পুরুলিয়া শহরে পারিবারিক পুজো খুব বেশি নেই। তবে তার মধ্যেই চ্যাটার্জি বাড়ির পুজো আজও গুরুত্বপূর্ণ। প্রাচীন রীতি মেনে করা হয় একচালার প্রতিমা ও পুজো। এই পুজোর সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য বিসর্জন। আজও শহরের মধ্যে সব থেকে আগে বিসর্জন হয় চ্যাটার্জি বাড়ির প্রতিমা। কথিত আছে, ব্রিটিশ আমলেই তাম্রপত্রে সরকারি নির্দেশ রয়েছে যে পুরুলিয়ায় সব থেকে আগে বিসর্জন হবে এই বাড়ির প্রতিমা।
শহরের নামােপাড়ার একেবারে কেন্দ্রস্থলে থাকা এই পুজোর রয়েছে আরেকটি বৈশিষ্ট্যও। এখনও জলসা হয়। তিনটে দিন মানুষ আসে জলসা দেখতে। অতীতে পুজোর সময় এখানে অনুষ্ঠান করতে এসেছেন ধনঞ্জয় ভট্টাচার্য, সতীনাথ মুখােপাধ্যায়, উৎপলা সেন, ধীরেন বসুর মতাে শিল্পীরা। এখনও পুরুলিয়ার শিল্পীরা এখানে অনুষ্ঠান করার জন্য মুখিয়ে থাকেন।
Advertisement
জানা গেছে, এই পুজোর সূত্রপাত হয় মুঘলদের সময়ে। তখন চ্যাটার্জিদের পূর্বপুরুষরা থাকতেন বর্ধমানের অমরাগড়ে। পরবর্তীকালে এই পরিবারের ঈশান চট্টোপাধ্যায় কর্মসূত্রে পুরুলিয়ায় আসেন। সিপাহি বিদ্রোহ তখনও হয়নি। মানবাজার থেকে সে সময় মানভূমের জেলাসদর উঠে এসেছে পুরুলিয়ায়। গড়ে উঠেছে জেলা আদালত। এই আদালতেই পসার জমান তিনি। ঈশানের ছেলে নীলকণ্ঠ চট্টোপাধ্যায় দেশের বাড়ির প্রতিমার একটা অংশ নিয়ে এসে পুরুলিয়ায় শুরু করেন আরাধনা।
Advertisement
আগে অত্যন্ত ধুমধামের মধ্যে বিসর্জন হত প্রতিমার। এখন অবশ্য আড়ম্বর অনেকটাই কমেছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, পঞ্চমী থেকে পরিবারের সদস্যরা আনন্দ উপভােগ করতে চলে আসেন। তিনবেলা একশােজনের পাত পড়ে বাড়ির উঠানে। এখানে পরম্পরা মেনে শাক্তমতে পুজো হয়। পশু বলি হয় না। এখনকার পুজোতে কার্তিকের অস্ত্র ধনুক বিসর্জন হয় না। বিশ্বাস করা হয় ধনুষ্টঙ্কারে আক্রান্তরা এই ধনুকের ধােয়া জল খেলে রােগমুক্ত হয়।
Advertisement



