দিল্লি, ২৭ নভেম্বর— এসআইআর নিয়ে রাজ্যগুলির দায়ের করা মামলার শুনানিতে কার্যত নাগরিকত্ব-প্রমাণের দীর্ঘদিনের বিভ্রান্তির ইতি ঘটাল দেশের শীর্ষ আদালত। বুধবার এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে কমিশনকে কঠোর সতর্ক করার পর দিনই আধার কার্ড নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিল সুপ্রিম কোর্ট। জানিয়ে দিল, ‘আধার কার্ড কখনওই নাগরিকত্বকে সম্পূর্ণ ভাবে প্রমাণ করতে পারে না।’ আদালতের এক প্রশ্নের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গেল বহুদিনের বিতর্ক— আধারের মাধ্যমে সরকারি সুবিধা পাওয়া গেলেও তা নাগরিকত্বের একমাত্র প্রমাণ হতে পারে না।
এসআইআর সংক্রান্ত মামলা এদিন প্রধান বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর বাগচির ডিভিশন বেঞ্চে ওঠে। শুনানির সময় মামলাকারীদের আইনজীবীরা যুক্তি দেন, বৈধ নথির তালিকায় আধারকে নাগরিকত্ব-প্রমাণের মর্যাদা দেওয়া হোক। তার উত্তরে প্রধান বিচারপতির পাল্টা প্রশ্ন— ‘আধার কার্ড থাকলেই কি ভোটাধিকার দিতে হবে?’
Advertisement
বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, আধার মূলত জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে সুবিধা পাওয়ার জন্য তৈরি একটি নথি। প্রধান বিচারপতি উদাহরণ দিয়ে বলেন, প্রতিবেশী দেশের কোনও শ্রমিক ভারতে এসে কাজ করছেন— তাঁকে রেশনের সুবিধা দিতে আধার দেওয়া হতে পারে। কিন্তু সেই আধার থাকা মানেই কি তাঁকে ভোটার হিসেবে ধরে নেওয়া হবে? আদালতের মতে, ‘এটা আমাদের সাংবিধানিক নীতির অংশ নয়।’
Advertisement
বিচারপতি দীপঙ্কর বাগচি এদিন আরও পরিষ্কারভাবে জানান, কোনও ভোটারের নথিপত্র যাচাই করার সাংবিধানিক দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তাঁর কথায়, ‘আধার কার্ড কখনওই নাগরিকত্বকে পুরোপুরি প্রমাণ করতে পারে না। তাই একে বৈধ নথির তালিকায় একটি নথি হিসেবে ধরা যেতে পারে, একমাত্র নথি হিসেবে নয়।’ তিনি যোগ করেন, কারও ভোটাধিকার বাতিল হলে কমিশনকে তাকে নোটিস দিতেই হবে।
এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ-সহ একাধিক রাজ্যের দায়ের করা এসআইআর মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ সুপ্রিম কোর্ট ৯ ডিসেম্বর ধার্য করলে আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে কিছু প্রশ্ন তোলা হয়। তবে আদালত জানায়, সকল পক্ষের বক্তব্য শোনার জন্যই পর্যাপ্ত সময় রাখা হয়েছে।
এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে রাজ্যগুলিতে যখন রাজনৈতিক চাপানউতর চলছে, তখন আধার সংক্রান্ত সুপ্রিম কোর্টের এই মন্তব্যকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে প্রশাসনিক মহল। আদালতের পর্যবেক্ষণ বহুদিন ধরে চলা ‘আধার=নাগরিকত্ব’ বিভ্রান্তিকে একবাক্যে ছেদ করেছে।
Advertisement



