• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

শিল্পীর নবজন্ম

আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পশ্চাতে যে কদর্য অন্ধ বিদ্বেষ ছিল সেদিন অপেক্ষা আজ আরো বেশি করিয়া তাহা অনুভব করিতেছি।

ফাইল চিত্র

রম্যাঁ রলাঁ

পূর্ব প্রকাশিতর পর

Advertisement

ভয় পাইয়া আমার প্রকাশক আমাকে লিখিলেন, প্রত্যহই নূতন নূতন পুস্তকের দোকান জ্যাঁ ক্রিস্তফ বয়কট করিতেছে; এই সঙ্গে অনুরোধ করিলেন যাহা কিছু লিখিয়াছি সব প্রত্যাহার করিয়া আমি যেন একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করি। রোজ সকালে প্রাতরাশের টেবিলে চাকর এক একগাদা করিয়া বেনামী চিঠি আনিত। চিঠির লেখকেরা আমাকে এই বলিয়া শাসাইতেন যে জোরে-র ভাগ্যে যাহা ঘটিয়াছে আমার ভাগ্যেও তাহাই ঘটিবে। আমার আক্রমণে সমগ্র সাহিত্যিক পালটা যন আমাকে শেষ করিয়া দিবার জন্য ঝাঁপাইয়া পড়িল। তখন আলফ্রে কাপ্যুস নামক একজন ভদ্র লেখক-বন্ধু ফিগারো পত্রিকায় আমার বক্তব্য প্রকাশ করিতে চাহেন।
‘আমার বিরুদ্ধে অভিযোগকারিগণের উদ্দেশ্যে লিখিত পত্র’ শীর্ষক প্রবন্ধ আমি লিখিলাম। প্রবন্ধের তারিখটি লক্ষ্য করিতে হইবে: ১৭ই নভেম্বর, ১৯১৪। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আসিয়াছিল প্রধানত আমার সেই প্রবন্ধগুলি লক্ষ্য করিয়া, যেগুলিতে তখনও পিতৃভূমির সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ পাইয়াছিল। Inter arma caritas (৩০শে অক্টোবর) ও বেলজিয়ামের সম্মানার্থে লিখিত ছোট দুঃসাহসিক শোকগাথাঃ “To the People who are suffering for Justice” (২রা নভেম্বর)— এই দুইটি রচনা পর্যন্ত ঐ ভাবধারা বলবতী ছিল।

Advertisement

আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের পশ্চাতে যে কদর্য অন্ধ বিদ্বেষ ছিল সেদিন অপেক্ষা আজ আরো বেশি করিয়া তাহা অনুভব করিতেছি। জবাবপ্রসঙ্গে কোথাও আমি একটি কথাও প্রত্যাহার করি নাই। বরঞ্চ, পূর্বে যাহা বলিয়াছি তাহাই আরো জোর দিয়া বলিলাম। জার্মানীর প্রতি আমার সহানুভূতি ও মৈত্রীমনোভাব আমি সর্বপ্রতিকূলতার বিরুদ্ধে রক্ষা করিয়া চলিলাম। জার্মানীর নেতাদের বিরুদ্ধে উচ্চারিত শান্তির ঘোষণাবাণীর সহিত জার্মান জাতিকে আমি কিছুতেই জড়াইতে চাহিলাম না। ফ্রান্সে যে সকল বুদ্ধিজীবী ঘৃণার বিষকে ফেনাইয়া তুলিতেছিলেন তাহাদের বিরুদ্ধে আমি অভিযান শুরু করিয়াছিলাম। বিশেষ করিয়া আমার একটি কথায় সাংঘাতিক বিক্ষোভের সৃষ্টি করিল। ‘চিরন্তন যুদ্ধের’ এই শয়তান প্রচারকগণকে আমি বলিলাম যে, এমন দিন আসিবেই যখন রাইন নদীর ওপারের প্রতিবেশীদের সহিত ব্যবসায়ের স্বার্থে তাহারাই সর্বপ্রথম হাত মিলাইবে। (গত দশ বৎসর ধরিয়া তাহারা যে এই কাজটি করিয়া আসিতেছে, একথা না বলিলেও চলে। ১৯১৫ সালের ফরাসী জাতীয়তাবাদী আজ জার্মানীর নিকৃষ্টতম বণিক জাতীয়তাবাদীর সহিত হাত মিলাইয়াছে)। কিন্তু কেহ যে বলিবে ইহা হইতেছে বা হইবে,—তাহা তাহারা কিছুতেই ক্ষমা করিতে পারিবে না। আমার বন্ধুরা হতাশ ও ব্যথিত হইলেন. প্রকাশক আমাকে লিখিলেনঃ

‘‘ইহা কিছুতেই প্রকাশ করা চলে না, কারণ ফল হইবে শোচনীয়। আপনার যে সকল রচনা বারুদের গাড়িতে আগুন লাগাইয়াছে, আমার বিশ্বাস এই প্রবন্ধটি তাহার চেয়েও বিপজ্জনক। এ সম্পর্কে কাপ্যুস ও অন্যান্য বন্ধুদের সহিত পরামর্শ করিয়াছি; সকলেরই এই মত। প্রবন্ধটি প্রকাশ না করিতে, এমনকি বিদেশেও প্রকাশ না করিতে, আমি আপনাকে মিনতি জানাইতেছি। আপনার পক্ষ সমর্থন করিতে দিন অন্যদের, তাহারা চেষ্টা করিলে আপনি মুক্তিলাভ করিতে পারেন।’’

(ক্রমশ)

Advertisement