ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক ওসমান হাদির মৃত্যু ঘিরে গত কয়েকদিন ধরেই বাংলাদেশে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি চলছে। সংখ্যালঘু দীপুচন্দ্র দাসের হ্ত্যার প্রভাব পড়েছে ভারতে। দীপু দাসের হত্যার প্রতিবাদে দিল্লি ও কলকাতার বাংলাদেশের বিদেশ দপ্তরে সামনে প্রতিবাদ দেখানো হচ্ছে। বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে ইতিমধ্যেই উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ভারত। এবার উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসঙ্ঘও। সোমবার বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে এই আন্তর্জাতিক সংস্থা। হিংসার ঘটনায় তারা খুবই উদ্বিগ্ন বলে জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসতেই অশান্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশ। দেশের নানা প্রান্তে চলে নিধন যজ্ঞ। বাংলাদেশের প্রথম দুই সারির সংবাদ মাধ্যমের দপ্তরে ভাঙচুর চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেখানকার সংস্কৃতির পীঠস্থান হিসেবে পরিচিত ছায়ানট এবং উদীচীতেও ভাঙচুর চালিয়ে আগুন জ্বালানো হয়। শেখ মুজিবুর রহমানের ধানমন্ডির বাড়ির অবশিষ্টাংশও ভাঙা হয়। সাংবাদিক খুনের পাশাপাশি ময়মনসিংহে কারখানার শ্রমিক দীপু দাসকে পিটিয়ে খুন করে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। ওই ঘটনায় ইতিমধ্যেই ন্যায়বিচারের দাবি তুলেছে ভারত। উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সে দেশের সংখ্যালঘুদের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়েও।
Advertisement
রাষ্ট্রসঙ্ঘের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেসের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিককে সোমবার বাংলাদেশের বর্তমানে পরিস্থিতে নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। গত কয়েক দিনে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণের ঘটনায় মহাসচিবের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়।প্রশ্নের উত্তরে স্টিফেন ডুজারিক বলেন, ‘হ্যাঁ, বাংলাদেশে যে হিংসা আমরা দেখেছি, তাতে আমরা খুবই উদ্বিগ্ন। বাংলাদেশেই হোক, বা অন্য কোনও দেশে— যাঁরা ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ’ সম্প্রদায়ের নন, তাঁদেরও নিরাপদ বোধ করা উচিত। প্রত্যেক বাংলাদেশিরই নিরাপদ বোধ করা উচিত। আমরা বিশ্বাস করি সরকার প্রত্যেক বাংলাদেশিকে নিরাপদে রাখতে সাধ্যমতো সব পদক্ষেপ করবে।‘
Advertisement
কয়েকদিন আগেই ওসমান হাদির হত্যার নিরপেক্ষ তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে জানিয়েছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে সংযত থাকারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। আগামী বছর ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচন। ভোটের কথা মাথায় রেখে সংযম থাকতে বলেছিল রাষ্ট্রসঙ্ঘ। গুতেরেস বলেছিলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নিরপেক্ষ এবং স্বচ্ছ তদন্ত করতে হবে’। ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে তদন্তপ্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলেও মনে করেন গুতেরেস। এমনটাই জানিয়েছিলন তাঁর মুখপাত্র।
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে বাংলাদেশ উত্তপ্ত হয়ে ওঠার তিন দিনের মাথায় গত রবিবার বাংলাদেশের ঘটনা নিয়ে প্রথম বিবৃতি দেয় ভারত। ওই বিবৃতির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশও একটি পাল্টা বিবৃতি জারি করে। ময়মনসিংহের ঘটনা নিয়ে নয়াদিল্লির বিবৃতিতে আপত্তি জানায় ঢাকা।
ময়মনসিংহের ঘটনা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দাবি করেছে মুহাম্মদ ইউনূসের সরকার। তাদের দাবি, ভারত বিষয়টিকে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা বলে দেখাচ্ছে। বাংলাদেশে একজন নাগরিকের নৃশংস হত্যার ঘটনাকে সংখ্যালঘু নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করার কোনও যৌক্তিকতা নেই বলে জানিয়েছে বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রক। ইউনূসদের দাবি, ময়মনসিংহের ঘটনায় দ্রুত পদক্ষেপ করা হয়েছে এবং অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে এ সবের মধ্যেই এ বার বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করল রাষ্ট্রসঙ্ঘ।
Advertisement



