• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

চলচ্চিত্রের মহারাজা

বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক সত্যজিৎ রায়। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে, নিজস্ব একটি ধারা তৈরির মাধ্যমে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে নবদিগন্তের সূচনা করেন।

সত্যজিৎ রায়. (File Photo: IANS)

বাংলা চলচ্চিত্রের ধারায় এক অন্যতম কিংবদন্তী সত্যজিৎ রায়। বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা ও পরিচালক সত্যজিৎ রায়। স্বকীয় বৈশিষ্ট্যে, নিজস্ব একটি ধারা তৈরির মাধ্যমে তিনি বাংলা চলচ্চিত্রে নবদিগন্তের সূচনা করেন। চলচ্চিত্রে সুর যােজনায় তিনি ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। ছবি আঁকার হাতও ছিল তার অসাধারণ। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য তিনি আজীন সম্মাননা হিসেবে বিশেষ অস্কার পেয়েছিলেন। যার অসামান্য অবদানের জন্য বাংলা চলচ্চিত্রের ধারা এক মাইল ফলক রূপে পরিগণিত হয়।

শুধু বাংলা নয় তিনি সমস্ত বিশ্বের চলচ্চিত্রে এক মর্যাদার সম্মান দাবি করেন। তার হাত ধরে বদলে গিয়েছিল ভারতীয় সিনেমার প্রেক্ষাপট। প্রকৃত অর্থে তিনি বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রকার। একজন ভারতীয় চলচ্চিত্র নির্মাতার পাশাপাশি, চিত্রনাট্যকার, শিল্প নির্দেশক, সঙ্গীত পরিচালক, লেখক, গ্রাফিক্স ডিজাইনার হিসেবেও তিনি গােটা বিশ্বে পরিচিত। সর্ব গুণসম্পন্ন মানুষটি আজও আমাদের সকলের মনে উজ্জ্বল হয়ে আছেন।

Advertisement

জন্মের শতবর্ষে পা দিলেন বরেণ্য পরিচালক সত্যজিৎ রায়। সত্যজিৎ রায়ের জন্ম ১৯২১ সালের ২ মে কলকাতায়। তিনি প্রখ্যাত শিশু সাহিত্যিক সুকুমার রায় ও সুপ্রভা দেবীর একমাত্র সন্তান। পিতামহ উপেন্দ্রকিশাের রায় চৌধুরী ছিলেন বাংলা সাহিত্যে এক কিংবদন্তী পুরুষ।

Advertisement

এই রায় পরিবারটির আদি নিবাস ছিল বাংলাদেশের কিশােরগঞ্জ জেলার মাসুয়া গ্রামে। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে অর্থনীতিতে অনার্স ডিগ্রি নিয়ে সত্যজিৎ শান্তিনিকেতনের কলাভবনে অধ্যায়ন করেন। এসময় তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন আধুনিক ভারতীয় চিত্রকলার দুই দিকপাল আচার্য নন্দলাল বসু বিনােদ বিহারী মুখােপাধ্যায়কে। শান্তিনিকেতনের শিক্ষাও সম্পূর্ণ কর্নেনি তিনি।

তবে শান্তিনিকেতনেই সত্যজিৎ পেয়েছিলেন এক অমূল্য রত্নভাণ্ডারের সন্ধান। স্কুলজীবন থেকে সুপরিচালিত, সু-অভিনীত ও সু বিজ্ঞাপিত হলিউডি সিনেমা দেখে বেড়ে ওঠা, তারকা প্রথা আর স্টুডিও ব্যবস্থার গুণগ্রাহী তরুণ সত্যজিতের সামনে খুলে গেল সিনেমা আস্বাদনের এক বিকল্প পথ। শান্তিনিকেতনের গ্রন্থাগারে সত্যজিৎ খুঁজে পেয়েছিলেন চলচ্চিত্র বিষয়ে বই।

সত্যজিৎ পরিচালক জীবনের নানা পর্বে নানা কথােপকথনে বইগুলাের উল্লেখ্য করেছেন। বলেছেন এসব পড়ে সিনেমার শিল্পরূপ বিষয়ে আগ্রহী হয়েছিলেন। প্রেসিডেন্সির ডিগ্রি তার কোনও কাজে আসেনি। শান্তিনিকেতন নিয়েও খুব উচ্ছ্বসিত হননি কখনও। সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র ‘পথের পাঁচালি’।

তার কুশলী হাতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অনবদ্য উপন্যাসটির চলচ্চিত্রে সার্থক রূপায়ণ বাংলা চলচ্চিত্রে নতুন যুগের সুচনা করে। ১৯৫৬ সালে কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটি মানবিক আবেদন সম্পন্ন সর্বশ্রেষ্ঠ ছবি হিসেবে পুরস্কৃত হয়। শুরু হয় চলচ্চিত্রে সত্যজিতের জয়যাত্রা।

পাশাপাশি সাহিত্যাঙ্গনেও নিয়মিত চর্চা করতে শুরু করেন। শিশু কিশােরদের জন্য রচিত তাঁর গ্রন্থগুলাে সব বয়সী পাঠকের কাছে এখনও সমাদৃত। বিখ্যাত চরিত্র ফেলুদা, প্রফেসর শঙ্কু সত্যজিতেরই অসাধারণ সৃষ্টি। নিজের প্রকাশিত গ্রন্থের প্রচ্ছদ ও অলংকরণ সত্যজিৎ নিজেই করতেন। চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রেও তাই।

আবহ সংগীত, সুর রচনা, সংগীত পরিচালনা, নির্দেশনা-সব ক্ষেত্রেই ছিল তার দক্ষতা , মেধা আর মননের স্পর্শ। সত্যজিৎ রায়ের ছবিগুলাের মধ্যে উল্লেখযােগ্য ‘অপরাজিত’, ‘পথের পাঁচালি’, ‘অপুর সংসার’, ‘জলসাঘর’, ‘দেবী’, ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’, ‘চারুলতা’, ‘নায়ক’, ‘সােনার কেল্লা’, ‘গুপি গাইন বাঘা বাইন’, ‘হীরক রাজার দেশে’, ‘ঘরে বাইরে’, ‘অশনি সংকেত’ প্রভৃতি। কবি সুভাষ মুখােপাধ্যায়ের সঙ্গে যুগ্মভাবে তিনি সুকুমার রায়ের সন্দেশ পত্রিকাটি পুনঃপ্রকাশ করেছিলেন।

দেশে ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নানা উপাধি, পুরস্কার ও সম্মানে ভূষিত হয়েছেন মহান এই শিল্পী। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য ‘অস্কার’ যা তিনি বর্ণময় কর্মজীবনের কাজের স্বীকৃতি হিসেবে অর্জন করেন। ১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল চলচ্চিত্র ও সাহিত্যের এই দিকপাল প্রয়াত হন। তিনি যে নতুন সিনেমার নতুন ধারণা সৃষ্টি করেছিলেন সেই কারণেই তিনি আজও সিনেমা জগতে স্বতন্ত্র হয়ে আছেন।

Advertisement