মঙ্গলবারের ভয়াবহ দুর্যোগ এবং রেকর্ড বৃষ্টিতে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃতদের পরিবারের জন্য আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই সঙ্গে মৃত্যুর ঘটনায় ফের ক্যালকাটা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কর্পোরেশন বা সিইএসসি-কে দায়ী করলেন তিনি। উল্লেখ্য, শহরে বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১০। এমতাবস্থায় মঙ্গলবার তিনি জানিয়েছিলেন, মৃতদের পরিবারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ অথবা চাকরির ব্যবস্থা করে দিতে হবে সিইএসসি-কেই। কারণ, তাদের গাফিলতিতেই এই প্রাণহানি! বুধবার ভবানীপুর ৭০ পল্লির শীতলা মন্দিরের দুর্গোৎসবের উদ্বোধনে গিয়ে মমতা জানালেন, সিইএসসি যদি মৃতদের পরিবারকে চাকরির ব্যবস্থা না করে, কর্মসংস্থান করে দেবে তাঁর সরকার। কী চাকরি পাবেন, সেটাও জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে মঙ্গলবারের অবস্থানে অনড় থেকে সঞ্জীব গোয়েঙ্কার সংস্থার কাছে তাঁর আবেদন, মৃতদের পরিবারকে যেন ৫ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। রাজ্য সরকারের তরফেও মৃতের পরিবারগুলিকে ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানালেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি সিইএসসি চাকরি না দিলে মৃতদের পরিবারের একজন সদস্যকে স্পেশাল হোমর্গাডের চাকরির আশ্বাস দিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
জলমগ্ন কলকাতায় বিদ্যুৎস্পষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় আগেই দুঃখপ্রকাশ করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বুধবার সকালে এক মৃতের পরিবারের সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন মমতা। দুপুরে ভবানীপুরে পুজো উদ্বোধনে গিয়ে তাঁর এই মানবিক ঘোষণা। এদিন ফের কেন্দ্রকে দুষে তিনি বলেন, ‘এখন পরিস্থিতি অনেকটা ভাল। দু’-একটা নিচু জায়গা ছাড়া জল নেমে গিয়েছে। প্রকৃতি আমাদের হাতে নেই। কিন্তু বিশ বছর ধরে কলকাতা বন্দর, ফরাক্কা ব্যারেজ কোনও দিন ড্রেজ করেনি। ডিভিসি, মাইথন, পাঞ্চেত, ফরাক্কা বাঁধ জল ছেড়ে দিচ্ছে! এদিকে গঙ্গায় ভরা কোটাল। বিহারে, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হলেও জল চলে আসছে। সবটা আমাদের সামলাতে হচ্ছে। তবে পুরসভা খুব ভালো কাজ করেছে।’ এরপরই তড়িদাহতের প্রসঙ্গ টেনে ক্ষতিপূরণ এবং চাকরির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, দ্বিতীয়ায় প্রবল বৃষ্টির কারণে কলকাতার পুজো উদ্বোধন স্থগিত রেখেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী।
Advertisement
ভবানীপুর ৭০ পল্লী, বালিগঞ্জ কালচারাল, সিংহী পার্ক, একডালিয়া, হিন্দুস্তান পার্ক, মুদিয়ালী, বাদামতলা, ত্রিধারা-সহ তৃতীয়ায় মোট ৪০টি পুজোর উদ্বোধন করেছেন মমতা। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতে প্রতি পুজোতে উপস্থিত হয়ে মণ্ডপ ও প্রতিমা সজ্জার খুঁটিনাটি খতিয়ে দেখেছেন তিনি। কখনও মা দুর্গার প্রতি পুষ্প নিবেদন, কখনও আরতি, আবার কখনও ডান্ডিয়ার তালে তাল মিলিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। সিংহী পার্ক থেকে মায়ের কাছে তাঁর আবেদন, ‘দুর্যোগ কাটিয়ে দাও মা।’ একডালিয়ার পুজোতে দাঁড়িয়ে রাজ্যের প্রয়াত প্রাক্তন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতিচারণা করে আবেগেও ভাসলেন মমতা। বললেন, ‘সুব্রতদার কথা মনে পড়ে। তাঁর ছবি দেখলেই চোখে জল আসে।’ সেই সঙ্গে এদিন কালীঘাট দমকল কেন্দ্রের নতুন ভবনের উদ্বোধনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু, সাংসদ মালা রায়, বিধায়ক দেবাশিস কুমার, পৌরমাতা কাজরী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর রাজ্য সভাপতি কার্তিক বন্দ্যোপাধ্যায়।
Advertisement
Advertisement



