চব্বিশ ঘন্টায় রাজ্যে করােনায় মৃত্যু ১১ জনের

রাজ্যে একলাফে করােনায় মৃতের সংখ্যা অনেকটা বেড়ে গেল। গত চব্বিশ ঘন্টায় মৃত্যু হল ১১ জনের। যা এ পর্যন্ত সর্বাধিক। একদিনে নতুন করে করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ জন।

Written by SNS Kolkata | May 1, 2020 6:39 pm

প্রতিকি ছবি (File Photo by SAM PANTHAKY / AFP)

রাজ্যে একলাফে করােনায় মৃতের সংখ্যা অনেকটা বেড়ে গেল। গত চব্বিশ ঘন্টায় মৃত্যু হল ১১ জনের। যা এ পর্যন্ত সর্বাধিক। একদিনে নতুন করে করােনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭ জন, সুস্থ হয়ে ছাড়া পেয়েছেন ১৫ জন। বৃহস্পতিবার সন্ধে পর্যন্ত রাজ্যে অ্যাক্টিভ করােনা রােগির সংখ্যা ৫৭২। এই পরিসংখ্যান দিলেন রাজ্যের মুখ্যসচিব রাজীব সিনহা।

রাজ্যে করােনায় মৃতের সংখ্যা গণনার ক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় ডেথ অডিট কমিটি। এই কমিটির দেওয়া পরিসংখ্যান নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক তুলেছিলেন বিরােধীরা। করােনায় মৃত্যু নিয়ে ডেথ কমিটির বক্তব্যে সন্তুষ্ট হতে পারেনি রাজ্যে আসা কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক দল।

বুধবারই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন ডেথ কমিটি তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁর নিজের কোনও ভূমিকা ছিল না। এমনকী ওই কমিটিতে কারা রয়েছেন তাও তিনি জানেন না বলে মন্তব্য করেছেন। বৃহস্পতিবার মুখ্যসচিব জানান, এই ডেথ কমিটি কোনও ডেথ সার্টিফিকেট দেয় না।

এই কমিটির কাজ মৃত্যুর কেসগুলাে পর্যবেক্ষণ করা। করােনা চিকিৎসা কীভাবে হয়েছে, আক্রান্তদের প্রাথমিক উপসর্গ কী ছিল তা খতিয়ে দেখেছে এই কমিটি। সেই উপসর্গগুলি কতদিনে সংকটজনক হয়ে উঠছে সেগুলি করােনা চিকিৎসায় এই বিষয়গুলি রেকর্ড রাখার কারণে এই ডেথ অডিট কমিটি গড়ার প্রয়ােজনীয়তা ছিল বলে জানিয়ে দেন মুখ্যসচিব। তবে এই কমিটি জানিয়েছে আইসিএমআর-এর নির্দেশিকা অনুযায়ী ডেথ সার্টিফিকেটে ইমিডিয়েট কজ, ইনসিডেন্টাল কজ এবং আন্ডারলাইয়িং কজের উল্লেখ করতে হবে।

মুখ্যসচিব জানান, এই ডেথ অডিটি কমিটি এ পর্যন্ত ১০৫’টি কোভিড ১৯ রােগে মৃত্যুর কেস স্টডি করেছে। যার মধ্যে ৩৩’টি মৃত্যু হয়েছে নিশ্চিতভাবে করােনার কারণে অর্থাৎ ইমিডিয়েট কজ অফ ডেথ করােনা। বাকি ৭২’টি মৃত্যুর কারণ কো-মরবিডিটির জন্য। অর্থাৎ সেখানে ইনসিডেন্টাল বা আন্ডারলাইয়িং কজ অফ ডেথ কোভিড ১৯ সংক্রমণ থাকতে পারে।

