উত্তমকুমারের প্রয়াণ দিবসে নজরুল মঞ্চে বঙ্গসম্মান দেওয়ার পর্ব চলছিল মুখ্যমন্ত্রীই তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছিলেন সম্মান হঠাৎই সেই আনন্দ অনুষ্ঠানের মঞ্চেই পার্থ চট্টোপাধ্যায় ইস্যুতে প্রথম নীরবতা ভাঙলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
পার্থ প্রসঙ্গে মমতার তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, বিচার যেকথা বলবে, আমাদের দল তা মেনে নেবে। তবে সত্য প্রমাণিত হলে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলেও, ‘আই নেভার মাইন্ড’।
Advertisement
মুখ্যমন্ত্রী বলেন অপরাধ করলে, অন্যায় করলে আমি দলের ছেলেদেরও রেয়াত করি না আগেও গ্রেফতার করিয়েছি, মন্ত্রী-বিধায়কদেরও ছাড়িনি।
Advertisement
পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে যেভাবে রাজ্য রাজনীতি উত্তাল হয়েছে সেই প্রেক্ষিতে মমতার এদিনের বক্তব্য নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা শুরু হয়েছে বিরোধী মহলে।

এদিন নিজের ভাবমূর্তি প্রসঙ্গেও বিরোধীদের কটাক্ষ করে মমতা বললেন, আমার ছবি দিয়ে কালি লাগানোর চেষ্টা করলে আমার হাতেও আলকাতরা আছে।
যে আলকাতরা ওয়াশিং মেশিনেও ধোয়া যায় না এর আগে সরকারি অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকে সেভাবে দলীয় ইস্যু তুলতে দেখা যায়নি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে।
কিন্তু এদিন তিনি বললেন আপনাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিলাম। কারণ মনের কথা বলতে বাধ্য হচ্ছি মর্মাহত হয়ে।
সোমবার প্রায় পাঁচ-ছয়বার মমতা ইঙ্গিত দিলেন, পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে দলীয় অবস্থানের। এবং কার্যত পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের পাশে না দাঁড়ানোরই বার্তা দিলেন তৃণমূল নেত্রী।
মমতার যুক্তি, যে অন্যায় করেছে, তার বিরুদ্ধে যা খুশি করুন। কিন্তু তাঁর গায়ে যেন কালি ছেটানোর চেষ্টা না করা হয়।
পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ছবি ঘিরে বিতর্ক তৈরি হতেই তা খণ্ডন করতে আসরে নামলেন মমতা।
এদিন অনুষ্ঠানের মঞ্চ থেকেই বললেন, আজ আমি সত্যিই দুঃখিত, মর্মাহত। কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জন্য। সবাই সাধু একথা বলতে পারব না।
তবে আমি জ্ঞানত কোনও অন্যায় করি না জেনেশুনে আমি কোনওদিন কাউকে অন্যায় করতে দিইনি। আমি চাই সত্যটা সামনে আসুক।
তবে সারদা-নারদার মতো অনন্তকাল বিচার ঝুলিয়ে না রেখে, ‘উইদিন দা টাইম ফ্রেম’ বিচারের নিষ্পত্তি হওয়া উচিত। প্রয়োজনে ফার্স্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার হওয়া উচিত।
মমতা এদিন সাফ জানিয়ে দেন কেউ যদি মনে করে আমার সম্মান নষ্ট করবেন, তা হলে মনে রাখবেন, আমি যেটা করিনি, সেটা করিনি।
মুখ্যমন্ত্রী এদিন আত্মপক্ষ সমর্থনে বলেন, আমি মুখ্যমন্ত্রীর ভাতা নিই না। সাংসদ থাকার জন্য যে পেনশন প্রাপ্য হয়, সেটাও নিই না।
রেলমন্ত্রী থাকাকালীন চা-ও নিজের পয়সায় খেতাম। এখনও বাইরে গিয়ে সার্কিট হাউসে থাকলে নিজস্ব পুঁজি থেকে টাকা খরচা করি বই লিখে, গানে সুর দিয়ে তার রয়্যালটি থেকে আমার নিজস্ব আয় হয়।
এদিন নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজোর উদ্বোধনে গিয়ে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের মুখোমুখি হয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই ভিডিও পোস্ট করে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে অর্পিতার যোগ রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তা নিয়েই রেগে অগ্নিশর্মা মমতা বললেন, কোথায় একটি পুজোর উদ্বোধনে গিয়েছি। সেখানে কে বসে রয়েছে, সে নাকি ‘পার্থ’র বন্ধু। তা আমি কী করে জানব? একজন মহিলার ছবি দিয়ে আমাকে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে।
বিজেপি সিপিএম টাকার পাহাড়ের মাথায় আমার ছবি দিচ্ছে সারা কলকাতা জুড়ে। রাজনীতি না করলে জিভটা কেটে দিতে পারতাম।
তবে এদিন পার্থ কাণ্ডে স্পষ্টভাবে মমতা জানিয়ে দেন, আমি মানুষের করি। মানুষ তা চাইবে, আমি তাই করব।
তবে এই ঘটনার সঙ্গে দল বা সরকার কোনওভাবেই রিলেটেড নয়। পার্থ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি তাঁকে ছেড়ে কথা বলবেন না, তারও ইঙ্গিত দিলেন মমতা।
তবে তার আগে পর্যন্ত কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছতে চাইছেন না মমতা। এমনকী চিকিৎসার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এসএসকেএম থেকে ভুবনেশ্বর এইমস-এ নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্রের ছায়া দেখছেন মমতা।
তিনি বলেন, এসএসকেএম-এর মতো উন্নতমানের হাসপাতালকে বাদ দিয়ে অন্যরাজ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে যাওয়া নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছেন মমতা।
রাজনৈতিক মহলের মতে, পার্থ চট্টোপাধ্যায় প্রসঙ্গে এখনও কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাই পার্থকে দুষলেও দলীয় সংশ্রব থেকে বিষয়টিকে মুক্তই রাখতে চেয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisement



