• facebook
  • twitter
Tuesday, 16 December, 2025

আর্থিক বৈষম্য বাড়ছে

স্থায়ী চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ায় তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে গত নির্বাচনেই। এছাড়া সার্বিক উন্নতি করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে নজর দিতে হবে সব রাজ্যেরই প্রতি।

বাজারি উন্নয়নের ফাঁদে পড়ে বাড়ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। সম্পদের ক্ষেত্রেও যেমন, আয়ের ক্ষেত্রেও তেমন। এটা অনেকদিন আগে থেকেই বলে আসছেন আন্তর্জাতিক বিদগ্ধ ব্যক্তিরা। আন্তর্জাতিক স্তরের আলোকচকদের এই ধরনের সমালোচনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে নরেন্দ্র মোদীর কেন্দ্রীয় সরকার।

কিন্তু এখন কেন্দ্রের নীতি আয়োগই বলছে একথা। তাদের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, ভারতে বেড়ে চলা বৈষম্যে তারা উদ্বিগ্ন। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী রাষ্ট্রসঙ্ঘের মাপকাঠিতে বৈষম্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের ছবি মোটেই ভালো নয়। ২০১৮-য় ছিল ৭১-এ, ২০২৩-এ নেমে এসেছে ৬৫-তে। শুধু তাই নয়, লিঙ্গ বৈষম্যও বেড়েছে। আর এর ফলে ভারত ২০৩০-এর মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নের যে লক্ষ্য নিয়েছে তা অধরা থেকে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা।

Advertisement

ঘটনাচক্রে বেসরকারি সূত্র যেমন অক্সফ্যামের হিসাব অনুযায়ী জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশ চলে গেছে ওপর সারির ১ শতাংশ ভারতীয়ের পকেটে, আর নীচের দিকে থাকা ৫০ শতাংশ মানুষ পেয়েছে মাত্র ৩ শতাংশ। এই হিসাব ২০১২ থেকে ২০১২-এর মধ্যে। দুঃখের কথা যেটা, সেটা হল ঔপনিবেশিক আমলে যে বৈষম্য ছিল তার থেকেও অবস্থা খারাপ এখন। নীতি আয়োগ যে দু’টি সূচক তুলে ধরেছে, সেগুলি দু’টি ভিন্ন ধরনের সমস্যার প্রতি ইঙ্গিত করে। গরিব মানুষরা সুযোগ-সুবিধা হস্তগত করতে পারে না, ফলে তাঁরা গরিবই থেকে যায়। সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বৈষম্যের অর্থ ঋণ পেতে অসুবিধা, শিক্ষা না পাওয়া, স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত হওয়া এবং সর্বোপরি বিচার না পাওয়া। এই বৈষম্য আরও চোখে পড়ে যখন সরকারের দেওয়া তথাকথিত সুরক্ষা ব্যবস্থা সুনিশ্চিত না হয়। এই বেড়ে চলা বৈষম্যে রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রভাবের ফলে বিক্ষোভ অথবা সংঘর্ষ ঘটে থাকে। সুস্থ স্বাভাবিক সম্মানজনক জীবনযাপন না করতে পারলে গরিব মানুষ অপরাধমূলক ও বেআইনি কাজ কারবারে জড়িয়ে পড়ে। চরম বৈষম্যকে অধিকার কিংবা অপরাধ হিসেবেও দেখা যায় যেখানে ধনী এবং সমাজের উচ্চবর্গের লোক তার সম্পদের প্রদর্শন করে অশালীনভাবে।

Advertisement

অন্যদিকে লিঙ্গ বৈষম্যের মূল কারণটা লুকিয়ে আছে সামাজিক সমস্যার গভীরে, যেখানে পুরুষতান্ত্রিকতাকে পালন করা হয়। চারদিকে একটু চোখ রাখলেই বোঝা যায় লিঙ্গ বৈষম্য কেমন প্রকট হয়ে উঠেছে। জন প্রতিনিধিত্বে, ভারতের কর্মসংস্কৃতিতে প্রধান কী পারিবারিক মূল্যবোধেও সর্বক্ষেত্রে মেয়েরা পিছিয়ে রয়েছে পুরুষদের তুলনায়। ক্ষতির কথা চিন্তা করলে মাথা ঘুরে যাবে। কর্মদক্ষতা এবং সৃষ্টিশীলতার লাভ হারাচ্ছে দেশ, কারণ বিপুল সংখ্যক মহিলা না পাচ্ছেন শিক্ষা, না পাচ্ছেন কর্মসংস্থানের সুযোগ। জীবনের আসল সময়টা তাদের কাটাতে হচ্ছে ঘর-সংসারের কাজ করে। এক বিপুল সম্পদ হারাচ্ছি আমরা।

এবার যেহেতু নীতি আয়োগ নিজেই বৈষম্যের কথা তুলে ধরেছে, সেহেতু সময় এসেছে এই ব্যাপারে নির্দিষ্ট নীতি প্রণয়ন ও রূপায়ণ করার। আদানি-আম্বানিদের পাশে থাকা মোদী সরকারের এই বিষয়ে চিন্তা-ভাবনা নিয়ে সন্দেহ আছে। এমনিতেই অগ্নিবীর কর্মসূচিতে দেশের তরুণ সমাজ ক্ষুব্ধ। স্থায়ী চাকরির সুযোগ কমে যাওয়ায় তাদের ক্ষোভের প্রকাশ ঘটেছে গত নির্বাচনেই। এছাড়া সার্বিক উন্নতি করতে হলে কেন্দ্রীয় সরকারকে নজর দিতে হবে সব রাজ্যেরই প্রতি। কিন্তু এবারের বাজেটে যেটা দেখা গিয়েছে কুর্সি বাঁচাতে দুই সহযোগী দলকে ঢালাও উপহার দেওয়া হয়েছে বাজেটের মাধ্যমে। এমনটা আগে কখনও দেখা যায়নি। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোকে সম্মান জানাতে হলে সব রাজ্যকে সমান চোখে দেখা অবশ্য কর্তব্য। ক্ষুদ্র দলীয় রাজনীতি নিয়ে ব্যস্ত থাকলে এই বৈষম্যের ফাঁক কখনও ভরাট হবে না।

Advertisement