গ্রামের হাটে বেআইনি অস্ত্রোপচারের মতো ঘটনার পর ফের আরও এক অপ্রত্যাশিত ঘটনা। এ বার হরিশ্চন্দ্রপুরে এক মহিলার বাড়িতে ধরা পড়ল বেআইনি লেবার রুম। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে অন্তঃসত্ত্বাদের প্রসব করিয়ে আসছিলেন তিনি। এমনকি প্রসূতির প্ল্যাসেন্টা কেটে দেওয়ার মতো জটিল কাজও চালাতেন। খবর পেয়ে হরিশ্চন্দ্রপুর ব্লক স্বাস্থ্য দপ্তর ও পুলিশের বিশেষ দল তাঁর বাড়িতে হানা দিয়ে গোটা বিষয়টির পর্দাফাঁস করে।
অভিযুক্ত মানো রবিদাস (৬৪) স্থানীয়ভাবে ‘দাই মা’ হিসেবে পরিচিত। তেঁতুলবাড়ি গ্রামের বাসিন্দা এই মহিলা কোনওদিনও প্রসব সংক্রান্ত সরকারি প্রশিক্ষণ নেননি। তবুও এলাকায় তাঁর পরিচিতি ছিল যথেষ্ট। প্রসবের জন্য তাঁকে ডেকে আনতে স্থানীয়দের পাশাপাশি অনেকে দূর-দূরান্ত থেকেও আসতেন। বিনিময়ে মোটা অঙ্কের অর্থ নিতেন তিনি।
Advertisement
খবর পেয়ে এদিন স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা তাঁর বাড়ির ওই বিশেষ ঘরে ঢুকে কার্যত হতবাক হয়ে যান। স্যালাইনের বোতল থেকে শুরু করে ওষুধপত্র, এমনকি কিছু নিষিদ্ধ ওষুধও মজুত ছিল সেখানে। শুধুমাত্র অস্ত্রোপচার করার সরঞ্জাম বাদে প্রসব সংক্রান্ত প্রায় সব উপকরণই ওই ঘরে পাওয়া যায়। সেগুলি সব বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
Advertisement
যদিও মানোদেবীকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাঁকে লিখিত মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই মুচলেকায় তিনি লিখেছেন, ভবিষ্যতে আর কখনও এই কাজ করবেন না। স্বাস্থ্য দপ্তরের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, প্রথমবার এ ধরনের ঘটনায় সরাসরি গ্রেপ্তারের সুযোগ আইনত নেই। তবে এখন থেকে তাঁর উপর কড়া নজরদারি চালানো হবে।
স্বাস্থ্য দপ্তরের এক আধিকারিক ছোটন মণ্ডল জানান, ‘অনেক দিন ধরেই অভিযোগ শুনছিলাম। কিন্তু প্রমাণ ছিল না। অবশেষে এক আশাকর্মী ঘটনার ভিডিয়ো করে আমাদের খবর দেয়। সেই সূত্রেই অভিযান চালানো হয়।’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মানোদেবী একসময় একটি বেসরকারি নার্সিংহোমে এক চিকিৎসকের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন। নার্সিংহোমটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি নিজের বাড়িতে লেবার রুম চালু করেন। বিশেষত ভিনরাজ্য থেকে আসা মাখনা শ্রমিকদের লক্ষ্য করে তিনি এই কাজ চালাতেন। তবে স্থানীয়রাও অনেক সময় তাঁর কাছে প্রসব করাতে যেতেন বলেও জানা গিয়েছে।
গ্রামীণ চিকিৎসা পরিষেবার এই চিত্র ঘিরে নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। রাজ্য সরকার স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কোটি কোটি টাকা খরচ করছে, তবুও কেন বার বার এমন বেআইনি চিকিৎসাকেন্দ্রের হদিস মিলছে? হরিশ্চন্দ্রপুরে একের পর এক ঘটনা কি তবে প্রমাণ করছে যে সরকারি গ্রামীণ স্বাস্থ্যব্যবস্থা এখনও যথেষ্ট ভঙ্গুর?
Advertisement



