ফারাক্কায় বাস ও ট্যাঙ্কারের সংঘর্ষ, মৃত ৭, আহত ১২

স্থানীয় ও পুলিশি সুত্রে জানা যায়, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজ চলার কারণে একটি লেন বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য আরেকটি লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে।

Written by SNS Berhampore | December 1, 2019 2:39 pm

সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসুচির ব্যাপক প্রচারের পরেও মুর্শিদাবাদে পথ দুর্ঘটনা অব্যাহত। শনিবার ভােরে ফরাক্কা থানার এনটিপিসি মােড় এবং বল্লালপুর মধ্যবর্তী খয়রাকান্দি এলাকায় ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের উপরে একটি বেসরকারি বাসের সঙ্গে একটি বেসরকারি কোম্পানির তেল ট্যাঙ্কারের মুখােমুখি সংঘর্ষে মৃত্যু হয় সাতজনের। আহত হন বাসের ১২ জন যাত্রী। আহতদের উদ্ধার করে স্থানীয় বেনিয়াগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। কয়েকজনের আঘাত গুরুতর হওয়ায়, তাদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতাল এবং মুর্শিদাবাদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।

স্থানীয় ও পুলিশি সুত্রে জানা যায়, ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের কাজ চলার কারণে একটি লেন বন্ধ রাখা হয়েছে। অন্য আরেকটি লেন দিয়ে গাড়ি চলাচল করছে। শিলিগুড়ি থেকে বহরমপুরগামী বিলাসবহুল বেসরকারি বাসের সামনে হঠাৎই চলে আসে কলকাতা থেকে অসমগামী বেসরকারি কোম্পানির তেলের ট্যাঙ্কার। মুখােমুখি সংঘর্ষ হয় দুটি গাড়ির। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় বাসের চালক সুকুমার দাস (৫৮) এবং তেল ট্যাঙ্কারের চালক সােনু কুমারের (৩০)। সােনুর বাড়ি বিহারের ছাপড়া জেলায়।

ঘটনার খবর পেয়ে সঙ্গে সঙ্গে ফরাক্কা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। ঘটনাস্থলে আসেন জঙ্গিপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক। স্থানীয় মানুষের সাহায্যে শুরু হয় উদ্ধার কাজ। অ্যাম্বুলেন্স এবং নিশ্চয়যানের মাধ্যমে উদ্ধার করা হয় যাত্রীদের। গুরুতর জখম অবস্থায় ১৬ জনকে বেনিয়াগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

এই দুই হাসপাতালে এক পুলিশ আধিকারিক সহ আরও পাঁচজনের মৃত্যুর খবর জানানাে হয়। মৃতেরা হলেন, শিলিগুড়ি পুলিশ কমিশনারেটে কর্মরত তথা মালদার রতুয়া এলাকার বাসিন্দা পলাশকুমার সিংহ, রঘুনাথগঞ্জ থানার জগুনপাড়ার বাসিন্দা কমলা বেওয়া (৪৫), কান্দি থানার ঘনশ্যামপুর এলাকার অরূপ ঘোষ (২৮), সাগরদিঘি থানার মেগাশিরার বাসিন্দা আনিসুর রহমান (৪৫) এবং শিলিগুড়ির সুকান্তপল্লী এলাকার বাসিন্দা।

এদিকে পথ দুর্ঘটনার জেরে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে দীর্ঘক্ষণ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ব্যাপক যানজট তৈরি হয় জাতীয় সড়কে। পরে ক্রেনের সাহায্যে দুটি গাড়িকে জাতয় সড়কের দু’পাশে নিয়ে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হয়। এদিকে পথ দুর্ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে চাপান-উতাের। তেলের ট্যাঙ্কারের হেল্পার বিহারের ছাপড়া এলাকার বাসিন্দা সুনীল কুমার বলেন, ‘কলকাতা থেকে ডিজেল যে আমরা অসমে যাচ্ছিলাম। আমরা বাঁদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম। কিন্তু হঠাৎই বাসটি নিয়ম ভেঙে দ্রুত গতিতে আমাদের সাইডে এসে ধাক্কা মারে’। 

অভিযােগ অস্বীকার করে বাসটির কর্ণধার নবকুমার সাহা বলেন, ‘যাত্রীদের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি। তারা আমাদের জানিয়েছে, বাসটি সঠিক দিক দিয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু তেলের ট্যাঙ্কারের চালকই ওর জায়গা ছেড়ে ডানদিকে এসে বাসে ধাক্কা মারে’। বাসের যাত্রী শিলিগুড়ির বাসিন্দা অনু সরকার বলেন, ‘বাসের প্রায় সব যাত্রীই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাই বিকট আওয়াজ এবং ঝাকুনিতে সবার ঘুম ভাঙে। সবাই দেখে বাসটি ডিভাইডারের উপরে উঠে পড়েছে এবং বাসের সামনের কাচ ভাঙা। তখন যে যেরকম পেরেছে বাসের জানালা দিয়ে বেরিয়ে এসেছে। আমরাও তাই করেছি। তবে স্থানীয় মানুষের মুখে শুনলাম, দুটি গাড়ির গতি ছিল প্রচণ্ড’।

গুরুতর জখম বাসযাত্রী ইউসুফ আনসারি বলেন, ‘যে গতিতে আমাদের বাসটি চলছিল তাতে আমার মনে হয় বাসের চালক মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন। আবার যে গতিতে তেলের ট্যাঙ্কারটি ধাক্কা মারে, তাতে এটাও হতে পারে, তেলের ট্যাঙ্কারের চালকও মদ্যপ অবস্থায় থাকতে পারেন। যাই হােক না কেন, একটু সতর্ক হলেই দুর্ঘটনাটি এড়ানাে যেত’।

যদিও জঙ্গিপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক প্রসেনজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায় ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে বলেন, দুর্ঘটনাস্থলের সামনে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সে কারণে সামনে একটি কাটিং আছে। সেটা না ধরে দুই গাড়ির চালক ওয়ানওয়েতে চলে আসার কারণেই এই দুর্ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করা হচ্ছে। তবে গাড়ি দু’টির গতি অত্যাধিক ছিল কিনা বা চালকরা মদ্যপ অবস্থায় ছিল কিনা তা তদন্তে দেখা হবে বলেও তিনি জানিয়েছেন।