• facebook
  • twitter
Wednesday, 17 December, 2025

টাপুর টুপুর

পয়লা জুলাই বিকেলেই বেরোয় জুঁই। বেশ সাজুগুজু করেই হাজির। দু’জনের উপহার নিয়ে যায় দুটি সুন্দর ওয়াটার-বটল। দুটির ব্র্যান্ড একই, কিন্তু রঙ আলাদা।

কাল্পনিক চিত্র

অমিয় আদক

 

Advertisement

জুঁই ক্লাস থ্রির ছাত্রী। বেচারা বেজায় বিপাকে। বারবার ঠকছে। তাই তার খানিক মনমরা অবস্থা। নিজের এই সমস্যার কথা লজ্জায় কাউকে বলতেও পারছে না। পাছে কেউ তাকে বেজায় বোকা ভাবে। সেই ভয়েই নিজেকে খানিক গুটিয়ে রাখে। তার মনখারাপের ব্যাপারটা ঠাম্মি বুঝতে পারেন। সন্ধ্যায় পড়তে বসার আগে, সে ঠাম্মির ঘরে মিনিট পনেরো থাকে। পড়তে বসার আগে ঠাম্মির কাছে গল্প শোনে। ঠাম্মি রোজ বেশ মজার গল্প বলেন। তাতেই তার মন থাকে বেজায় খুশি। তারপরেই তার পড়া তরতরিয়ে এগিয়ে যায়। অথচ তখনও সে গরহাজির।

Advertisement

ঠাম্মি নিজেই তাকে ঘরে ডাকেন। ঠাম্মির ডাক এড়াতে পারে না। মনমরা অবস্থা, মুখমণ্ডলে চিন্তার ছায়া। সেটা ঠাম্মির চোখ এড়ায় না। ঠাম্মি জিজ্ঞাসা করেন, ‘ও জুঁইদিদি, কী জন্যি মনখারাপ? মুখ ভার কেন? হাসিটা কি মায়ের আঁচলে বেঁধে রেখেছো?’
‘হ্যাঁ ঠাম্মি, তুমি ঠিকই ধরেছো। তুমি কী করে বুঝলে, আমার মন খারাপ?’
‘ওই যে তোমার মিষ্টিমুখে সেই মিষ্টি হাসিটাই নেই। কেমন মনমরা লাগছে। তাতেই বুঝি, তোমার মনে কিছু একটা ভাবনার মেঘ জমেছে। কী, আমি ঠিক বলেছি? কী তোমার সমস্যা? আমায় খুলে বলো দেখি।’
‘বলছি, এখুনি বলছি।’
‘ব্যাপারটা বলে মনটাকে হালকা করো। নইলে পড়ায় মন বসাতে পারবে না। শুধু শুধু মায়ের বকুনি জুটবে বরাতে।’

জুঁই তার সমস্যার কথা বলতে শুরু করে। সে বলে, ‘জানো ঠাম্মি, আমাদের ক্লাসে দুই যমজ বোন ভর্তি হয়েছে। তাদের নাম টাপুর আর টুপুর। নামগুলোও যেমন মিষ্টি, তাদের দেখতেও বেশ মিষ্টি। এককথায় তাদের দুই বোনের সব কিছুই মিষ্টি। তাদের কথাগুলোও বেজায় মিষ্টি। যখন হাসে তাদের আরও সুন্দর দেখায়। তারা পোশাক পরে ঠিক একই রকমের। তাদের হেয়ার স্টাইলও একই রকমের। তাদের জুতো, মোজা, ব্যাগ, হেয়ার ব্যান্ড সবকিছুই এক রকম দেখতে। কে টাপুর আর কে টুপুর কিছুতেই বুঝতে পারি না। তারা দুই বোন একই বেঞ্চে পাশাপাশি বসে। তারা দেখতে অতো ভালো, অথচ তারা মোটেই দেমাকি নয়। যখন টাপুর ভেবে একজনকে ডাকি, সে মিষ্টি হেসে জানায়, আমি টাপুর নই। আমি টুপুর। আমি লজ্জায় পড়ি। চিনতে না পারার জন্য। বলি তোমাদের কে টাপুর? আর কে টুপুর? তা কিছুতেই বুঝতে পারি না। তারা দুই বোন খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।

‘হ্যাঁ সত্যিই সমস্যা। আমি ভাবছি কী উপায় বের করা যায়!’
‘প্রায় প্রত্যেক দিন তাদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে টাপুর এবং টুপুর আলাদা করতেই পারিনি। বেজায় ঠকে যাচ্ছি। কীকরে আলাদাভাবে চিনবো? সেটাই তুমি আমাকে একটু শিখিয়ে দাও, ঠাম্মি। আগামি পয়লা জুলাই তাদের জন্মদিন। আমাকে নিমন্ত্রণ করেছে। কীভাবে তাদের চিনবো? সেটাই আমায় বুঝিয়ে দাও। নইলে টাপুরের গিফট যাবে টুপুরের হাতে, টুপুরের গিফট যাবে টাপুরের হাতে। এবার বলো ঠাম্মি, কী করে তাদের আলাদা করবো?’

