• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সুফিবাদকে পিছনে ফেলে অন্ধকার অধ্যায়ের অপেক্ষায় বাংলাদেশ

বাংলার লালন ফকির দেড়শ বছর আগে লিখেছিলেন, ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/ লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।’

প্রতীকী চিত্র

প্রবীর মজুমদার

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লিগ সরকারের বিরুদ্ধে ২০২৪-এর তথাকথিত গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা এমন একটি পরিবেশ তৈরি করেছে যেখানে ধর্মীয় উগ্রপন্থীরা সাহসী হয়ে উঠেছে। ফলে হিংস্র হামলার তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্রবাদের উদ্বেগজনক বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যাচ্ছে, কারণ ওহাবি-অনুপ্রাণিত উগ্রপন্থীরা সংখ্যালঘু হিন্দু মন্দির এবং সুন্নি সুফি মাজারগুলিকে লক্ষ্যবস্তু করছে। এই উগ্রপন্থীরা ধর্মীয় সহনশীলতাকে দুর্বল করছে এবং ঘৃণা ছড়াচ্ছে, যার ফলে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি হচ্ছে। গত ষোলো মাসে এই উগ্রপন্থীরা কেবল হিন্দু মন্দিরেই নয়, সুন্নি সুফি সাধকদের মাজারেও আক্রমণ করেছে।

Advertisement

বিশ্বের মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে ইসলামের নামে সন্ত্রাসী ওহাবি, সালাফি, তালেবান, আল-কায়েদা, আইএস ইত্যাদির নব-উত্থান চার দশকের বেশি নয়। বাংলাদেশে তাদের পুনর্জন্ম ১৯৭৫-এর পটপরিবর্তনের পর থেকে। ধর্মের নামে রাজনীতি ও সন্ত্রাস এর বৈশিষ্ট্য। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শান্তি ও সহমর্মিতার ইসলাম প্রচার করেছিলেন সুফি সাধকরা। অষ্টম শতাব্দীতে ভারতবর্ষে প্রথম ইসলাম প্রচারক মালিক দীনার ছিলেন সুফি মতবাদের অন্যতম প্রধান ইমাম হাসান আল বসরির শিষ্য। তাঁরা ছ’জন এসেছিলেন ইরাকের বসরা থেকে ভারতের কেরালায়। মালিক দিনার কেরালার থালাঙ্গানায় ‘চেরামাল জুমা মসজিদ’ নামে যে মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন, সেটি আরব বিশ্বের বাইরে প্রথম মসজিদ বলে দাবি করা হয়। এটি এখন কেরালার অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ।

Advertisement

উমাইয়া বংশের মোহাম্মদ বিন কাশিম ৭১১ খ্রিস্টাব্দে সিন্ধুর হিন্দু রাজা দাহিরকে পরাজিত করে তলোয়ারের জোরে ভারতের মাটিতে ইসলাম প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বটে, তবে সফল হননি। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শক্তি প্রয়োগ করে ইসলাম প্রচারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। মোহাম্মদ বিন কাশিমের পর গজনীর সুলতান মাহমুদ ও মোহম্মদ ঘোরি দিল্লিতে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নির্বিচারে অমুসলিম নিধন, মন্দির ধ্বংস করেছেন, বলপ্রয়োগ করে ধর্মান্তরিত করেছেন, পরে উপলব্ধি করেছেন গায়ের জোরে ধর্মপ্রচার ফলদায়ক হয় না। পক্ষান্তরে সুফি ধর্মপ্রচারকরা আফ্রিকা ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশে ইসলাম প্রচার করতে গিয়ে জবরদস্তি করেননি। তাঁরা শান্তি, সাম্য ও সৌহার্দের কথা বলেছেন। স্থানীয় সংস্কৃতি, লোকাচার ও ধর্মকে তাঁরা আঘাত করেননি, বরং বহু ক্ষেত্রে ইসলামকে আঞ্চলিক রূপ দিতে চেয়েছেন, মানুষের সেবা করেছেন, নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা বলেছেন, যে কারণে ভারতবর্ষ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ায় ইসলামের দ্রুত বিস্তার ঘটেছে।

ভারতবর্ষের সুফি সাধকদের মধ্যে বহুল পরিচিত হচ্ছেন খাজা মঈনউদ্দিন চিশতি, যিনি দক্ষিণ এশিয়ার চিশতিয়া মতবাদের জনক। আজমিরে তাঁর মাজারে প্রতিদিন ধর্মনির্বিশেষে হাজার হাজার ভক্তের সমাগম হয়। উপমহাদেশে চিশতিয়া মতবাদের পর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে মাদারিয়া, যে মতবাদের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ বদিউদ্দিন জিন্দা শাহ মাদার। যিনি কুতুবউল মাদার নামে বেশি পরিচিত। তাঁর মাজার রয়েছে উত্তর প্রদেশের কানপুরে। এরপর রয়েছেন বাগদাদের হজরত আবদুল কাদির জিলানীর অনুসারী, যাঁদের বলা হয় কাদেরিয়া। এই তিন ধারার বাইরে দক্ষিণ এশিয়ায় নকশবন্দীরা ও সুহরাওয়ার্দী মতবাদের অনুসারীও আছেন, যাঁরা তুলনামূলকভাবে রক্ষণশীল। নকশবন্দীরা গান, বাজনা, নাচকে হারাম মনে করেন। মুঘল সম্রাটদের মধ্যে বাবর ও আওরঙ্গজেব নকশবন্দী সুফিদের পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন হিন্দুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য। হালে চেচনিয়া ও ইরাকে নকশবন্দীরা অস্ত্র হাতে জিহাদ করছেন। সুহরাওয়ার্দী ও নকশবন্দীরা শরিয়তের ওপর বেশি গুরুত্ব দেন, অন্যরা গুরুত্ব দেন মরমিবাদের ওপর।

ভারতবর্ষের সুফিদের প্রধান তিনটি মতবাদ— চিশতিয়া, কাদেরিয়া ও মাদারিয়াদের ওপর ব্যাপক প্রভাব রয়েছে ইরানের জালালউদ্দীন রুমির। মধ্যযুগে রুমির শিষ্য ও অনুসারী দরবেশরা সিরিয়া, মিসর, ইরাক, ইরান, আফগানিস্তান হয়ে ভারতবর্ষ পর্যন্ত এসেছিলেন ধর্ম প্রচারের জন্য। বাংলায় যে সুফি সাধকরা ইসলাম প্রচার করেছেন তাঁদের মধ্যে সর্বাগ্রগণ্য শ্রীহট্টের হজরত শাহজালাল, যিনি ছিলেন রুমির ভাবশিষ্য। যাঁর জন্ম তুরস্কে। পূর্ব ভারতের জনপদ শ্রীহট্টে তাঁর আগমন ঘটেছিল ১৩০৩ খ্রিস্টাব্দে। জনশ্রুতি— রুমির নির্দেশে তিনি ইসলাম প্রচারের জন্য ভারতে এসেছিলেন। রুমির অনুসারীদের দরবেশ বলা হয়, যাঁরা নাচ ও গানে স্রষ্টার মাহাত্ম্য বর্ণনা করেন।

বাংলার লালন ফকির দেড়শ বছর আগে লিখেছিলেন, ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে/ লালন বলে জাতের কী রূপ দেখলাম না এই নজরে।’ কিংবা ‘সবে বলে লালন ফকির হিন্দু কি যবন/ লালন বলে আমার আমি না জানি সন্ধান।’ লালনের ছ’ শ বছর আগে পারস্যের রুমি লিখেছেন, ‘সব ধর্মেই ভালোবাসার কথা আছে/ ভালোবাসার কোনো ধর্ম নেই/ আমার কোনো ধর্ম নেই/ ভালোবাসাই আমার ধর্ম/ প্রতিটি হৃদয় আমার উপাসনাস্থল।’ জালালউদ্দিন রুমির প্রভাব শুধু দক্ষিণ এশিয়ার সুফিদের ওপর পড়েনি, হিন্দু ভক্তিবাদের অনুসারীরাও রুমির মানবিক দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন, যে দর্শনের মূল প্রোথিত রয়েছে ভারতীয় উপনিষদে। ভক্তিবাদের সবচেয়ে খ্যাতিমান সাধক কবীরের একটি বিখ্যাত দোঁহার বাংলা অনুবাদ— ‘আমাকে কোথায় খুঁজছো? আমি তো তোমারই ভেতর/ আমি কোনো তীর্থে নেই, কোনো প্রতিমায়ও নেই/ কোনো নির্জনতায় নেই, কোনো মন্দিরে নেই, মসজিদেও নেই, কাবা কিংবা কৈলাশেও নেই/ হে মানব আমি তোমারই ভেতর বিরাজ করি।’ ভক্তি ও সুফিরা ধর্মের নামে মানুষকে বিভক্ত করেননি।

সুফিদের শান্তি, সহমর্মিতা ও ভালোবাসার বিপরীতে অবস্থান করছে ওহাবি-সালাফি-মওদুদীবাদীদের কট্টর জিহাদি ইসলাম, যারা ক্ষমতায় যাওয়া বা থাকার জন্য হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন-সহ যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধকে ইসলামের নামে বৈধ করতে চায় জিহাদের কথা বলে। ওহাবিদের আক্রমণের লক্ষ্য ভিন্নধর্ম-ভিন্নমত-ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসী মানুষ। মানুষ স্রষ্টার সেরা সৃষ্টি, এটা তারা বিশ্বাস করে না। তারা বিশ্বাস করে তাদের মতানুসারীরাই খাঁটি মুসলমান, বাকিরা নাস্তিক, মুরতাদ, কাফের— অতএব হত্যার যোগ্য। ইমাম ইবনে তায়মিয়া থেকে আবুল আলা মওদুদী এবং অতি সাম্প্রতিক আবু বকর আল বোগদাদী এই ফতোয়াই দিয়েছেন। ইসলামকে এভাবে তাঁরা সন্ত্রাসের সমার্থক বানাতে চেয়েছেন, যা ইসলাম বিদ্বেষের পাশাপাশি অন্য ধর্মেও উগ্রতার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

ওহাবি-সালাফিরা শান্তি ও সম্প্রীতির ইসলাম পছন্দ করে না। কট্টর জিহাদপন্থিরা যখনই সুযোগ পেয়েছে তখনই সুফিদের ওপর হামলা করেছে, তাদের আবাস ও মাজার ধ্বংস করেছে। ওহাবি-সালাফি এবং তাদের পূর্ব ও উত্তরসূরিরা সঙ্গীত, নৃত্য ও চারুকলাসহ যা কিছু মানুষের সুকুমার প্রবৃত্তির বিকাশ ঘটায় সব হারাম ঘোষণা করেছে। তাদের রাজনৈতিক ইসলাম ও ধ্বংসাত্মক জিহাদের কারণে মানব সভ্যতার বহু স্মারক ধ্বংস হয়েছে। সম্প্রতি আমরা দেখছি, খিলাফত প্রতিষ্ঠার নামে ‘আইএস’-এর ওহাবিবাদী জঙ্গিরা কীভাবে ইরাক ও সিরিয়ায় মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ নিদর্শনসমূহ ধ্বংস করেছে।

পাকিস্তানে রাজনৈতিক ইসলামের ধ্বজাধারী সামরিক বাহিনী এবং তাদের রাজনৈতিক দোসর ওহাবিবাদী জামায়াতে ইসলামী ১৯৭১ সালে ইসলামের দোহাই দিয়ে বাংলাদেশে ৩০ লাখ নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে। তাদের এই গণহত্যা ও ধ্বংসযজ্ঞ থেকে মসজিদে প্রার্থনারত মুসলমানরাও রেহাই পায়নি। ধর্মের নামে হত্যা, সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের অবসান ঘটানোর জন্য স্বাধীনতার পর বাংলাদেশে সাংবিধানিকভাবে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। বাংলাদেশের মূল সংবিধানে ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রের অন্যতম মূলনীতি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। স্বাধীন বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা মানে ধর্মহীনতা নয়। মুসলমানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের বাধা দেয়ার ক্ষমতা এই রাষ্ট্রে কারও নাই। হিন্দুরা তাদের ধর্ম পালন করবে, কারও বাধা দেয়ার ক্ষমতা নাই। বৌদ্ধরা তাদের ধর্ম পালন করবে, খ্রিষ্টানরা তাদের ধর্ম পালন করবে, তাদের কেউ বাধা দিতে পারবে না। আমাদের শুধু আপত্তি হলো এই যে, ধর্মকে কেউ রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে না।’ বঙ্গবন্ধু ধর্মের বিরুদ্ধে ছিলেন না। তিনি ধর্মের নামে হত্যা, নির্যাতন, সন্ত্রাস বন্ধের পাশাপাশি ধর্মের পবিত্রতা রক্ষার জন্য ধর্মকে রাজনীতি ও রাষ্ট্র থেকে পৃথক রাখতে চেয়েছিলেন। সুফি ইসলামের সার কথাও তাই। স্বাধীনতাবিরোধীরা ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মতো মৌলবাদী, সন্ত্রাসী ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাবার জন্য নৃশংসভাবে হত্যা করেছিল বঙ্গবন্ধু এবং তাঁর প্রধান সহযোগীদের, যাঁদের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জিত হয়েছিল। ১৯৭১-এর গণহত্যাকারীদের মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দলগুলো বঙ্গবন্ধুর সরকার সাংবিধানিকভাবে নিষিদ্ধ করেছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমান সেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে ইসলামের নামে গণহত্যাকারী ও যুদ্ধাপরাধী জামায়াতে ইসলামি এবং তাদের সহযোগীদের আবার পাকিস্তানের মতো ধর্মের নামে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়ে বাংলাদেশে ধর্মের নামে সন্ত্রাসের বিষবৃক্ষ বপন করেছেন, যার বিষাক্ত ফল এখনও বাংলাদেশের জনগণ ভোগ করছে। ধর্মের নামে রাজনীতি করার ভয়ংকর পরিণামের উদাহরণ হচ্ছে পাকিস্তান। জামায়াতে ইসলামির প্রতিষ্ঠাতা আবুল আলা মওদুদির রাজনৈতিক জিহাদি ইসলাম পাকিস্তানকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। ধর্মের নামে রাজনীতি করতে গিয়ে পাকিস্তান যে তালেবান ও আল-কায়েদাদের মদত দিয়েছে তারাই আজ পাকিস্তানকে ধ্বংস করতে চাইছে।
২০০৪ সালে জামায়াত-বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে তাদের পোষা জঙ্গিরা হজরত শাহজালালের মাজারে ভয়াবহ বোমা হামলা চালিয়েছিল, যে সুফিসাধক বাংলাদেশে এসেছিলেন রুমির শান্তি ও সহমর্মিতার ইসলাম প্রচার করার জন্য। এই হামলা চালিয়ে জঙ্গিরা মাজার পরিদর্শনে আসা ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত আনোয়ার চৌধুরীকে হত্যা করতে চেয়েছিল। হামলায় দু’জন ভক্ত নিহত হয়েছিলেন এবং ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত গুরুতর আহত হয়েছিলেন। ২০১৬ সালের জুলাইয়ে তাদের অনুসারীরাই বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে আত্মঘাতী হত্যা চালিয়ে ২১ জন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের অধিকাংশ ছিলেন বিদেশি।

হালে হেফাজতে ইসলামকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জামায়াতীরা ইসলামের নামে সন্ত্রাস অব্যাহত রেখেছে। ওয়াজের নামে হেফাজতের নেতারা ভিন্নধর্ম, ভিন্নমত এবং ভিন্ন জীবনধারার অনুসারীদের বিরুদ্ধে ঘৃণা-বিদ্বেষ ছড়িয়ে গোটা সমাজকে মধ্যযুগীয় তামসিকতায় নিক্ষেপ করতে চাইছে। ‘হরকাতুল জিহাদ’ থেকে আরম্ভ করে হালের ‘আনসারউল্লাহ বাংলা টিম’সহ তাবৎ জঙ্গি মৌলবাদী সন্ত্রাসের ধর্মপিতা হচ্ছে ওহাবি-সালাফিবাদের অনুসারী জামায়াতে ইসলামী- যারা ভিন্নমত, ভিন্নধর্ম, ভিন্ন জীবনধারায় বিশ্বাসীদের ইসলামের নামে হত্যা করা ঈমানী কর্তব্য মনে করে। কখনও সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়িয়ে, কখনও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ভণ্ডুল করার জন্য বা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে তারা নিরীহ মানুষকে পুড়িয়ে মেরেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, ধর্মীয় ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছে, ভিন্ন ধর্মের পুরোহিত, যাজক, ভিক্ষুদের হত্যা করেছে। ভিন্নমতের লেখক, প্রকাশক এমনকি বিদেশি নাগরিকদেরও হত্যা করে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের ধারা অবরুদ্ধ করার পাশাপাশি বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত করেছে।

এ কথা অস্বীকার করা যাবে না, মুসলিম বিশ্বের তরুণদের একটি অংশের চেতনায় ওহাবি, সালাফি মৌলবাদ আধিপত্য বিস্তার করেছে। তবে আমাদের প্রত্যাশা একদিন এই বিভ্রান্ত তরুণরা ইসলামের সন্ত্রাস ও উন্মাদনা মুক্ত হবে। তা না হলে এক ভয়ঙ্কর অন্ধকার অধ্যায় অপেক্ষা করছে বাংলাদেশের জন্য।

 

Advertisement