তৃণমূল-বিজেপির মঞ্চে বাম কংগ্রেস জোটেরও অ্যাসিড টেস্ট আজ

নির্বাচনে পরাজয় মানে অনেক কিছু হারানাে। শুধু প্রার্থীরাই নয় অনেক হেভিওয়েট নেতার মর্যাদা বাড়া-কমা নির্ভর করছে এই ফলাফলের ওপর।

Written by Debashis Das Kolkata | November 28, 2019 2:07 pm

প্রতীকী ছবি (File Photo: IANS)

কালিয়াগঞ্জ, করিমপুর, খড়গপুর আক্ষরিক অর্থে এই তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনের ফল ঘােষণা আজ বৃহস্পতিবার হলেও আসলে এর সঙ্গে জড়িত বাংলার রাজনীতির আগামীর গতিপ্রকৃতি। সে কারণেই এই তিন কেন্দ্রের নির্বাচনী ফলাফলকে ঘিরে রাজ্য জুড়ে কৌতুহলের কোনও খামতি নেই। সেই সঙ্গে বেশ কয়েকজনের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে এই নির্বাচনী ফলাফলের ওপর। কারণ, নির্বাচনে পরাজয় মানে অনেক কিছু হারানাে। শুধু প্রার্থীরাই নয় অনেক হেভিওয়েট নেতার মর্যাদা বাড়া-কমা নির্ভর করছে এই ফলাফলের ওপর। এই তালিকায় সবার শীর্ষে রয়েছে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষ, অন্যজন হলেন রাজ্যের তিন তিনটি দফতরের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী, সাংসদ মহুয়া মৈত্র, বঙ্গ বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুকুল রায়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আর একটি নাম তিনি হলেন প্রশান্ত কিশাের।

২০১৯ লােকসভা নির্বাচনে বঙ্গে বিজেপি ১৮ টি আসন পেয়ে চমকপ্রদ উত্থান হয়। এর পরেই তৃণমূলে প্রশান্ত কিশােরের অন্তর্ভুক্তি দেখা যায়। শুরু হয় দিদিকে বলাে কর্মসূচি। এই কর্মসূচি এই তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনে কতটা প্রভাব ফেলল তা জানা যাবে আজ। সব মিলিয়ে তিন কেন্দ্রের উপনির্বাচনকে ঘিরে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যতের ওঠানামা নির্ভর করছে। ৩-০, ০-৩ নাকি ২-১ এই তিনটি অঙ্কই ঘােরাফেরা করছে রাজনৈতিক মহলে। জয়ের বিষয়ে আশাবাদী সব পক্ষই। কিন্তু জোর গলায় কেউ দাবি করতে পারছেন না ঠিক কোন আসনে কত ব্যবধানে তাদের প্রার্থী জয়ী হবে।

আসলে এবারের নির্বাচনে তাবড় তাবড় রাজনীতিবিদরা মানুষের মন ঠিক মতাে বুঝে উঠতে পারছে না। সে কারণে এই তিন কেন্দ্রের নির্বাচনী কোনও সমীক্ষার ফল ফলাও করে এখনও কোথাও প্রকাশিত হয়নি। খড়গপুরে পিকে’র টিমের কৌশল ছিল এবার কোনও নেতা নয়, বেটাকে জেতাও। সেই কৌশলই আদৌ কাজে লাগলাে কিনা তার জন্য আর কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।

তবে সবচেয়ে বেশি মর্যাদার লড়াই ছিল বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘােষের কাছে। কারণ, খড়গপুরের আম জনতা দিলীপবাবুকে উজাড় করে সমর্থন করেছেন। প্রথমে বিধায়ক পরে সাংসদ হয়েছেন তিনি। কিন্তু রেল শহর খড়গপুরের জন্য এমন কোনও প্রকল্প তিনি কেন্দ্রের কাছ থেকে এখনও আনতে পারেননি যার জন্য খড়গপুরবাসী তাঁকে নিয়ে গর্ব অনুভব করতে পারেন। সে কারণে খানিকটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন ব্যাক্তি দিলীপ ঘােষ এবং তাঁর দল।

অন্যদিকে রাজ্য মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য শুভেন্দু অধিকারীর ওপর যে গুরু দায়িত্ব বর্তেছে সেই কাজে তিনি কতটা সফল হলেন তার দিকে তাকিয়ে গােটা রাজ্য। মুর্শিদাবাদে তিনি অধীর চৌধুরীকে হারাতে না পারলেও এই জেলার দুটি লােকসভা আসন দলকে উপহার দিয়ে শুভেন্দু নিজের জাত চিনিয়ে দিয়েছেন। ২০১১-র কথা বাদ দিলে ২০১৬ সাল থেকে তৃণমূলে শুভেন্দু পারফরমেন্স শাসক দলের যে কোনও নেতার চেয়ে ভালাে। ফলে এই আসনটি যদি তৃণমূল জয়ী হয় তাহলে রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দুর মর্যাদা বহুগুন বেড়ে যাবে শুধু শাসক দলের নেতাদের কাছেই নয় বিরােধীদের কাছেও। কারণ, খড়গপুর আসনটি দেখভালের দায়িত্ব বর্তেছে এই নেতার ওপর। যদি কোনও কারণে খড়গপুরের নির্বাচনী ফলাফল তৃণমূলের অনুকুলে না যায়। তাহলেও হলফ করে বলা যেতে পারে এই আসনে শাসক দলের ভােট গতবারের তুলনায় অনেক বাড়বে। ফলে শুভেন্দুর গুরুত্ব কোনও অংশে কমবে না। তবে বাম-কংগ্রেস জোট করে তিনটি কেন্দ্রে লড়ছে।

