• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

জীবিত মানুষকেই ‘মৃত’ বলছে নথি! ভুল তথ্যের যন্ত্রনায় শিবপুরের একাকী বয়স্কা

‘জীবিত’ মানুষকে ‘মৃত’ দেখিয়ে দেওয়া শুধু একটি ভুল নয় — এটি বঞ্চিত করে মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও নিজের পরিচয় প্রমাণের ভিত্তিকে।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

শিবপুরের রামমোহন মুখার্জি লেনের ৬৮ বছরের শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায় বেঁচে আছেন। কথা বলছেন। লড়াই করছেন। অথচ সরকারি নথি জানাচ্ছে, তিনি ‘মৃত’। এই বিভ্রান্তিকর নথিই আজ তাঁর জীবনে সবচেয়ে বড় আতঙ্কের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

জানা গিয়েছে, দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে নিয়মিত ভোট দিয়ে আসছেন শ্যামলী। ২০০২ সালে তাঁর নাম উঠেছিল ভোটার তালিকায়। তারপর থেকে লোকসভা হোক বা বিধানসভা — প্রতিটি নির্বাচনে তিনি নিজে গিয়ে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে নতুন ভোটার তালিকা প্রকাশের পরই বিপত্তি। হঠাৎ দেখা যায়, তাঁর নাম তালিকা থেকে উধাও! প্রতিবেশীদের মাধ্যমে আবার জানা যায়, তাঁকে নাকি ‘মৃত’ দেখানো হয়েছে।

Advertisement

এই ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন শ্যামলী। বহুদিন ধরে শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন তিনি। সাত বছর আগে প্রয়াত হয়েছেন স্বামী গৌরপদ বন্দ্যোপাধ্যায়। কয়েক মাস আগে মারা গিয়েছে একমাত্র মেয়ে। পরিবারে কেউ নেই, একাই থাকেন বাড়িতে। সেই জলজ্যান্ত মানুষটিকেই আজ সরকারি নথি বলছে, তিনি আর বেঁচে নেই!

Advertisement

আতঙ্কে শ্যামলী দেবী কাঁপা গলায় বলেন,‘আমি বেঁচে থেকেও মৃত! এখন কার কাছে যাব? কী করে প্রমাণ করব যে আমি আছি?’ প্রতিবেশীরা বলছেন, ভোটার তালিকা হালনাগাদে প্রশাসনের গাফিলতি বা তথ্য সংগ্রহে ভুলের জেরেই এমন বিপত্তি। কিন্তু শ্যামলী বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো মানুষ তাঁর অস্তিত্ব স্বীকৃতির লড়াইয়ে দিনে-দিনে মানসিক চাপে ভেঙে পড়ছেন।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসন দ্রুত হস্তক্ষেপ করে সমস্যার সমাধান করুক। কারণ ‘জীবিত’ মানুষকে ‘মৃত’ দেখিয়ে দেওয়া শুধু একটি ভুল নয় — এটি বঞ্চিত করে মানুষের অধিকার, মর্যাদা ও নিজের পরিচয় প্রমাণের ভিত্তিকে।

শ্যামলীর একটাই আশা, আবার যেন সরকারি নথিতে তাঁর পরিচয় ফিরে আসে। কারণ তাঁর কথায়, ‘মৃত বলে মুছে দিতে চাইলেই কি একজন মানুষ হারিয়ে যায়? আমি তো এখানেই আছি!’

Advertisement