ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আরও বিপাকে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা সোনিয়া-রাহুল। সোনিয়া এবং রাহুল গান্ধী-সহ আরও ছয় সহযোগী এবং ব্যবসায়িক সংস্থার বিরুদ্ধে নতুন করে এফআইআর দায়ের করল দিল্লি পুলিশের ইকোনমিক অফেন্সেস উইং।
ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলায় আর্থিক তছরুপের তদন্ত করছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। তাদের হেডকোয়ার্টার্স ইনভেস্টিগেটিভ ইউনিট-এর অভিযোগের ভিত্তিতে এফআইআর দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ। ৩ অক্টোবর কংগ্রেস সাংসদদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ইডি ন্যাশনাল হেরাল্ডের আর্থিক তছরুপ মামলায় ২০০৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত তদন্তের বিস্তারিত তথ্য পুলিশকে জানিয়েছে।
Advertisement
‘প্রিভেনশন অফ মানি লন্ডারিং অ্যাক্ট’-এর ধারা ৬৬(২) ব্যবহার করে ইডি অন্য কোনও তদন্তকারী সংস্থাকে একটি নির্দিষ্ট অপরাধের জন্য এফআইআর দায়ের করতে বলতে পারে। এই এফআইআরটি তখন ইডি-র মূল মানি লন্ডারিং তদন্ত শুরু করার জন্য প্রাথমিক কারণ বা ‘প্রেডিকেট অফেন্স’ হিসেবে গণ্য হয়।
Advertisement
দুই হাজার কোটি টাকার মূল্যের ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’ –এর সম্পত্তি ফৌজদারি ষড়যন্ত্র করে নিজেদের নামে করার অভিযোগ রয়েছে কংগ্রেস সাংসদ ও অন্যান্যদের বিরুদ্ধে। ইয়ং ইন্ডিয়ান সংস্থার মাধ্যমে ন্যাশনাল হেরাল্ড অধিগ্রহণ করেছিল কংগ্রেস এবং গান্ধী পরিবারের হাতে প্রায় ৭৬ শতাংশ শেয়ার থাকার অভিযোগ।
পুলিশ সূত্রে খবর, ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২০বি (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র), ৪০৩ (অসৎ ভাবে সম্পত্তি আত্মসাৎ), ৪০৬ (বিশ্বাসভঙ্গের শাস্তি), ৪২০ (প্রতারণা) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। এফআইআরে রাহুল, সোনিয়া ছাড়াও নাম রয়েছে কংগ্রেস নেতা সুমন দুবে, স্যাম পিত্রোদার। সেই সঙ্গে কিছু সংস্থা, সংগঠনের নামও রয়েছে এফআইআরে। ইয়ং ইন্ডিয়ান, ডটেক্স মার্চেন্ডাইস লিমিটেড, ডটেক্সের প্রোমোটার সুনীল ভাণ্ডারি, অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড-এর নামে এফআইআ হয়েছে।
ন্যাশনাল হেরাল্ডে আর্থিক তছরুপের বিষয়টি প্রথম সামনে আনেন বিজেপির প্রাক্তন সাংসদ সুব্রহ্মণ্যম স্বামী। তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে ইডি ২০১৪ সালে জুন মাসে তদন্ত শুরু করে। পাতিয়ালা হাউসের মহানগর হাকিম আদালত মামলা শুরু হয়। ইডি গত এপ্রিলে আদালতে চার্জশিট জমা করে।
সনিয়া, রাহুল-সহ বাকিদের নাম চার্জশিটে রয়েছে। সেই চার্জশিট আদালত এখনও গ্রহণ করেনি। আগামী ১৬ ডিসেম্বর পরবর্তী শুনানি। রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই এ সব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। ‘অ্যাসোসিয়েটেড জার্নালস লিমিটেড’-এর শেয়ারহোল্ডারদের জিজ্ঞাসাবাদ হতে পারে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। ইয়ং ইন্ডিয়ানের নামে কোম্পানি হস্তান্তরের আগে কংগ্রেস তাদের সঙ্গে পরামর্শ করেছিল কিনা, তাও যাচাই করতে পারে পুলিশ।
ন্যাশনাল হেরাল্ড সংবাদপত্র প্রতিষ্ঠা করেন জহওরলালা নেহরু। ২০১৩ সালে কংগ্রেস জমানাতেই দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়। বিজেপি নেতার সুব্রহ্মন্য স্বামীর অভিযোগ অ্যাসোসিয়েটেড জার্নাল লিমিটেড-এর হাতে সংবাদপত্রটির মালিকানা ছিল। বাজারে তাদের কোটি কোটি টাকার দেনা ছিল। সেই দেনার বেশির ভাগটাই কংগ্রেসের কাছে থেকে নেওয়া বলে অভিযোগ।
২০০৮ সালে সংবাদপত্রটির প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যায়। সেই সময় সংস্থাটি অধিগ্রহণ করে সোনিয়া, রাহুল এবং কংগ্রেস নেতাদের ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান প্রাইভেট লিমিটেড’ সংস্থা। ন্যাশনাল হেরান্ডের কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির পাশাপাশি কোটি কোটি টাকার দেনাও চাপে ইয়ং ইন্ডিয়ানের উপরে। কিছু দিন পর কংগ্রেসের তরফে ঋণের টাকা মকুব করা হয়। সেই নিয়ে অভিযোগ দায়ের করেন বিজেপি নেতা এবং তদন্তের ভার নেয় ইডি।
Advertisement



