুমার সাউ, স্ত্রী নমিতা সাউয়ের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর তারা কাঁকিনাডা কাছারি রােডে রােহিত সাউয়ের বাড়িতে যান। সেখানে তারা মৃতের মা রেখা সাউ, কাকা অমরনাথ সাউয়ের সঙ্গে কথা বলেন।

এরপরেই সিপিএম বিধায়ক সুজন চক্রবর্তী বলেন, তারা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। ওরা জানিয়েছেন, কোনও রাজনৈতিক দল করেন না। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী মৃত্যুর পর কীভাবে তাদের চলবে? তা নিয়ে চিন্তিত পরিবার। তার দাবি, এলাকায় শান্তি ফিরিয়ে আনার বদলে আরও গরম করা হচ্ছে। আগে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা দরকার। প্রয়ােজনে মুখ্যমন্ত্রী সর্বদলীয় সভা ডাকুন। সব দলের সঙ্গে কথা বলুক।

তার কথায় নির্বাচনে তাে জয়-পরাজয় থাকে। কিন্তু এভাবে কেন অশান্তি পাকানাে হচ্ছে। ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত করা হােক। সিআইডিকে এখন কেউ বিশ্বাস করে না। বিচার বিভাগীয় কিংবা সিবিআই তদন্ত করা হােক। অবিলম্বে এই অশান্তির অবসান দরকার।

অপরদিকে কংগ্রেস নেতা আব্দুল মান্নান বলেন, এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হােক। ঘর ছাড়াদের ঘরে ফেরানাে হােক। মৃতদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হােক। পুলিশের শাস্তির ব্যবস্থা হােক। কেউ রাজ্যে এবং কেউ কেন্দ্রে সরকার আছে। ফলে নিরপেক্ষ তদন্তের দরকার।