মুখ্যসচিব এদিন জানান, আগামী ৪ মে থেকে, গ্রিন জোনে বেশ কিছু পরিষেবা এবং ছােট দোকানপাট খােলার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বটে। কিন্তু পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলােচনার পর এই বিষয়ে চূড়ান্ত নির্দেশিকা জারি করা হবে। আগামী ৩ মে তারিখের পর কী হবে, সে বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকার এখনও কোনও নির্দেশিকা জারি করেনি। বৃহস্পতিবার সব রাজ্যের মুখ্যসচিবের সঙ্গে ক্যাবিনেট সচিব কানফারেন্স করেছেন। সেখানেও কী কী দোকানপাট খােলা হবে বা পরিবহণের মতাে কী কী পরিষেবা চালু করা হবে, তা জানতে চাওয়া হয়েছে।

মুখ্যসচিব জানান, রাজ্যে এখনও পর্যন্ত যতজন করােনা আক্রান্তের খুবর পাওয়া গিয়েছে, তার ৮০ শতাংশই কলকাতা, হাওড়া এবং উত্তর চব্বিশ পরগণা থেকে। যে জেলাগুলি রােড জোনে রেয়েছ। এছাড়া হুগলি জেলা থেকেও করােনা সংক্রমণের খবর পাওয়া গিয়েছে। রাজ্যে মােট ৪৪৪’টি কনটেইনমেন্ট জোন ঘােষিত হয়েছে। এর মধ্যে কলকাতায় ২৬৪’টি, হাওড়ায় ৭২’টি এবং উত্তর চব্বিশ পরগণায় ৭০’টি এলাকা কনটেইনমেন্ট জোনের অন্তর্গত। আজ উচ্চ পর্যায়ের ক্যাবিনেট কমিটির সঙ্গে ফের বৈঠক করছেন রাজ্যের সচিবরা। পয়লা মে ছুটি থাকায়, শনিবার ২ মে গ্রিন জোনে ছাড় নিয়ে বিধি প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়ে দেন মুখ্যসচিব।

করােনা পরীক্ষায় পজেটিভ হওয়ার হার ৫ থেকে কমে ৪.৬ হয়েছে। অর্থাৎ নমুনা পরীক্ষার পর করােনা পজেটিভ হওয়ার কেস কমছে? মুখ্যসচিব জানান, গত চব্বিশ ঘন্টায় ১৯০৫ জনের করােনা পরীক্ষা হয়েছে। মােট নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ১৬,৫২৫। রাজ্যে করােনা পরীক্ষাকেন্দ্র বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা বাড়ছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে রাজ্যে মাত্র একটি জায়গাতেই (নাইসেড) করােনা পরীক্ষা করার সুযােগ ছিল। কেন্দ্রীয় সরকান্ত্রে অনুমতি পেয়ে ধাপে ধাপে সেই ল্যাবরেটরির সংখ্যা বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ১৪’টায়। এর মধ্যে রাজারহাটের সিএনসিআই’তে। টেকনিক্যাল ত্রুটির জন্য করােনা পরীক্ষা আপাতত বন্ধ রয়েছে। রাজ্যে কোভিড হাসপাতালের সংখ্যা একটা বেড়েছে। নতুন কোভিড হাসপাতাল রয়েছে শহর কলকাতাতেই।

সরকারি কোয়ারেন্টাইনে এখনও পর্যন্ত ৫২৮৮ জন রয়েছেন। প্রয়ােজন হলে পর্যন্ত সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে যথেষ্ট সংখ্যক মানুষকে রাখা যেতে পারে। তবে অনেকের বাড়িতেই হােম আইসােলেশনে থাকার যথাসম্ভব সুযােগ থাকায় তারা সেখানে থাকতে চাইছেন। তবে বাড়িতে থাকলে সম্পূর্ণ আইসােলেশনের শর্তগুলি যথাযথভাবে মেনে চলা জরুরি।

সেই মর্মে কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশিকাও ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়েছে। হােম কোয়ারেন্টাইনের ক্ষেত্রেও সরকারি স্তরে মনিটরিং থাকে। এ পর্যন্ত প্রায় এগারাে হাজার জনকে হােম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছিল। যার মধ্যে প্রায় ন’হাজার জনকে ছাড়া হােম কোয়ারেন্টাইন থেকে মুক্ত করা হয়েছে।