ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধন ঘিরে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার বিরুদ্ধে সোমবার সরব হলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিয়ের পরে অন্য বাড়িতে গেলে, নামের বানানে বাংলা ও ইংরেজিতে সামান্য ফারাক থাকলেও ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ যাচ্ছে— এই অভিযোগ তুলে কমিশনকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রী কমিশনকে কড়া আক্রমণ করে বলেন, ‘এই অধিকার কে দিল?’
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, এখন কোনও আনন্দ-অনুষ্ঠানের সময় নয়। তাঁর কথায়, ‘এ বার পিকনিক-টিকনিক হবে না। পিকনিক একেবারে ২০২৬ সালে জেতার পরে হবে।’ ভোটার তালিকা সংশোধনকে ঘিরে চলমান পরিস্থিতিতে সংগঠনকে মাঠে নামার নির্দেশ দেন তিনি।
Advertisement
নির্বাচন কমিশনকে বিঁধে মমতা বলেন, ‘ডিলিমিটেশনের পরে ঠিকানা বদলেছে বলে নাম বাতিল। বিয়ে হয়ে অন্য বাড়িতে গিয়েছে, বাতিল। বাংলা ও ইংরেজিতে নামের বানানে ফারাক, বাতিল। এই অধিকার কে দিল? এলাকায় এলাকায় শান্তিপূর্ণ মিটিং-মিছিল চলবে। বিএলএ-১, বিএলএ-২ যাঁরা আছেন, তাঁদের বিরক্ত করা চলবে না।’
Advertisement
পুরনো নথিপত্র চাওয়ার বিষয়েও প্রশ্ন তোলেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আগেকার দিনে কত জনের সার্টিফিকেট ছিল? তখনকার বাবা-মায়ের জন্মের কাগজ আপনি পাবেন কোথা থেকে? আমার মায়ের জন্মকার্ড যদি চান, আমি দিতে পারব না। কারণ, তিনি বাড়িতে ডেলিভারিতে জন্মেছিলেন। নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহ দেখাতে পারবেন? ও সব তো লুকিয়ে ডুপ্লিকেট দেখাচ্ছে।’ বিজেপিকে কটাক্ষ করে মমতা বলেন, ‘আমরা ডুপ্লিকেট বানাব না। বড়দিন আসছে, আমরা কেক বানাব। সেই কেক খেয়ে তোমাদের হজম করব।’
ভোটার তালিকা সংশোধনের কারণে আত্মহত্যার অভিযোগের প্রসঙ্গ টেনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ধরুন বাংলায় নাম একতা। ইংরেজিতে কেউ এ লেখে, কেউ ই লেখে। সেটা দেখেও নাম কেটে দেওয়া হয়েছে। এর জন্য তো মানুষকে আত্মহত্যা করতে হল। এর দায় কার? নির্বাচন কমিশন ৪৬ জন লোকের প্রাণ নিয়েছো।’ বিএলও-দের দোষ নয় বলেও স্পষ্ট করেন তিনি।
ডিলিমিটেশন ও ম্যাপিং নিয়েও গুরুতর অভিযোগ তোলেন মমতা। তাঁর বক্তব্য, ‘২০০২ সালের পরে ডিলিমিটেশন হয়েছিল। তার ফলে এক ভোটার এক নির্বাচনী ক্ষেত্র থেকে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। আগে ভবানীপুর ছিল আলিপুরে, এখন আলাদা। সব বিধানসভায় এমন হয়েছে। আপনাদের ম্যাপিংটাই ভুল। এটা গ্রেট ব্লান্ডার।’
কলকাতার প্রশাসনিক কাঠামো বদলের প্রসঙ্গ তুলে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আগে ১০০টি ওয়ার্ড ছিল, এখন ১৪৪টি। ২০০৯ সালে ডিলিমিটেশন হয়েছিল। নির্বাচন কমিশন কি এক বারও ভেবেছে? বিএলও-দের প্রশিক্ষণ না দিয়ে গালাগালি দেওয়া হচ্ছে। পুরোটাই অপরিকল্পিত।’
বিজেপি ও নির্বাচন কমিশনের আঁতাতের অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘আরও দেড় কোটি নাম বাদ দিতে হবে— বিজেপির আবদার। নানান চালাকি চলছে। চালাকির দ্বারা মহৎ কাজ হয় না।’ শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে কড়া বার্তা দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘১০০ দিনের কাজ বন্ধ করে বাংলাকে জব্দ করবে? বাংলাকে জব্দ করার আগে তোমাদের স্তব্ধ করব।’
Advertisement



