দারোদ্ঘাটনের পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত অর্থাৎ গত ৬ মাসে দিঘার জগন্নাথ মন্দিরে ৯০ লক্ষ ভক্তের আগমন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ হাজার ভক্ত মন্দিরে ভিড় জমিয়েছেন। এর ফলে বেড়েছে মন্দিরের আয়ও। মন্দিরের অছি পরিষদের সদস্য রাধারমণ দাসের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মন্দিরের মোট দৈনিক আয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা। এর ফলে দিঘার জগন্নাথ ধাম একটি স্বতন্ত্র তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে।
চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল অক্ষয় তৃতীয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মন্দিরের দ্বারোদ্ঘাটন করেছিলেন। তারপর থেকে এখনও পর্যন্ত জনপ্রিয়তার শিখরে পৌঁছেছে এই মন্দির। তবে এই মন্দির নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। রাজ্য সরকারের উদ্যোগে নির্মিত হলেও উদ্বোধনের পর মন্দিরটিকে জগন্নাথ ধাম ‘কালচারাল সেন্টার’ নামের ট্রাস্টের হাতে তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী।
কলকাতার ইসকনের রাধারমণ দাসকে মন্দির পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়। পুরীর আদলে তৈরি এই মন্দিরকে ধাম বলা যায় কি না তা নিয়ে শুরু হয় আলোচনা। এই ইস্যু আদালত পর্যন্তও গড়ায়। পাশাপাশি প্রসাদ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়। তবে বিতর্ক হলেও এই মন্দিরকে ঘিরে প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। মন্দিরের সেবা এবং নিরাপত্তা, সাফাইকর্মী, হাউস কিপিং মিলিয়ে প্রায় ১৭০ জনকে কাজ দেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি মন্দিরকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ছোটো বড় অনেক ব্যবসা। মিষ্টির দোকান থেকে শুরু করে জগন্নাথের মূর্তি, ছবির দোকান ইত্যাদির মাধ্যমে সংসার চলছে অনেকের। বিশেষ বিশেষ দিনে মন্দিরে ভক্তসমাগম বেশি হয়। গত রাসপূর্ণিমায় বিপুল সংখ্যক ভক্তের আগমন হয়েছিল। এই সব বিশেষ দিনে ভিড় সামলাতে নাজেহাল হতে হয় পুলিশকে। মন্দিরের নিরাপত্তা জোরদার করতে মন্দির চত্বরে ‘জগন্নাথ ধাম পুলিশ আউট পোস্ট’ তৈরি করা হয়েছে।
রাধারমণ দাস জানিয়েছেন, ভক্ত সমাগমের ফলে ধীরে ধীরে আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়ে উঠছে দিঘার জগন্নাথ মন্দির। গত ৬ মাসের গড় হিসেবে মন্দিরের দৈনিক আয়ের হিসাব দিয়েছেন তিনি। তিনি জানিয়েছেন, হুন্ডিতে নগদ জমা পড়ে এক লক্ষ টাকা। অনুদান ও উপহার হিসেবে প্রায় এক লক্ষ টাকা পায় ট্রাস্ট। ভোগের প্রসাদ এবং অন্যান্য প্রসাদ বিক্রি থেকে দৈনিক আয় হয় প্রায় দু’লক্ষ টাকা। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মন্দিরের মোট দৈনিক আয় প্রায় ৪ লক্ষ টাকা।
রাজ্যের বহু বয়স্ক ভক্তরা পুরীতে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন করতে পারেন না। সেক্ষেত্রে রাজ্যের মধ্যে এরকম একটি মন্দির তৈরি হওয়ায় তাঁরা সহজেই জগন্নাথ দর্শন করতে পারছেন। তবে শুধু রাজ্যেবাসী নন ভিন রাজ্য ও দেশ থেকে বহু ভক্তরা এই মন্দিরে আসেন। মন্দিরের ভক্ত সমাগম ও আয় ভালো হওয়ায় খুব অল্প সময়ের মধ্যে মন্দিরটি একটি স্বতন্ত্র পরিচিতি লাভ করেছে।
Advertisement