রণজিৎ দাস
বাংলা দল গত মরশুমে সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ান হয়েছে। চ্যাম্পিয়ান বাংলা দলের ফুটবলারদের রাজ্য সরকার ‘সরকারি চাকরি’ দিয়েছেন। এবছর সন্তোষ ট্রফি দলে সুযোগ পেতে তাই বাংলার তিন প্রধানের ফুটবলারদের মধ্যে অতিরিক্ত চাহিদা হয়েছে। যদিওবা,সন্তোষ ট্রফির জন্য বাংলার দলগঠনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ প্রতিবার থেকে যায়। বাংলা দল ব্যর্থ হলে এই অভিযোগ নিয়ে শোরগোল বেশি হয়। সন্তোষ ট্রফিতে এখন তিন প্রধানের ফুটবলার সাধারণতঃ থাকেনা। তারা আইএসএল ও আইলিগে খেলে থাকে। তবে তাদের রির্জাভ টিমের প্লেয়াররা সন্তোষ ট্রফিতে কম সংখ্যায় ডাক পায়।ফলে কলকাতা প্রিমিয়ার লিগের তথাকথিত ছোট দলের ফুটবলাররা বাংলা দলে বেশি সুযোগ পায়।
Advertisement
এই ছোট দলের খেলোয়াড়দের বেশি সংখ্যায় সুযোগ এসে যাওয়াতে, পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের মান্যতা পেয়ে যাচ্ছিল। এই মরশুমে পরিস্থিতি বদলে গেছে। ভারতীয় ফুটবলের অচলাবস্থায় আইএসএল ও আইলিগের ফুটবলারদের মধ্যে সন্তোষ ট্রফিতে খেলার ঝোঁক বাংলায় দেখা যাচ্ছে।
২ বছর আগে বাংলার দলগঠনে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের ভিত্তিতে আইএফএ তিন প্রাক্তন ফুটবলারকে নিয়ে তদন্ত কমিটি গড়তে বাধ্য হয়েছিল। প্রাক্তন ফুটবলার ও কোচ মনোরঞ্জন ভট্রাচার্য, সঞ্জয় সেন ও দেবজিৎ ঘোষকে নিয়ে এই কমিটি তৈরি হয়েছিল। তাদের তদন্ত রিপোর্ট সম্পর্কে পরবর্তী সময়ে কিছুই জানা যায়নি। কোচ সঞ্জয় সেন এখন নিজেই বাংলা দলের কোচ হয়েছেন। প্রথমবার দায়িত্ব পেয়েই চ্যাম্পিয়ান হয়ে যাওয়াতে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হয়নি।
কোভিড পরবর্তী বিগত ৪ বছরের সন্তোষ ট্রফিতে যেসকল ফুটবলার বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছে, তারা পরবর্তী সময়ে খেলার জন্য কোন পর্যায়ে কেমন সুযোগ পেল?
Advertisement
২০২৪-২৫ মরশুমে বাংলা দল সন্তোষ ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ান হয়। কোচ সঞ্জয় সেন কলকাতা লিগে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্স দেখে তার টিমের জন্য তাদের প্রাথমিক ভাবে চয়েস করেছিলেন।
সাধারণতঃ কলকাতা লিগের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই বাংলা দল বাছাই করা হয়। ২০২৩-২৪ মরশুমের কলকাতা লিগের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতেই গতবারের চ্যাম্পিয়ান বাংলা দলগঠন হয়েছিল। এই চ্যাম্পিয়ান বাংলা দলের খেলোয়াড়রা এই মরশুমের প্রিমিয়ার ডিভিশনে নিজ দলের হয়ে গ্রুপ স্টেজে প্রত্যেকে অন্ততঃ ১২টা করে ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিল।
১২টা ম্যাচে, বাংলা দলের ২৪জনের মধ্যে ১৩ জন ফুটবলার তাদের নিজেদের দলের হয়ে অর্ধেক ম্যাচেও প্রথম একাদশে থাকেনি।কলকাতা লিগের গুরুত্বের বিচারে যা ভয়ানক করুণ চিত্র।
যে ২৪ জন ফুটবলার সন্তোষ ট্রফি জিতলো, তাদের মধ্যে ৭জন ফুটবলার মাত্র ২বছরে (২০২৪ ও ২০২৫) অন্ততঃ ১৫টা বা তার বেশি ম্যাচ, তাদের নিজ দলের প্রথম একাদশে ছিল। দুবছরে মাত্র গড়ে ১৫টা ম্যাচে সুযোগ পাওয়া— খুবই খারাপ ম্যাচ সংখ্যা। বাকি ১৭ জন ফুটবলারের চিত্র বিশ্লেষণে বড্ড করুণ অবস্থা হয়েছে।
কলকাতা লিগে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সে সন্তোষ ট্রফি দলে সুযোগ পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু চ্যাম্পিয়ান হওয়ার পর বাঙালি ফুটবলারদের তিন প্রধানের মেইন দলে খেলার সুযোগ হচ্ছেনা। সন্তোষ ট্রফিতে সাধারণতঃ কলকাতা লিগের খেলোয়াড়দের নিয়েই বাংলা দল গড়া হয়। এবং প্রধানতঃ প্রিমিয়ার ডিভিশনে খেলা প্লেয়ারদের নিয়েই টিম গড়া হয়।
কোভিড পরবর্তী ৪ বছরে (২০২২-২০২৫) বাংলা দলে ইউনাইটেড স্পোর্টস থেকে অন্ততঃ ১২জন খেলোয়াড়রা বাংলা দলে সুযোগ পেয়েছে।
এই খেলোয়াড়রা তিন প্রধানের হয়ে আইএসএলে খেলার উপযুক্ত হিসেবে বিবেচিত হয়না কেন? বাংলা দল জাতীয় পর্যায়ে সাফল্য পায়। বিগত ৪বছরের বাংলা দলের সদস্যদের ৭০% সরকারি চাকরি পেয়ে গেছে।
কিন্তু ভারতীয় দল দূরের কথা। বাংলার তিনপ্রধানে বাঙালি ছেলে কোথায়? ডুরান্ড কাপ,আইএফএ শিল্ড ও সুপার কাপের খেলা হয়ে গেল। কলকাতা লিগ ছাড়া,ইস্টবেঙ্গল ও মোহনবাগানের মধ্যে তিনটে ডার্বি হয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের প্রথম একাদশে একজন বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পায়নি।
মোহনবাগানে মাত্র ১ জন বাঙালি ফুটবলার সুযোগ পেয়েছে।দুই দলের ৪২জন ফুটবলারের মধ্যে মাত্র ৫ জন করে ফুটবলার গড়ে স্কোয়াডে সুযোগ পেয়েছে। ইস্টবেঙ্গলের সায়ন ব্যানার্জি ও মোহনবাগানের দীপেন্দু বিশ্বাস ছাড়া উল্লেখযোগ্য নাম নেই। বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ী বাংলা দলের অধিনায়ক চাক্কু মান্ডি,তার ইস্টবেঙ্গল দলের মেইন টিমে সুযোগ পাচ্ছেন না।
বাঙালি ফুটবলারদের বড়দলে যদি এই হাল হয়। তবে বাংলার সন্তোষ ট্রফি জয়ের প্রাসঙ্গিকতা কি থাকছে? সন্তোষ ট্রফির সাফল্যের পরেও এমন শূন্যতা কেন?
Advertisement



