পুনরায় সামনে এল কেন্দ্রের ‘বাংলা-বিরোধি’ মনোভাবের অভিযোগ। সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের লোকসভা সংসদীয় দলের নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রশ্নের জবাবে কেন্দ্র নিজেই স্বীকার করে নিল—পশ্চিমবঙ্গের পাওয়ার সেক্টরে বরাদ্দকৃত অর্থে ভয়াবহ কাটছাঁট করা হয়েছে। ‘রিভ্যাম্পড ডিস্ট্রিবিউশন সেক্টর স্কিম’ (আরডিএসএস)-এর আওতায় ২০২৪–২৫ অর্থবর্ষে যেখানে রাজ্য পেয়েছিল ৬০১ কোটি টাকা, সেখানে চলতি অর্থবর্ষ ২০২৫–২৬-এ ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লি বরাদ্দ করেছে মাত্র ৪৯ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগের বছরের তুলনায় বরাদ্দ প্রায় ৯২ শতাংশ কমানো হয়েছে—যা এক নজিরবিহীন ঘটনা।
লোকসভায় দেওয়া জবাবে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী শ্রিপাদ নায়ক নিজেই এ তথ্য প্রকাশ করেছেন। এই বিশাল কাটছাঁট বিশেষভাবে গভীর প্রশ্ন তুলেছে, কারণ একই প্রকল্পের আওতায় বিজেপি-শাসিত একাধিক রাজ্যকে বরাদ্দ করা হয়েছে কয়েকশো কোটি টাকা। ছত্তীসগড়, গুজরাত, হরিয়ানা—সবক’টি রাজ্যই ২০২৫–২৬ অর্থবর্ষে পাওয়ার সেক্টরে বিপুল অর্থসাহায্য পেয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ বরাদ্দ গিয়েছে মধ্যপ্রদেশে—১,২৩৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ রাজনৈতিক আনুগত্য থাকা রাজ্যগুলিকে বিপুল সহায়তা, আর বাংলা মতো বিরোধী-শাসিত রাজ্যকে কার্যত বঞ্চিত করা—এই অভিযোগ আরও জোরদার হল।
রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে—একই প্রকল্পে বাংলার মতো একটি বড় রাজ্যের বরাদ্দ এত কমানোর কারণ কী? ঠিক কোন যুক্তিতে আগের বছরের তুলনায় এত বিশাল অঙ্ক কমিয়ে দেওয়া হল? তৃণমূলের মতে, এর নেপথ্যে একটাই কারণ—রাজনৈতিক প্রতিশোধ। ক্ষমতার অপব্যবহার করে কেন্দ্র বাংলার উন্নয়নতেও রাশ টেনে ধরতে চাইছে বলে দাবি দলের।
তৃণমূল সাংসদরা পার্লামেন্টের ভিতরে ও বাইরে লাগাতার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, এটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং বাংলার প্রাপ্য বঞ্চনার ধারাবাহিকতা। তারা দাবি করছেন, কেন্দ্রের বৈষম্যমূলক আচরণকে দেশবাসীর সামনে তুলে ধরা হবে এবং বাংলার প্রতি এই ‘অন্যায়’ মেনে নেওয়া হবে না।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও একাধিকবার প্রকাশ্যে বলেছেন—দিল্লির ‘জমিদাররা’ বাংলাকে দমিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করছে। তাঁর কথায়, কেন্দ্রের এই আচরণ রাজ্যের মানুষের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে বাংলার মানুষ গণতান্ত্রিক পথেই এর জবাব দেবেন। ‘‘বাংলা তাদের অত্যাচারের সামনে মাথা নত করবে না,’’ মন্তব্য তাঁর।