রাজ্যজুড়ে এসআইআর আতঙ্ক! একের পর এক মৃত্যুর খবর সামনে আসছে। আগরপাড়া, ইলামবাজার, ব্যারাকপুর এবং পূর্ব বর্ধমানের পর এবার হুগলির ডানকুনিতে মৃত্যুর ঘটনা। এসআইআর আতঙ্কে মৃত্যু হয়েছে ৬০ বছরের এক বৃদ্ধার। নাম হাসিনা বেগম। ডানকুনির ২০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা। পরিবার সূত্রে খবর, গত কয়েক দিন ধরেই এলাকায় এসআইআর নিয়ে গুজবের কারণে প্রবল মানসিক চাপে ছিলেন। সোমবার সকালে বাড়ির সদস্যরা তাঁকে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তড়িঘড়ি বৃদ্ধাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে গেলেও শেষ রক্ষা হয়নি। চিকিৎসকরা বৃদ্ধাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
মেয়ের সঙ্গে ভাড়া থাকতেন হাসিনা বেগম। স্থানীয়দের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। তা নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলেন তিনি। সেই কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন ওই বৃদ্ধা। হাসিনা বেগমের মৃত্যুর খবর পেয়ে তাঁর বাড়িতে যান ডানকুনি পুরসভার পুরপ্রধান হাসিনা শবনম। পুরপ্রধান বলেন, ‘এসআইআর নিয়ে যথেষ্ট আতঙ্কিত মানুষ। বিশেষ করে যাঁদের ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নাম নেই। হাসিনা বেগমেরও নাম ছিল না। এলাকায় আরও এক জন অসুস্থ হয়ে পড়েছেন একই কারণে।’ তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এলাকায় যাচ্ছেন সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ অন্যান্য তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বরাও।
Advertisement
গত সপ্তাহে এসআইআর ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই রাজ্যের একাধিক জায়গা থেকে মৃত্যুর খবর মিলছে। ‘এনআরসি-এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে’ গত সপ্তাহে আত্মহত্যা করেছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার পানিহাটির বাসিন্দা প্রদীপ কর। উদ্ধার হওয়া ‘সুইসাইড নোটে’ সেটাই দাবি করা হয়েছিল। ঠিক তার একদিন পরেই কোচবিহারের দিনহাটায় খইরুল শেখ নামে এক জন আত্মহত্যার চেষ্টা করেন! পরিবারের দাবি, ২০০২ সালের ভোটার তালিকায় নামের বানান ভুল থাকায় তা নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বছর ষাটের ওই বৃদ্ধ। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
Advertisement
অন্যদিকে গত বৃহস্পতিবার ইলামবাজারে ৯৫ বছর বয়সি ক্ষিতীশ মজুমদার নামে এক বৃদ্ধ আত্মহত্যা করেন। পরিবারের অভিযোগ, ২০০২ সালের তালিকায় তাঁর নাম ছিল না। সেই নিয়ে আতঙ্কে ভুগছিলেন তিনি। এই তিন ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই গায়ে আগুন লাগিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন ব্যারাকপুর পুরসভার ৮ নম্বর ওয়ার্ডের কেজি স্কুল রোড মনসা মন্দিরের বাসিন্দা কাকলি সরকার। বয়স ৩৩ বছর। বাংলাদেশের নবাবগঞ্জ এলাকায় তাঁর বাবার বাড়ি। ১৫ বছর আগে বিয়ে হয়ে ভারতে আসেন তিনি। এসআইআর ঘোষণার পর থেকেই তিনি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন। বাংলাদেশে ফিরে যেতে হবে বলে চিন্তায় ছিলেন। সেই কারণে তিনি এই চরম পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে দাবি করে পরিবার।
সম্প্রতি, এসআইআর আতঙ্কে তামিলনাড়ুতে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় পূর্ব বর্ধমানের জামালপুরের পরিযায়ী শ্রমিক বিমল সাঁতরার। তাঁর ছেলে বাপি সাঁতরার অভিযোগ, এসআইআর নিয়ে আতঙ্কে ছিলেন বাবা। সেই চিন্তা থেকে অসুস্থ হয়ে ২৬ অক্টোবর হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়। শনিবার সন্ধ্যায় মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। এর পরেই সোমবার হুগলির ডানকুনি এসআইআর আতঙ্কে হৃদরোগে আক্রান্ত মৃত্যু হল হাসিনা বেগমের। পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, এসআইআর আতঙ্কে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল পাঁচ। গোটা ঘটনায় রাজ্যজুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের আবহ তৈরি হয়েছে। প্রশাসনের তরফে গুজবে কান না দেওয়ার আবেদন জানানো হয়েছে। তবে মৃত্যু নিয়ে ইতিমধ্যেই শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা। চলছে একে অপরকে দোষারোপ করার পালা। বিজেপির অভিযোগ, ‘রাজ্যে আতঙ্ক ছড়ানোর পরিবেশ তৈরি করেছে তৃণমূল সরকারের অস্পষ্ট অবস্থান।’ অন্যদিকে তৃণমূলের দাবি, ‘বিজেপিই ইচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়াচ্ছে। এক কোটি লোক ওপারে যাবে, এই প্রচারেই মানুষ ভীত হচ্ছে।’
Advertisement



