মুরাদাবাদ, ৩০ নভেম্বর— এসআইআর-এর লাগাতার কাজের চাপে ফের অমানবিক পরিণতি। রবিবার সকালে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মঘাতী হলেন উত্তরপ্রদেশের মুরাদাবাদের জাহিদপুরের বাসিন্দা, পেশায় স্কুল শিক্ষক ৪৫ বছর বয়সি সর্বেশ সিং। এসআইআর-এ নিয়োজিত ব্লক লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে টানা পরিশ্রমের চাপই তাঁকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল বলে অভিযোগ পরিবারের। তাঁর দেহ তল্লাশি করে একটি তিন পাতার সুইসাইড নোট উদ্ধার করেছে পুলিশ। সেখানে স্পষ্ট ভাষায় লেখা আছে– প্রবল মানসিক চাপ, অমানুষিক কাজের বোঝা এবং হতাশার কথা। নিজের শেষ চিঠিতে সর্বেশ লিখেছেন, ‘বাঁচতে চাই, কিন্তু উপায় নেই।’
পুলিশ ও পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত আট বছর ধরে জাহিদপুরের একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন সর্বেশ। প্রথমবারের জন্য বিএলও-র দায়িত্ব পান তিনি। পরিবার জানায়, বিগত কয়েকদিন ধরেই প্রচণ্ড মানসিক চাপে ছিলেন সর্বেশ। ঘরোয়া কথোপকথনেই বারবার বলতেন রাত-দিন কাজ করেও টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। দিন শেষে মাত্র ২-৩ ঘণ্টা ঘুমনোর সময় পাচ্ছেন। এসআইআর-এর দায়িত্ব তাঁকে কার্যত দমবন্ধ পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে বলেও অভিযোগ।
Advertisement
সর্বেশের ভাই বলেন, ‘গত কয়েকদিন ধরে দাদা খুব মনমরা থাকতেন। কাজের চাপে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম একটু বিশ্রাম নিলেই হয়তো ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু ও যে এমন সিদ্ধান্ত নেবে, ভাবতেই পারিনি।’ পরিবারের দাবি, শনিবার গভীর রাতে বা শুক্রবার ভোরে সর্বেশ আত্মঘাতী হন। সকালে ঘরের দরজা না খুলতেই সকলের সন্দেহ হয়। এরপর প্রতিবেশীদের সহায়তায় দরজা ভেঙে তাঁকে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।
Advertisement
সুইসাইড নোটে সর্বেশ লিখেছেন, ‘রাত-দিন কাজ করতে হচ্ছে। তারপরও এসআইআর-এর টার্গেট পূরণ হচ্ছে না। মাত্র ২-৩ ঘণ্টা ঘুমিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে। বাড়িতে আমার ৪ মেয়ে। দু’জন অসুস্থ। তাঁদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে ভয় করছে। বেঁচে থাকতে চাই, কিন্তু উপায় নেই। সময় যদি একটু বেশি পেতাম, হয়তো কাজটা শেষ করতে পারতাম। কিন্তু প্রথমবার বিএলও হয়েই এত চাপ সামলানো অসম্ভব হয়ে উঠেছে।’
ঘটনার পর জেলাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। তাঁদের অভিযোগ, এসআইআর-এর কাজে লক্ষ্য পূরণ করতে গিয়ে বিএলও-দের ওপর যে অমানুষিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে, তা একেবারে ‘মানবিকতার সীমা অতিক্রম’ করেছে। উত্তরপ্রদেশে এখন পর্যন্ত এসআইআর-এর বাড়তি কাজের চাপে ৭ জন বিএলও-র মৃত্যু হয়েছে বলে সহকর্মী মহলে দাবি উঠেছে। তাঁদের মধ্যে ৩ জন আত্মঘাতী। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে, এই প্রক্রিয়ায় তাড়াহুড়ো ও কর্মীদের উপর প্রচণ্ড চাপ কি আরও প্রাণ কেড়ে নেবে?
প্রশাসনের তরফে ঘটনার তদন্তের আশ্বাস দেওয়া হলেও বিএলও-দের ক্ষোভ ও আতঙ্ক প্রশমিত হয়নি। সর্বেশের পরিবার প্রশাসনের কাছে দাবি তুলেছেন, এসআইআরের কাজের চাপে যাঁরা দিনরাত পরিশ্রম করছেন, তাঁদের সুরক্ষার দিকে অবিলম্বে নজর দেওয়া হোক, যাতে আর কোনও পরিবার এমন মৃত্যুবার্তা না পায়।
Advertisement



