• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বারাসত মেডিক্যাল কলেজে বেনিয়ম ও দালালরাজের অভিযোগ

২ বছরেও মিলছে না জন্ম শংসাপত্র

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

চোখ-কাণ্ডের পর বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বেহাল চিত্র যেন আরও একবার সামনে চলে আসল। এতদিন যাঁরা মুখ খুলতে সাহস পাননি, তাঁরাই এখন একের পর এক অভিযোগ তুলে ধরছেন চিকিৎসা পরিষেবা, দালালরাজ ও আর্থিক অনিয়ম নিয়ে। স্থানীয়দের কথায়, চোখ-কাণ্ডের জেরে মানুষের চাপা ক্ষোভের আগুন যেন এবার বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। বিভিন্ন অনিয়ম নিয়ে সবাই মুখ খুলতে শুরু করেছেন।

প্রসঙ্গত, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা সদর এই হাসপাতালের চিকিৎসা পরিষেবার মান নিয়ে প্রশ্ন নতুন নয়। দু’বছর আগে জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত হওয়ার পর লক্ষ-কোটি টাকা খরচ করে পরিকাঠামো গড়ে ওঠে। আধুনিক যন্ত্রপাতি, নায্যমূল্যের ওষুধের দোকান, ব্লাড ব্যাংক, চব্বিশ ঘণ্টার গর্ভবতী মহিলাদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা— সব কিছু থাকা সত্ত্বেও রোগীর হয়রানির অভিযোগ থামছে না। অতিরিক্ত টাকা দাবি এবং দালালদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে।

Advertisement

রবিবার হাসপাতালে বিজেপি নেতা রুদ্রনীল ঘোষের কর্মসূচির সময়েই তা বিস্ফোরণের রূপ নেয়। সেই সময় বারাসত নবপল্লীর বাসিন্দা কাঞ্চন বিশ্বাসের অভিযোগ সামনে আসে। তাঁর কথায়, এখানে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তাঁর সন্তানের জন্ম হয়। তিনি দীর্ঘ দুই বছর ধরে দপ্তরে দপ্তরে ঘুরে বেড়িয়েছেন। তবু আজও সন্তানের বার্থ সার্টিফিকেট পাননি। প্রশ্ন উঠছে, সরকারি হাসপাতাল যদি পরিষেবাই না দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কোথায় যাবে?

Advertisement

হাসপাতাল চত্বরে উপস্থিত অন্যান্য রোগীর পরিবারও অভিযোগ তুলেছেন, ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকান থাকলেও বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনা হচ্ছে। হাসপাতালের পরীক্ষার যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে বেসরকারি সংস্থায় পরীক্ষার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। গর্ভবতী মহিলাদের পরিবারকে ‘নিশ্চয়’ অ্যাম্বুলেন্সে নাকি অতিরিক্ত টাকা দিতে হচ্ছে। এমনকি মর্গেও একাধিক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। মৃতদেহের চোখ উধাও হওয়ার ঘটনা তারই একটি অন্যতম উদাহরণ। ইতিমধ্যেই বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ মানতে নারাজ। বারাসত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের এমএসভিপি অভিজিৎ সাহা বলেন, হাসপাতালের সমস্ত পরিষেবাই বিনামূল্যে। বার্থ সার্টিফিকেটের অভিযোগ পুরোপুরি ঠিক নয়। পুরনো পেন্ডিং নথি নিয়ম মেনে আপলোডের কাজ চলছে। কেউ যদি তথ্য জমা না–দিয়ে অপেক্ষা করেন, সেখানে স্বাভাবিকভাবেই বিলম্ব হবে।

যদিও এমএসভিপি–র কথায় আস্থা নেই বিরোধীদের। বিজেপি’র রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন, বারাসত মেডিক্যাল কলেজ বাইরে থেকে সুন্দর। ভিতরে একেবারে ভঙ্গুর। টাকা ছাড়া কোনও পরিষেবা পাওয়া যায় না। দালালরা সর্বত্র ছড়িয়ে আছে। শাসক দলের ছত্রছায়ায় চলছে এই দালালরাজ। তিনি আরও বলেন, সরকারি হাসপাতালের মর্গে মৃতদেহের চোখ উধাও। এটাই বলে দেয়, পরিষেবা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।

যদিও এই অভিযোগের উলটো সুর শোনা গেল শাসক শিবিরে। বারাসত পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান তাপস দাশগুপ্তের দাবি, এ রাজ্যে স্বাস্থ্য পরিষেবা আমূল বদলে গিয়েছে। ভুলত্রুটি তো যে কোনও ব্যবস্থাতেই হয়। বিরোধীরা শুধু রাজনীতি করছে। চোখ-কাণ্ডের পর সরকার আরও বেশি সতর্ক রয়েছে।

Advertisement