• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বলিউডের হি-ম্যান ধর্মেন্দ্র: ভারতীয় সিনেমার হৃদয়ে এক চিরন্তন আলো

ধর্মেন্দ্রের মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতের এক যুগের অবসান। কিন্তু তাঁর অভিনয়, পর্দায় তাঁর উপস্থিতি এবং দর্শকের হৃদয়ে তাঁর জায়গা থেকে যাবে।

ফাইল চিত্র

সৈয়দ হাসমত জালাল

বলিউডে শক্তি, স্বভাবসুলভ মাধুর্য ও সহজ মানবিকতার এক বিরল মিশ্রণ ছিলেন ধর্মেন্দ্র। সোমবার প্রয়াত হয়েছেন এই কিংবদন্তি অভিনেতা, যাঁর জীবনযাত্রা গ্রামবাংলার এক সাধারণ পরিবার থেকে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে অন্যতম জনপ্রিয় নায়ক হয়ে ওঠার এক অনন্য অধ্যায়।

Advertisement

ধর্মেন্দ্র ১৯৩৫ সালের ৮ ডিসেম্বর পাঞ্জাবের লুধিয়ানার নাসরালি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন স্কুলশিক্ষক, মা ছিলেন গৃহিণী। ছোটবেলার সাদাসিধে গ্রামজীবনই ধর্মেন্দ্রকে গড়ে তুলেছিল নম্র, পরিশ্রমী ও দৃঢ়চরিত্র একজন মানুষ হিসেবে।

Advertisement

১৯৬০ সালে ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ ছবির মাধ্যমে তাঁর বলিউড-যাত্রা শুরু হয়। প্রথমদিকে রোমান্টিক চরিত্রে অভিনয় করলেও অল্প সময়েই তিনি হয়ে ওঠেন অ্যাকশন-হিরো— দর্শকের কাছে ‘হি-ম্যান’। পর্দা জুড়ে তাঁর শক্তিশালী উপস্থিতি দারুণ আকৃষ্ট করে রাখত দর্শকদের। সেইসঙ্গে সহজ হাসি মেশানো স্বাভাবিক ব্যক্তিত্ব ও অভিনয়ের মাধ্যমে ভারতীয় দর্শকের মন জয় করতে খুব বেশি সময় লাগেনি তাঁর।

তাঁর অভিনীত ছবির তালিকা সুদীর্ঘ। তার মধ্যে যেগুলি প্রথমেই মনে আসে– ‘ফুল ঔর পাত্থর’, ‘বন্দিনী’, ‘সীতা ঔর গীতা’, ‘চুপকে চুপকে’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘ধরম বীর’, ‘দ্য বার্নিং ট্রেন’ ইত্যাদি। তবে তাঁর সবচেয়ে বহুলচর্চিত চরিত্র নিঃসন্দেহে ‘শোলে’ ছবির বীরু। বীরুর প্রাণবন্ত হাসি, উদ্দাম যুবকসুলভ স্বভাব, আর বন্ধুত্বের প্রতি অটুট বিশ্বাস— এই চরিত্রটিকে ভারতীয় সিনেমার ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। ‘বাসন্তী, ইন কুত্তোঁকে সামনে মত্ নাচনা’— ৫০ বছর পর এই সংলাপ আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে উজ্জ্বল। বীরু যেন ধর্মেন্দ্রর ব্যক্তিত্বেরই সম্প্রসারণ– শক্ত কিন্তু সংবেদনশীল, মজার কিন্তু দায়িত্ববান।

ব্যক্তিজীবনে ধর্মেন্দ্র ছিলেন ভীষণ পারিবারিক মানুষ। প্রথম স্ত্রী প্রকাশ কৌর ও তাঁর চার সন্তান— সানি ও ববি দেওল এবং দুই কন্যা। পরে তিনি হেমা মালিনীকে বিয়ে করেন, তাঁদের দুই কন্যা— এশা ও অহনা দেওল। দেওল পরিবার বলিউডে নিজেদের অভিনয় নৈপুণ্যের ছাপ রেখেছে, যা নিঃসন্দেহে ধর্মেন্দ্রর রেখে যাওয়া এক বড় উত্তরাধিকার।

অভিনয়ের পাশাপাশি রাজনীতিতেও সক্রিয় হয়েছিলেন তিনি। ২০০৪ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত লোকসভার সদস্য ছিলেন। তবে অভিনয়ের বাইরে তাঁর ব্যক্তিত্ব ছিল আরও বড় — তিনি ছিলেন বিনয়ী, মাটির মানুষ, যাঁকে শিল্পী, সহকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ— সবাই ভালোবাসতেন।

ধর্মেন্দ্রের মৃত্যু ভারতীয় চলচ্চিত্রজগতের এক যুগের অবসান। কিন্তু তাঁর অভিনয়, পর্দায় তাঁর উপস্থিতি এবং দর্শকের হৃদয়ে তাঁর জায়গা থেকে যাবে। তিনি তারকা ছিলেন, কিন্তু তার চেয়েও বড় ছিলেন মানুষ। তিনি আর নেই। তবু পর্দায় বীরুর হাসি, কৃষাণের চোখের দৃষ্টি আর মাটির কাছাকাছি থাকা সেই সহজ মানুষটি বেঁচে থাকবেন দর্শকদের স্মৃতিতে। ভারতীয় সিনেমার হৃদয়ে ধর্মেন্দ্র এক চিরন্তন আলো।

Advertisement