ঠাম্মি বলেন, ‘জুঁইদি’ভাই, তুমি তাদের মুখ হাতপায়ের খোলা অংশকে খুঁটিয়ে দেখো। কোথাও কোনো কাটা দাগ, তিল বা ছোট জড়ুলের দাগ আছে কিনা খুঁটিয়ে দেখো। কেবল সেটা দিয়েই তাদের সহজেই আলাদা করতে পারবে। ভাবতে হবে না। কিছু না কিছু তফাৎ তুমি খুঁজে পাবেই। এমনকি অনেকের হালকা হাসিতেই গালে টোল পড়ে। সেটাও চেনার পার্থক্য হতে পারে। তাই বেশি ভাবার দরকার নেই। তুমি কিছু না কিছু চেনার চিহ্ন পেয়ে যাবেই। যাও, বেশি না ভেবে গিয়ে পড়তে বসো। নইলে মায়ের কাছে বকুনি খেয়ে আবার মন খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা।’

পরদিন স্কুলফেরত জুঁই ব্যাগটা পড়ার টেবিলে রেখেই পৌঁছয় ঠাম্মির ঘরে। গিয়ে জানায় টাপুরের বাম ভ্রূর ঠিক বামদিকের শেষ প্রান্তে একটা তিল আছে। সেটা খুব সহজে নজরে পড়ে না। খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যায়। ঠাম্মি বলেন, তাহলে একটু মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে নিয়েই নাম ধরে ডাকতে পারবে।

পয়লা জুলাই বিকেলেই বেরোয় জুঁই। বেশ সাজুগুজু করেই হাজির। দু’জনের উপহার নিয়ে যায় দুটি সুন্দর ওয়াটার-বটল। দুটির ব্র্যান্ড একই, কিন্তু রঙ আলাদা। দুটো গিফট একই রঙিন কাগজের মোড়কে ঢাকা। বাইরে থেকে আলাদা করা অসম্ভব। শুধু মোড়কের বাইরে স্কেচ পেন দিয়ে ‘টাপুর’ এবং ‘টুপুর’ ছোট্ট করে লেখা।

যেখানে জন্মদিন পালন হবে, জায়গাটা সুন্দর সাজানো। ‘হ্যাপি বার্থডে টু টাপুর অ্যান্ড টুপুর’ কথাগুলো রঙিন কাগজে লেখা। পিছনের পর্দার উপরে সুন্দর করে কদমফুল এবং ফুল সমেত জুঁইয়ের ছোট-ছোট ডাল দিয়ে সাজানো। তাদের কয়েকজন পারিবারিক আত্মীয়ও হাজির। দুই বোন তাঁদের সঙ্গেও জুঁইয়ের পরিচয় করিয়ে দেয়। এবার কেক কাটার পালা। বেশ হইহুল্লোড় চলে খানিক। জুঁই তার উপহার নিয়ে এগোয়। দুই বোনের মুখের দিকে আগেই খেয়াল রেখেছে। টাপুরের ভ্রূতে তিল চিহ্নটা খুঁজে সে পেয়েছে। তাই টাপুরের হাতেই আগে উপহার তুলে দেয়। তারপর দেয় টুপুরের হাতে। এবার হালকা হাসির সঙ্গে জুঁই বলে, ‘কী, এবার নিশ্চয় তোমাদের চিনতে ভুল করিনি?’ টুপুর জিজ্ঞাসা করে, ‘কীভাবে আমাদের আলাদা করে চিনলে, জুঁই?’

মিষ্টি হাসির সঙ্গে জুঁই জানায়, ‘এখন বলবো না। পরে জানাবো, কীভাবে চিনতে পেরেছি?’ টাপুর বলে, তাই জানিও। অন্যান্য বন্ধুদের সঙ্গে দুই বোন এবং জুঁই খাবার টেবিলে। সেখানেই জুঁই ব্যাপারটা খোলসা করে বলে।

Advertisement