বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে বন্ধুত্ব বৃদ্ধি নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করলেন হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি বলেছেন, দুই দেশের সখ্যতা বাড়লে তা ভারতের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। সজীবের দাবি, আওয়ামী লীগের সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ভারতের পূর্ব সীমান্ত সব ধরনের সন্ত্রাসবাদী তৎপরতা থেকে সুরক্ষিত ছিল। কিন্তু বর্তমানে ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই সুরক্ষা আবার বিপন্ন হতে পারে বলে তিনি মনে করছেন।
প্রসঙ্গত, আমেরিকাবাসী সজীব ওয়াজেদ জয় সম্প্রতি ইমেলের মাধ্যমে সংবাদমাধ্যমকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার সেই সাক্ষাৎকার প্রকাশিত হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিরাপত্তা এবং ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে খোলাখুলি কথা বলেছেন সজীব। জয়ের বক্তব্য, পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের ঘনিষ্ঠতা বৃদ্ধি পাওয়া ভারতের পক্ষে চিন্তার বিষয়।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘আমাদের আওয়ামী লীগ সরকার থাকাকালীন ভারতের পূর্ব সীমান্তে কোনও জঙ্গি কার্যকলাপের সুযোগ দেওয়া হয়নি। তার আগে কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করা হত। বর্তমান সরকারের সময়ে সেই পরিস্থিতি আবার ফিরে আসতে পারে।’
Advertisement
সজীব বাংলাদেশের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। হাসিনা পুত্রের দাবি, ‘বাংলাদেশে ইতিমধ্যেই জঙ্গি প্রশিক্ষণ শিবির গড়ে উঠেছে। আল-কায়েদার সদস্যরা সেখানে সক্রিয় রয়েছে। পাকিস্তানের লশকর-এ-তৈবার কমান্ডাররা প্রকাশ্যে বক্তব্য রাখছে। এর ফলে ভারতের জন্য তাৎক্ষণিকভাবে ও প্রকৃত হুমকির পরিবেশ তৈরি হয়েছে।’
বাংলাদেশে গণতন্ত্র ফেরানো নিয়েও ভারতের ভূমিকা প্রসঙ্গে জয় বলেন, ‘বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু গণতন্ত্র ফেরাতে আন্তর্জাতিক মহলকে সক্রিয় করার ক্ষেত্রে ভারতের আরও বড় ভূমিকা নেওয়া উচিত। দেশের সবচেয়ে বড় দল আওয়ামী লীগ এবং তৃতীয় বৃহত্তম দল জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের বাইরে রাখার মানে দেশের অর্ধেক ভোটারকে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত করা। এতে নির্বাচনের বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট হবে।’
সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ প্রসঙ্গেও মুখ খোলেন জয়। তিনি বলেন, ‘প্রত্যর্পণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনি প্রক্রিয়া মানা প্রয়োজন। বাংলাদেশে সেই প্রক্রিয়া মানা হয়নি। এমনকি আমার মাকে নিজের আইনজীবী নিয়োগের সুযোগও দেওয়া হয়নি। তাই ভারতের পক্ষ থেকে কোনও পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয় বলেই আমি মনে করি।’
প্রসঙ্গত, আগামী বছর বাংলাদেশে নির্বাচন হওয়ার কথা। হাসিনা সরকারের পতনের পর এই নির্বাচন দেশের রাজনীতিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে বর্তমানে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ। নির্বাচন কমিশনও ইঙ্গিত দিয়েছে, নিষেধাজ্ঞা থাকলে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়।
এর মধ্যেই ভারতের বিদেশ মন্ত্রক এক বিবৃতিতে জানায়, ভারত সবসময় বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ, অবাধ, সুষ্ঠু ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচনের পক্ষে। ভারতের পক্ষ থেকে আশা প্রকাশ করা হয়েছে, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার আইনশৃঙ্খলা বজায় রেখে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করবে।
এই বিবৃতির পর বুধবার ভারতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনারকে তলব করে কেন্দ্র। তার পরেই বাংলাদেশের বিদেশ উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন পাল্টা প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশে নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে আমরা প্রতিবেশীদের উপদেশ চাই না।’ তাঁর মন্তব্য, ভারতের এই অবস্থান একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতা হাসনাত আবদুল্লার মন্তব্য নিয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এক সভায় তিনি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা ‘সেভেন সিস্টার্স’কে আলাদা করার কথা বলেন এবং বিচ্ছিন্নতাবাদীদের আশ্রয় দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। এই মন্তব্যও ভারতের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
Advertisement



