সীমান্তবর্তী জেলা কোচবিহারে দু’দিনের সফরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেখানে সোমবার বিকেলে প্রশাসনিক সভা করেন মুখ্যমন্ত্রী। সভা থেকে পুলিশকে আরও সক্রিয় হওয়ার বার্তা দেন মমতা। রাজ্য পুলিশকে আরও সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, ‘কোচবিহার জেলা সীমান্ত জেলা। আইনশৃঙ্খলা ভালোভাবে দেখে রাখতে হবে। বর্ডার এলাকায় অযথা কোনও হস্তক্ষেপ মানা যাবে না।‘ এলাকায় আইনশৃঙ্খলা এবং শান্তি বজায় রাখতে হবে বলেও নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর।
এদিন সভায় বীরভূমের অন্তঃসত্ত্বা সোনালি বিবির প্রসঙ্গ তোলেন মমতা। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এই যে বাংলার গর্ভবতী মাকে নিয়ে এলাম। তার পরিবারের চারজন এখনও ওখানে আছে। তারা ভারতের নাগরিক। কাগজপত্র আছে, তা সত্ত্বেও বিএসএফ তাঁদের জোর করে পুশব্যাক করেছে।‘ রাজ্য পুলিশের চোখের সামনে দিয়ে বিএসএফ কী করে তাঁকে বাংলাদেশে ঠেলে দিয়েছে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধান। ‘রাজ্যের যাঁরা অফিসার আছেন তাঁদের হলে চলবে না। মারপিট করতে বলছি না, খুন খারাপি করতে বলছি না! তবে আরও সক্রিয় হন।‘
Advertisement
এরপরই রাজ্য পুলিশকে ‘সাহসী’ হওয়ার পরামর্শ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলায় কথা বললেই সবাইকে বাংলাদেশি তকমা দাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে। লোকাল পুলিশরা কী করছেন? আপনাদের হাতের নাগাল থেকে কী করে নিয়ে যাচ্ছে? নাকাচেকিংটা ঠিকমতো করুন। সীমান্ত দিয়ে প্রচুর লেনদেন ইধার-উধার হচ্ছে।‘এই প্রসঙ্গে নাম করে বিজেপিকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘যাঁরা বেশি সমালোচনা করেন, তাঁরাই এটা খেয়ে যায়! আর দোষ হয় অন্য লোকের। সব পাখি মাছ খায়, দোষ হয় মাছরাঙার!’
Advertisement
এরপরই রাজ্য পুলিশের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘অসম সরকারের কোনও অধিকার নেই বাংলার লোককে চিঠি পাঠানোর। আর পুলিশকেও আমার বলা থাকল, অন্য রাজ্য থেকে এসে আমার রাজ্যের লোককে যেন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যেতে না পারে। এটা দেখার দায়িত্ব আপনাদের।‘
এ ব্যাপারে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘কোনও ক্রিমিনালকে অ্যারেস্ট করতে হলে স্টেট গর্ভমেন্টের সঙ্গে কথা বলুন। আমরা নিশ্চয়ই ক্রিমিনালদের অ্যালাউ করব না। সাধারণ মানুষ আর ক্রিমিনাল এক নয়। কাউকে ক্রিমিনাল দাগিয়ে দেওয়ার আগে দেখতে হবে যে সে ক্রিমিনাল কি না।‘
ভিন রাজ্যের পুলিশ স্রেফ অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে তুলে নিয়ে যেতে পারে না। বরং কাউকে বাংলা থেকে নিয়ে যেতে হলে রাজ্যের পুলিশের কাছে যথাযথ নথিও দাখিল করতে হবে। রাজ্য প্রশাসনের এক শীর্ষ কর্তার কথায়, মুখ্যমন্ত্রী এদিন যা বলেছেন, সেটাই নিয়ম। তবে সোনালি বিবিদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানেনি বিএসএফ।
সীমান্ত এলাকায় এই ধরনের ঘটনা আকছার ঘটে বলে অভিযোগ। আর কিছু ক্ষেত্রে স্থানীয় থানার পুলিশের বিরুদ্ধে নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগও রয়েছে। এদিনের প্রশাসনিক সভা থেকে রাজ্য পুলিশকে তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে মনে করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মত ওয়াকিবহাল মহলের। কোচবিহার জেলায় প্রচুর রাজবংশী, কামতাপুরী সহ সংখ্যালঘুদের বসবাস। তাঁদের বরাভয় দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, চিন্তা করবেন না। আমি থাকতে বন্দিশিবির করতে দেব না। আমরা চাই মানুষ তাঁর মর্যাদা নিয়ে সম্মান নিয়ে বাঁচুক।
এদিন কোচবিহারের প্রশাসিকসভা থেকে ফের একবার এসআইআর ইস্যুতে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি বিএলও এবং বিএলএদের যে অসহ্য কাজের চাপ যাচ্ছে, তা নিয়েও সরব হন। এরপরেও রাজ্যে উন্নয়নের কাজ না বন্ধ হয়, তা আরও একবার রাজ্যের আধিকারিকদের মনে করিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
Advertisement



