গাজিয়াবাদে অবস্থিত একটি ট্রাস্ট ত্রিপুরায় একটি ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনার জন্য বিজেপি পরিচালিত রাজ্য সরকারের অনুমোদন পেয়েছে। ট্রাস্ট এবং এর প্রমোটাররা বিজেপির তহবিলে এর জন্য বড় পরিমাণ অর্থ অর্থাৎ প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। ‘নিউজ পোর্টাল রিপোর্টার্স কালেকটিভ’-এর একটি অন্তর্তদন্তমূলক প্রতিবেদনে এই তথ্য উঠে এসেছে।
গত বছর অক্টোবর মাসে বেশ কিছু প্রতিবাদী ছাত্র নতুন প্রতিষ্ঠিত ওই ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয়ে জমায়েত হন। ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ‘আর্যভারত ইন্টারন্যাশনাল ইনউনিভার্সিটি’। বিশ্ববিদ্যালয়টির অবস্থান এবং ক্যাম্পাসের পরিবেশ, উভয়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না হওয়ায় পড়ুয়ারা এই নিয়ে সন্দিহান ছিলেন।
Advertisement
বিশ্ববিদ্যালয়টি ত্রিপুরার রাজধানী আগরতলা থেকে প্রায় ১৫৩ কিলোমিটার দূরে উত্তর ত্রিপুরার তিলথৈ গ্রামে অবস্থিত। ধুলো ভরা ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে সেখানে পৌঁছতে হয়। সম্প্রতি পরিষ্কার করা প্রায় ১৮ হাজার বর্গমিটারের বেশি জমিতে গাছগাছালির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাম্পাস। গুগল ম্যাপের স্যাটেলাইটটিতে দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ২,৪০০ বর্গমিটার দ্বিতল ভবন রয়েছে। অতি সাধারণ ক্যাম্পাসটি কোনোভাবেই ‘আন্তর্জাতিক’ মাপকাঠির প্রতিচ্ছবি দেয় না।
Advertisement
ছাত্ররা চ্যান্সেলর গুঞ্জন বনসল এবং প্রো-চ্যান্সেলর দীপক বনসলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদনের চিঠি দেখাতে বলেন। তাঁরা জানতে চান বিশ্ববিদ্যালয়টি, যা ২০২৩ সালে খোলা হয়েছে, তা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) থেকে বাধ্যতামূলক অনুমোদন পেয়েছে কিনা? এই প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করে।
রাজ্যস্তরের ব্যক্তিগত বিশ্ববিদ্যালয় কেবল তখনই প্রতিষ্ঠা করা যায় যখন রাজ্য বিধানসভায় একটি বিশেষ আইন পাশ করে তার অনুমোদন দেওয়া হয়। বাস্তবে, এর জন্য প্রয়োজন রাজ্য সরকার এবং ক্ষমতাসীন দলের সমর্থন। আর্যভারত ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির প্রমোটাররা মানিক সাহার নেতৃত্বাধীন বিজেপি রাজ্য সরকারের আশীর্বাদ নিয়ে ২০২৩ সালে বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জন্য আইন পাশ করিয়েছেন। তাই বিশ্ববিদ্যালয় তার সব প্রচারমূলক উপকরণে সরকারি বৈধতা প্রদর্শনের উপর জোর দিয়েছে।
‘রিপোর্টার্স কালেকটিভ’ জানিয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়াদের কাছে এবং প্রচারমূলক উপকরণে যে কথাটি গোপন করেছে, তা হলো ওই একই সময়ে প্রমোটাররা বিজেপিকে ৫০ লক্ষ টাকা দিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়কে স্পনসর করা ‘আর্য সোশাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ বিজেপিকে দিয়েছিল ৩০ লক্ষ টাকা। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান রামনকুমার রোশন এবং চ্যান্সেলর গুঞ্জল বনসল ২০২২-২৩ অর্থ বছরে ১০ লক্ষ টাকা করে দিয়েছেন বিজেপি তহবিলে। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালেই ত্রিপুরা বিধানসভার নির্বাচন হয় এবং যেখানে জলের মতো টাকা ঢেলেছিল বিজেপি।
‘আর্য সোশাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এর স্থায়ী ঠিকানা হলো: বি-৩/৬৬, দ্বিতীয় তল, বিহারিনগর, নবযুগ মার্কেট, গাজিয়াবাদ। বিহারি নগরের দু’টি রাস্তা মূলত আবাসিক এলাকা। ট্রাস্টের নিবন্ধিত ঠিকানাটি একটি দুই বেড রুমের ফ্ল্যাট। বড় সাইনবোর্ডে লেখা রয়েছে ট্রাস্টের নাম। ওই ফ্ল্যাটে একটি ছয় জনের পরিবার বাস করে। তাঁরা তিন বছর ধরে এখানে ভাড়ায় থাকেন। তাঁরা পরিষ্কার জানিয়েছেন, ‘আমরা আর্য সোশ্যাল চ্যারিটেবল ট্রাস্ট সম্পর্কে কিছু জানি না এবং বাড়ির মালিকের সঙ্গেও পরিচিত নই।’ ট্রাস্টের নিয়ন্ত্রক রেকর্ড অনুসন্ধান করে রিপোর্টার্স কালেক্টিভ জানিয়েছে, ট্রাস্টটি ৩০ জুলাই ২০১৫ সালে নিবন্ধিত হয়ে গুঞ্জন বনসাল ও রামনকুমার রোশনকে ট্রাস্টি করে।
গাজিয়াবাদের একটি ডবল বেড রুমের ফ্ল্যাটে অবস্থিত একটি ট্রাস্ট ত্রিপুরার একটি বিশ্ববিদ্যালয় কীভাবে গড়ে তুলল এবং ২০২৩ সালের মধ্যে ত্রিপুরার বিজেপি নেতাদের সঙ্গে এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলল, সেই প্রশ্ন তুলেছে রিপোর্টার্স কালেকটিভ।
Advertisement