এই জোট কত শতাংশ ভােট নিজেদের ঝুলিতে আনতে পারলাে তার দিকে তাকিয়ে সব মহল। কারণ, লােকসভা নির্বাচনে বামেরা এ রাজ্যে একটিও আসন পায়নি। এই বিপর্যয়ের কারণেই অনেকটা বাধ্যবাধকতায় বামেরা অতীতের রাজনৈতিক তিক্ততা ভুলে কংগ্রেসের সঙ্গে গাঁটছড়া বেঁধেছে। গত বেশ কয়েকটি নির্বাচনে বামেরা তাদের ভােট ব্যাঙ্কে রক্তক্ষরণ বন্ধ করে ঠিক কতটা ঘুরে দাঁড়িয়ে রাজ্য রাজনীতিতে নিজেদের প্রাসঙ্গিক করে তুলল তাও জানা যাবে আজ। যদি এই জোটের ফলাফল আশানুরূপ না হয় তবে কি ভবিষ্যতের কথা ভেবে বিজেপিকে রুখতে কংগ্রেস-তৃণমূল ফের কাছাকাছি আসার সম্ভাবনা তৈরি হবে তারও উত্তর লুকিয়ে রয়েছে এদিনের নির্বাচনী ফলাফলে। 

কালিয়াগঞ্জে লােকসভা নির্বাচনের নিরিখে বিজেপির পাল্লা অনেক ভারি। বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী কত শতাংশ ভােট নিজেদের অনুকূলে আনে তা নিয়ে কৌতুহল যথেষ্ট রয়েছে। ২০১৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস প্রার্থী এই আসন থেকে জয়লাভ করেছিল। কিন্তু মাত্র তিন বছরের মধ্যেই এই আসনের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলে গিয়েছে। চমকপ্রদ উত্থান ঘটেছে বিজেপির। যদিও অনেকে বলছে এই কেন্দ্রটি বিজেপির কাছে অনেকটাই নিশ্চিত। কিন্তু তৃণমূলও টক্কর দেওয়ার জন্য যাবতীয় রণকৌশল গ্রহণ করেছিল। ফলে ভােট কাটাকাটির খেলায় তৃণমূলের আদৌ কোনও লাভ হয় কিনা তা নিয়েও যথেষ্ট জল্পনা রয়েছে। এই কেন্দ্রের বাম-কংগ্রেস জোট যাদি শেষ পর্যন্ত ব্যাকফুটে চলে যায় তা হবে বাম এবং কংগ্রেসের কাছে রাজনৈতিক ভাবে বড় ধাক্কা। অন্যদিকে উত্তরবঙ্গে লােকসভা নির্বাচনে একটিও আসন তৃণমুল পায়নি। সম্প্রতি টিম পিকের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছিল উত্তরবঙ্গে তৃণমূল ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। বাস্তব চেহারাটা ঠিক কি তার আভাস মিলবে আজ।

নদিয়া জেলার অধীন করিমপুর বিধানসভা উপনির্বাচন ঘিরে উত্তেজনার পারা তুঙ্গে। খড়গপুর যদি তৃণমূলের কাছে পাখির চোখ হয় করিমপুর বিজেপিরও পাখির চোখ। এই আসনটিতে সংখ্যালঘু ভােট যথেষ্ট রয়েছে। সংখ্যালঘু মন পেতে মরিয়া বিজেপি অনেকদিন ধরেই এই আসনটি স্বপক্ষে আনার জন্য বিভিন্ন কৌশল নিয়েছে। বঙ্গ বিজেপির অন্যতম শীর্ষ নেতা মুকুল রায়ের জেলার মধ্যে পড়ে এই আসনটি। নিজের ছেলে শুভ্রাংশু রায়কেও এই কেন্দ্রের দায়িত্ব দিয়েছিলেন মুকুল ও তাঁর অনুগামী ঘনিষ্ঠ নেতাদের সঙ্গে সম্পর্কের সম্প্রসারণ ঘটিয়ে রাজ্যের শাসকদলকে বেকায়দায় ফেলতে।

অন্যদিকে মহুয়া মৈত্র ঠিক নিজে যেভাবে কঠিন জয় সহজ করে নিয়েছিলেন লােকসভা নির্বাচনে সেই স্টাইলেই তৃণমূল প্রার্থীকে জয়ী করতে দিনরাত এক করে গােটা বিধানসভা কেন্দ্র চষে বেড়িয়েছেন। নির্বাচনের দিন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে লাথি মারার ঘটনা করিমপুরকে বেশি করে সংবাদের শিরােনামে এনে দিয়েছে। এই করিমপুর পাওয়ার জন্য নকশা তৈরি করেছেন মুকুল রায়। সেই কাজে তিনি শেষপর্যন্ত সফল হলেন কিনা সেই পরীক্ষার ফলাফলও আজ।

বিজেপি এবং তৃণমূল দুই পক্ষই দাবি করছে ফল তাদের অনুকূলে যাবে। খড়গপুরে বিজেপি, কালিয়াগঞ্জে কংগ্রেস, করিমপুর ছিল তৃণমূলের। ২০১৬ সালের পর গঙ্গা দিয়ে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। বদল ঘটেছে রাজনৈতিক মানচিত্রেরও। তৃণমুল দাবি করে এসেছে লােকসভা ভােট ও বিধানসভা ভােট আলাদ আলাদা বিষয়। দেশের রাজনীতিকে সামনে রেখে হয় লােকসভা স্থানীয় ইস্যুকে সামনে রেখে হয় পুরসভা পঞ্চায়েত এবং রাজ্যের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে হয় বিধানসভা। এবার সেই ট্রেন্ডেও কোনও পরিবর্তন আসে কিনা তা নিয়েও কৌতুহল ক্রমশ বাড়ছে।