বুধবার দুপুরে রাজ্যে আছড়ে পড়বে আম্ফান, প্রস্তুতি প্রশাসনের

আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আম্ফান সুপার সাইক্লোন স্টর্ম-এর চেহারা নেবে। যে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

Written by SNS Kolkata | May 19, 2020 3:37 pm

সুপার সাইক্লোন'আম্ফান (Photo: Twitter / @Indiametdept)

করোনা কবল থেকে মুক্তি পায়নি রাজ্য। এর মধ্যেই ছোবল মারতে আসছে সুপার সাইক্লোন আম্ফান। ইতিমধ্যে বেড়েই চলেছে এই সাইক্লোনের গতি। আগামী চব্বিশ ঘন্টায় আম্ফানের গতি ক্রমশ বাড়বে। আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আম্ফান সুপার সাইক্লোন স্টর্ম-এর চেহারা নেবে। যে ঘূর্ণিঝড়ের গতিবেগ ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে।

এই রাজ্যের দীঘা থেকে বাংলাদেশের মধ্যবর্তী কোনও এলাকায় আগামী বুধবার আছড়ে পড়তে পারে আম্ফান। যার ফলে উপকূল এলাকা ছাড়াও বিভিন্ন জেলায় তুমুল ঝড় বৃষ্টি হবে। যার মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে রাজ্য। উপকূলের ব্লকগুলিতে চব্বিশ ঘন্টায় কন্টোল রুম খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসনেক তরফে ত্রিপল ও শুকনো খাবার মজুত করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যে এই রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে সোমবার আচমকাই ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বৈঠকে বসেছে কেন্দ্র। এই বিষয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমবার নবান্নে বলেন, প্রোটোকল না মেনেই এটা করছে কেন্দ্র।

আম্ফানের ঝাপটায় সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে দিঘা, মন্দারমনি, সুন্দরবনের সমুদ্র সৈকত এবং উকূর্তী এলাকায়। ঝড়ের তাণ্ডবে কাচা বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে। গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে চাষের। প্রাণহানির ঘটনা যাতে না ঘটে, তার সতর্কতা হিসেবে সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকার বাসিন্দাদের আজ মঙ্গলবার থেকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, কিছুদিন আগে ছিল বুলবুল, এখন আবার আম্ফান। ঘূর্ণিঝড়ের দিকে চব্বিশ ঘন্টা নজর রাখা হচ্ছে। মমতা বলেন, সমুদ্র তীরবর্তী এলাকায় যারা থাকেন, তারা সাবধানে থাকবেন। বুলবুলের সময় যেমন মানুষকে আগে থেকেই বিপদসঙ্কুল জায়গাযর বাইরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, এবারও তা করা হচ্ছে।

বেশ কিছু সাইক্লোন সেন্টার রাজ্যে রয়েছে। কিন্তু করোনার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে যাতে মানুষকে নিরাপদ জায়গায় রাখা যায়, সেদিকেও লক্ষ রাখতে হচ্ছে। মুখ্য সচিবের নেতৃত্বে রাজ্যের বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। রাজ্যের তরফে উপকূলের জেলাগুলির প্রশাসনকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে।

মঙ্গলবার থেকেই রাজ্যে আম্ফানের প্রভাব টের পাওয়া যাবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতর সোমবার জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরের ওপর অবস্থান করেছ আম্ফান। এর অভিমুখ রয়েছে উত্তর দিকে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই এই আম্ফান বাঁক নিয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে এগোতে শুরু করবে।

সোমবার আম্ফান পারাদ্বীপ থেকে ৭৮০ কিলোমিটার দূরে যেখানে রয়েছে, দিঘা থেকে যার দূরত্ব ৯৩০ কিলোমিটার। বুধবার দুপুরে আম্ফানের গতিবেগ ঘন্টায় ১৬৫ কিলোমিটার পর্যন্ত হতে পারে। এর চেয়েও বেশি গতি বাড়িয়ে ঘন্টায় ১৮০ কিলোমিটার বেগে বঙ্গের উপকূল অঞ্চলে আম্ফান আছড়ে পড়তে পারে বলে আলিপুর আবহাওয়াবিদদের ধারণা।

আম্ফানের প্রভাবে কলকাতা, দুই চব্বিশ পরগণা, দুই মেদিনীপুর, হুগলি ও নদীয়াতে প্রবল বৃষ্টিপাত হতে পারে। কলকাতাতেও ঝড়ের ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে। এজন্য কলকাতা পুরসভা সবরকমের ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে। সতর্ক করা হচ্ছে পুরকর্মীদের।

সচেতনতা বাড়াতে দিঘা, সুন্দরবন অঞ্চলে মাইকিং করা হচ্ছে। টহল দিচ্ছে বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। কারও বাড়ি ভাঙাচোরা থাকলে প্রশাসনকে জানাতে বলা হয়েছে। আম্ফানের জন্য সতর্কতা হিসেবে হলদিয়া বন্দরে জাহাজ ঢোকা বন্ধ করল জাহাজ কর্তৃপক্ষ। যে দশটি পণ্যবোঝাই জাহাজ রয়েছে, সেগুলিকেও দ্রুত খালি করার কাজ চলছে। অয়েল জেটিও খালি করা হচ্ছে।

ইতিমধ্যেই এনডিআরএফ-এর টিম দিঘা এবং সুন্দরবন এলাকায় পৌঁছে গিয়েছে।