আক্ষেপ উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্য সেরা ছাত্রী দিনহাটার অধীশা দেবশর্মার

প্রয়াত রামচন্দ্র সাহা তার জীবদ্দশায় কমিটির হাতে তারিখহীন এক কোটি টাকার একটি চেক তুলে দেন।দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ নির্মাণ অজানা কারণে বিশবাঁও জলের তলে চলে।

Written by সুভাষ মণ্ডল Dinhata | June 21, 2022 2:40 pm

উচ্চমাধ্যমিকে রাজ্য সেরা অধীশা দেবশর্মা উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি দিচ্ছে কলকাতা। দিনহাটা ছেড়ে কলকাতা কেন? প্রশ্নটা অধীশারও।

এবছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যে প্রথম স্থান অধিকার করে সাড়া ফেলে দিয়েছে সীমান্ত শহর দিনহাটার অধীশা দেবশর্মা। উচ্চশিক্ষা লাভের আশায় তাকে পাড়ি দিতে হচ্ছে কলকাতায়।

অধীশার আক্ষেপ দিনহাটা কিংবা কোচবিহারে উচ্চ শিক্ষার পরিকাঠামো নেই। দিনহাটায় একটিমাত্র কলেজ। সেখানে কয়েক হাজার ছাত্রের চাপ। এখানে উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ নেই।

পড়ুয়াদের চাহিদামত উচ্চশিক্ষার নানা পরিকাঠামো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে শহর কলকাতা জুড়ে। যা নেই সীমান্ত শহর দিনহাটা তথা গোটা কোচবিহার জেলায় পড়ুয়াদের চাহিদামত এখানে উচ্চ শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠলে সুযোগ পাবে অনেকেই সেক্ষেত্রে সুদূর কলকাতা বা অন্যত্র পাড়ি দিতে হবেনা কোচবিহারের বহু ছেলেমেয়েদের।

এসব ভেবেই তাকে ছাড়তে হচ্ছে দিনহাটা। সেখানে সে অংক নিয়ে গবেষণা করতে চায়। আট লক্ষাধিক মানুষের বসবাস যে মহকুমায় সেই সীমান্তবর্তী দিনহাটায় কলেজ মাত্র একটি।

মহকুমার দূর দূর গ্রাম থেকে পড়ুয়াদের এই কলেজে এসে পড়াশোনা করতে হয় যা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক ও বিড়ম্বনার। এই কলেজে আসন সংখ্যার চেয়েও অনেকবেশী ছাত্র – ছাত্রী উপায়ন্তর না পেয়ে ভর্তি হয়।

একদিকে এখানে উচ্চশিক্ষালাভের যেমন পরিকাঠামো নেই তেমনি দুরবর্তী শহরে শিক্ষায় ব্যয়বহুলতা তাদের কাছে অন্যতম চিন্তার কারণ। তাই দিনহাটার একমাত্র কলেজকে এখানকার শিক্ষার্থীদের বেছে নিতে হয় গতানুগতিক উচ্চশিক্ষার অন্যতম প্রতিষ্ঠান হিসাবে।

দিনহাটা মহকুমায় দ্বিতীয় কলেজের দাবি বহুদিনের কোচবিহার জেলার বৃহত্তম এই মহকুমায় স্বাধীনতার ৭৫ বছরেও দ্বিতীয় কলেজের দাবি উপেক্ষিত। রাস্তাঘাট, বৈদ্যুতিক আলোতে স্থানীয় মানুষজন প্রকারান্তরে খুশি হলেও এখানে বাস্তবমুখী আধুনিক উচ্চশিক্ষার পরিকাঠামো এখনও গড়ে না ওঠায় সমাজ সচেতনতার ক্ষেত্রেও তার বিরূপ প্রভাব পরিলক্ষিত হয় এখানে উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের প্রাক্কালে দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ গড়া নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়।

দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহকে কমিটির মাথায় রেখে ১৫ জনের একটি কমিটি গঠিত হয়। এই কমিটির অন্যতম বিশিষ্ট সদস্য গোকুল সরকার এ সম্পর্কে জানান চারেক আগে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দিনহাটা মহকুমায় দ্বিতীয় কলেজ গড়া নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয়।

ওই কমিটিতে দিনহাটার বিশিষ্ট অধ্যাপক সুভাষ চন্দ , শিক্ষাবিদ রামচন্দ্র সাহা যুক্ত ছিলেন। ওই কমিটি মহকুমার বিভিন্ন স্থান ঘোরাঘুরি করে সীমান্তবর্তী সাহেবগঞ্জ থানার অন্তর্গত দুর্গানগর এলাকায় কলেজ স্থাপনের স্থান নির্বাচন করে।

কলেজ স্থাপনের নিয়ম অনুযায়ী স্থানে ১৫ বিঘা জমি নির্দিষ্ট করা ছাড়াও ব্যাংকে ১৫ লক্ষ টাকা ফিক্সড ডিপোজিট করা। দিনহাটা হাইস্কুলের প্রয়াত শিক্ষক রাম চন্দ্র সাহা এ নিয়ে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ অনুমোদনের জন্য একটি চিঠিও দেন। চিঠিটি ফের বিধায়কের সুপারিশ সহকারে পাঠানো হয়।

এরই মধ্যে প্রয়াত রামচন্দ্র সাহা তার জীবদ্দশায় কমিটির হাতে তারিখহীন এক কোটি টাকার একটি চেক তুলে দেন। এরপর দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ নির্মাণ অজানা কারণে বিশবাঁও জলের তলে চলে।

অর্থদাতা রাম চন্দ্র সাহা বছর দুয়েক আগে তার অসুস্থতার সময় কোটি টাকার সেই চেকটি ফেরত নিয়ে নেন বলে কমিটির সদস্য গোকুল সরকার উল্লেখ করেন যদিও তিনি তা ফের দিতে রাজি থাকেন বলে গোকুলবাবু জানান।

এর ফলে দিনহাটার বহু পড়ুয়ার ভবিষ্যৎ উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর অনেকটাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। আশাহত হয়ে পড়েন দিনহাটার অভিভাবক ও ছাত্রছাত্রী মহল দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজ নির্মাণ নিয়ে ফের পঞ্চায়েত ভোটের আগে দিনহাটার বিধায়ক উদয়ন গুহ বিধানসভায় সরব।

ইতিমধ্যে তিনি দিনহাটার দ্বিতীয় কলেজ স্থাপনের জরুরী কাগজপত্র নিয়ে কলকাতা রওনা দেন বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে। এখন দেখার দিনহাটার গ্রাম গঞ্জের উচ্চমাধ্যমিক পাশ ছাত্রছাত্রীরা দিনহাটায় দ্বিতীয় কলেজে পঠন পাঠনের সুযোগ পায় কিনা।

রাজ্য সেরা ছাত্রী দিনহাটার অধীশা দেবশর্মার মত অন্য অনেক পড়ুয়ার আক্ষেপ হয়তো সেদিন দূর হবে।