পূর্ব প্রকাশিতর পর
তাহাতে দেখা গেল নিপীড়িত মানুষের প্রতি নিবিড় দরদ তরুণ সৈনিকদিগের হৃদয়েই সবচেয়ে বেশি।
১৯১৫ সালের ২২শে মার্চ বার্লিন হইতে আইনস্টাইনের একটি মহৎ বাণী আসিলঃ
‘‘পরস্পরকে ভুল বুঝিবার বেদনাময় পরিণতি স্বরূপ ফরাসী ও জার্মান জাতির মধ্যে যে গভীর বিভেদের সৃষ্টি হইয়াছে তাহা দূর করিবার জন্য আপনি যেরূপ দুঃসাহসিকতার সহিত আপনার মত ব্যক্ত করিতেছেন— সংবাদপত্র হইতে তাহার কিছুকিছু আমি জানিতে পারিয়াছি। আপনি আমার গভীর শ্রদ্ধা ও সহানুভূতি গ্রহণ করুন। যাহাদের দেহ ও মস্তিষ্ক সুস্থ ও স্বাভাবিক ছিল তাহারা যে কেমন করিয়া এতখানি অন্ধ ও উন্মাদ হইয়া উঠিল তাহা আমি কিছুতেই বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছি না।
Advertisement
আশা করি, আপনার দৃষ্টান্তে অনেকেই এই বিকারের ঘোর কাটাইয়া উঠিতে পারিবে। এ যেন এক সাংঘাতিক ব্যাধি। ইউরোপে গত তিন শতাব্দী ধরিয়া সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবিশ্রান্তভাবে যে বিপুল কাজ চলিয়াছে তাহার ফলে কি কেবল ধর্মান্ধতা অবসৃত হইয়া তাহার আসনে অন্ধ জাতিয়তাবাদ অভিসিক্ত হইয়াছে? ভবিষ্যৎ যুগ কেমন করিয়া আমাদের এই ইউরোপকে শ্রদ্ধা করিবে? বিভিন্ন দেশের বৈজ্ঞানিকেরাও দেখিতেছি তাহাদের বিশ্বাস ত্যাগ করিতেছেন, যেন গত আটমাস তাহারা কবন্ধ জীবন যাপন করিতেছেন। আমি আমার সামান্য শক্তি আপনার হাতে তুলিয়া দিতেছি। আমার পদমর্যাদার কথা অথবা জার্মান ও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠানের সদস্যদের সহিত আমার সম্পর্কের কথা বিবেচনা করিয়া আপনি যদি মনে করেন আমি কোনোরূপ কাজে লাগিতে পারি তবে আমাকে কাজে লাগাইবেন।’’
Advertisement
আরো একটি ঘটনা ঘটিল। তাহার গুরুত্বও কম নহে। ১৯১৫ সালের জানুয়ারী মাসের শেষ দিকে সোভিয়েট রিপাবলিকের ভবিষ্যৎ শিক্ষামন্ত্রী আনাতোল লুনাচার্স্কী আমার সহিত দেখা করিতে আসিলেন। ইনি আমার নিকট আসিলেন যেন ভবিষ্যতের দূত হিসাবে, আসিলেন ভবিষ্যৎ রুশ বিপ্লবের অগ্রিম বার্তা বহন করিয়া। তিনি আমাকে জানাইলেন, যুদ্ধের পরে রাশিয়ায় বিপ্লব ঘটিবে। কথাটি এমন সহজভাবে ও আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি বলিলেন যে, মনে হইল সব যেন পূর্ব হইতেই ঠিক হইয়া আছে।
আমি বুঝিতে পারিলাম আমার পায়ের নিচে এক নূতন ইউরোপের, এক নূতন সমাজের সৃষ্টি হইতেছে। সেই নূতন জগতের স্পর্শ অনুভব করিয়া আমি আস্বস্ত বোধ করিলাম। ১৯১৪ সালের ২৬শে নভেম্বর আমি আমার এক জার্মান বন্ধুকে লিখিলাম (এই বন্ধুটি যুদ্ধের প্রকৃত কারণ স্বীকার করিতে চাহেন নাই)ঃ
‘‘মিথ্যা মোহজালে নিজেকে আর জড়াইয়া রাখিবেন না। মুক্তির একটি মাত্র পথ আছেঃ পিতৃভূমির মতবাদ পরিহার করা। সভ্যতাকে যিনি বাঁচাইতে চাহিবেন তাহাকে নিষ্ঠুরভাবে এই মোহবন্ধন ছিন্ন করিতেহইবে।’’গ্র্যাব্রিয়েল সাইলেসের সহিত দৃঢ় অথচ সৌজন্যপূর্ণ এক বিতর্ক প্রসঙ্গে আমি লিখিলামঃ
‘‘বহু পরস্পরবিরোধী মতবাদের হানাহানির মধ্যে আমাদের ক্ষণভঙ্গুর মন বিদীর্ণ হইয়া যাইতেছে।
(ক্রমশ)
Advertisement



