ছন্দা গায়েনের মতাে আবারও দুই পর্বতারােহীর কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ জয়ের পর আর বাড়ি ফেরা হল না। কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গের এক দুর্গম অঞ্চলে আটকে পড়ে বরফের মধ্যে পড়ে রইল কুন্তল কাঁড়ার এবং বিপ্লব বৈদ্য নমে দুই বাঙালির নিথর দেহ।
আট হাজার মিটার ওপরে তাঁদের ফেলে রেখে ফিরে আসতে বাধ্য হলেন তাঁদের সহযাত্রী রমেশ রায়, রুদ্রপ্রসাদ হালদার এবং সাহাবুদ্দিন। এঁদের মধ্যে রমেশ রায়ের অবস্থা আশঙ্কাজনক। পালমােনারি ইডিমা হওয়ায় তাঁর ফুসফুসে জল ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। তিনি স্নো ব্লাইন্ডনেসে আক্রান্ত হয়ে চোখে কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না। রুদ্রপ্রসাদ এবং সাহাবুদ্দিনও ফ্রস্ট বাইটের শিকার।
Advertisement
অভিযাত্রীদের মধ্যে মৃত দুজনকে নামিয়ে আনতে পারেনি শেরপাদের উদ্ধারকারী দল। বাকিদের অবশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘার নীচে ক্যাম্প-ফোরে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে শেরপারা।
Advertisement
মৃত্যুর হাতছানিকে উপেক্ষা করেই প্রতি বছর পর্বত অভিযানে সামিল হন অভিযাত্রীরা। নেপাল, দার্জিলিং এবং কালিম্পং– তিনটি জায়গা দিয়েই কাঞ্চনজঙ্ঘায় যাওয়া যায়। পিক প্রােমােশন প্রাইভেট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনায় এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি পাঁচ অভিযাত্রীর দল নেপালের পথ ধরে কাঞ্চনজঙ্ঘা অভিযানের জন্য পাড়ি দেন। পৃথিবীর তৃতীয় উচ্চতম এবং ভারতের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কাঞ্চনজঙ্ঘা। আবহাওয়ার প্রতিকুলতা এবং নানা প্রতিবন্ধকতাকে পেরিয়ে এই অভিযাত্রীর দল কাঞ্চনজঙ্ঘা শৃঙ্গ জয় করেন।
ফেরার পথে কুন্তল কাঁড়ার এবং বিপ্লব বৈদ্য কাঞ্চনজঙ্ঘার বুদ্ধ পাহাড়ের পাদদেশে প্রাণহীন হয়ে লুটিয়ে পড়েন। কুন্তল কাঁড়ার (৪৬) হাওড়ার এবং বিপ্লব বৈদ্য (৪৮) কলকাতার আনন্দপুর অঞ্চলের বাসিন্দা। রাজ্যের পর্বতারােহী সংগঠনের পক্ষে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘার শীর্ষের উদ্দেশে ক্যাম্প ফোর থেকে রওনা দেয় এই অভিযাত্রীর দল। ফেরার সময় সকলেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। রুদ্রপ্রসাদ, সাহাবুদ্দিন এবং রমেশ রায়কে নামানাে গেলেও বাকি দুজনকে নামানাে সম্ভব হয়নি। অত্যধিক ঠাণ্ডা এবং অতি উচ্চতার জন্য তাঁরা অসুস্থ হয়ে পড়েন। প্রথমে সহযাত্রী ও শেরপারা কুন্তল ও বিপ্লবকে নামিয়ে আনার চেষ্টা করলেও সক্ষম হন না।
কাঞ্চনজঙ্ঘা ছোঁয়ার আগে কুন্তল কাঁড়ার ফেসবুকে পােস্ট করেছিলেন। লিখেছিলেন কাঞ্চনজঙ্ঘার শিখর ছুঁয়ে কাঞ্চন আলাে গায়ে মেখে ফিরে আসতে পারি সকলের মাঝে। কুন্তলের শেষ ইচ্ছে পূরণ হয়নি। কাঞ্চনজঙ্ঘার কোলেই নিভে তাঁর জীবনের আলো, বিপ্লবের সঙ্গী হয়ে।
Advertisement



