• facebook
  • twitter
Sunday, 14 December, 2025

কামারপুকুরে রামকৃষ্ণদেবের মামার বাড়ির বংশধরকে পিটিয়ে হত্যা

পুরো ঘটনা ঘটেছে কামারপুকুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ—‘যেখানে বচসা চলছিল, তার কয়েক মিটার দূরেই পুলিশ ফাঁড়ি।

ফাইল চিত্র

জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন শেষে ক্লাবের সদস্যদের আড্ডা ও খাওয়াদাওয়ার মধ্যেই ঘটে গেল নৃশংস ঘটনা। আর সেই তুচ্ছ বচসাই কেড়ে নিল ২৬ বছরের রামচন্দ্র ঘোষালের প্রাণ। যিনি কামারপুকুরের রামকৃষ্ণ মিশনের রঘুবীর মন্দিরের প্রধান পূজারী তারক ঘোষালের একমাত্র পুত্র এবং ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণদেবের মামার বাড়ির বংশধর। এমন ঐতিহ্যবাহী পরিবারের সদস্যকে এভাবে হত্যার ঘটনায় শহরজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোক ও ক্ষোভের ছায়া।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে কামারপুকুরের এক ক্লাবে জগদ্ধাত্রী পুজোর বিসর্জন উপলক্ষে খাওয়াদাওয়ার আয়োজন করা হয়েছিল। সেই আড্ডাতেই অভিযোগ ওঠে, রামচন্দ্র তিনটি সেদ্ধ ডিম আগে খেয়ে নিয়েছেন। এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে কিছুক্ষণ বাগ্‌বিতণ্ডা হয়। ঘটনাটি তখন থেমে গেলেও পরে বাড়ি ফেরার পথে ফের ঝামেলা বাধে। অভিযোগ, বন্ধুরাই তাঁর ওপর চড়াও হয় এবং বেধড়ক মারধর করে।

Advertisement

অভিযোগের তির রাজু মাইতির দিকে। স্থানীয়দের দাবি, রাজু রামচন্দ্রকে মারতে মারতে টেনে নিয়ে যান কামারপুকুরের শ্রীধাম প্রতীক্ষালয়ে এবং সেখানেই ফেলে রেখে পালিয়ে যান। পরে এলাকাবাসী অচৈতন্য অবস্থায় রামচন্দ্রকে পড়ে থাকতে দেখে উদ্ধার করেন। দ্রুত কামারপুকুর গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

Advertisement

পুরো ঘটনা ঘটেছে কামারপুকুর পুলিশ ফাঁড়ি থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বে। এলাকাবাসীর ক্ষোভ—‘যেখানে বচসা চলছিল, তার কয়েক মিটার দূরেই পুলিশ ফাঁড়ি। কয়েক মাস আগেই হুগলি গ্রামীণের পুলিশ সুপার ২৪ ঘণ্টা নজরদারির জন্য সিসি ক্যামেরা চালু করেছিলেন। তা হলে এমন মর্মান্তিক ঘটনা কী ভাবে ঘটল?’

ঘটনাকে আরও জটিল করেছে একটি বড় অভিযোগ। জানা গিয়েছে, যে মাঠের পূজোকে কেন্দ্র করে বচসা শুরু, তার পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন কামারপুকুরের স্বনামধন্য তৃণমূল কংগ্রেস নেতা জগবন্ধু ঘোষ। স্থানীয়রা প্রশ্ন তুলেছেন, ‘পৃথিবীপ্রসিদ্ধ এই তীর্থক্ষেত্রে যদি এমন নিরাপত্তাহীনতা থাকে, তবে সারা বছর লক্ষ লক্ষ ভক্ত ও পর্যটকের নিরাপত্তা কোথায়?’

যদিও পুলিশ এখনও সরকারিভাবে কোনও বিবৃতি দেয়নি, তবে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। মূল অভিযুক্ত রাজু মাইতিকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে বলে দপ্তর সূত্রের খবর। ঘটনার নেপথ্য, কারা কারা যুক্ত এবং কী কারণে এই নৃশংসতা, তা সবই খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

পরিবার, মিশনের সদস্য এবং শহরের বহু মানুষ রামচন্দ্রের অকালমৃত্যুতে শোকাহত। তাঁদের একটাই দাবি, দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।

Advertisement