হুগলি জেলার পান্ডুয়া ব্লকের বাঁটিকা বৈচী গ্রাম পঞ্চায়েতের পশ্চিমপাড়ায় এক স্কুলশিক্ষিকার কান্নার দৃশ্য ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা। এসআইআর ফর্ম আপডেটের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে না পেরে ভেঙে পড়েছেন ওই শিক্ষিকা, সুমিতা মুখোপাধ্যায়, যিনি ৪১ নম্বর বুথের বুথ লেভেল অফিসার (বিএলও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কান্নার ভিডিয়ো ছড়িয়ে পড়তেই বিষয়টি পৌঁছে যায় জনসাধারণের মধ্যে।
পরিবারের দাবি, গত বৃহস্পতিবার বিডিও অফিসে ‘লো পারফর্মার’ তকমা দিয়ে ডেকে পাঠানো হয় সুমিতাকে। সেখানে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকতে থাকতে তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তবুও সমস্যার কথা জানালেও কারও কোনও সাহায্য মেলেনি। বাড়ি ফিরে ভাতের থালা সামনে রেখেই হাউহাউ করে কাঁদতে থাকেন তিনি। পরিবারের সদস্যেরা জানান, মানসিক চাপে হাসপাতালে পাঠানোর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।
সুমিতার অভিযোগ, ১৩০০ এসআইআর ফর্মের মধ্যে প্রায় ৩০০ আপডেট করা সত্ত্বেও তাঁকে ‘লো পারফর্মার’ বলা হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘প্রযুক্তিগত সমস্যায় বারবার কাজ আটকে যাচ্ছে। সার্ভার না থাকলে আমি কীভাবে এন্ট্রি করব? সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ব্লক অফিসে বসে থেকেও কাজ হয়নি। খাওয়াও হয়নি। শরীর খারাপ হচ্ছিল। মনে হচ্ছিল, নিজেকে শেষ করে দিই।’
তিনি আরও দাবি করেন, বিএলও-দের উপর অমানবিক চাপ তৈরি করা হচ্ছে।
‘আমরা সকাল-বিকেল ফিল্ডওয়ার্ক করছি, অথচ আমাদের সমস্যাটা কেউ বুঝছে না। অনেকেই অসুস্থ হচ্ছেন, কেউ মারা যাচ্ছেন— তবু কমিশনের পরিকল্পনা স্পষ্ট নয়।’
স্বামী বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, ‘ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছিল। সার্ভার সমস্যার দায় উল্টে ওর ঘাড়ে চাপানো হচ্ছে। এই চাপ অনেকে সহ্য করতে পারছেন না।’ এ নিয়ে শিক্ষক, শিক্ষাকর্মী ও বিএলও ডিউটি প্রতিরোধ মঞ্চের আহ্বায়ক অনিমেষ হালদার সুমিতার কান্নার ভিডিয়ো সামাজিক মাধ্যমে শেয়ার করেন। এর পরই বিষয়টি নতুন মাত্রা পায়।
অন্য দিকে, নির্বাচন কমিশনের এক আধিকারিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘তিনি লো-পরফর্মিং বিএলও। যাঁদের কাজের অগ্রগতি কম ছিল, তাঁদের অ্যাপ-সংক্রান্ত সমস্যার সাহায্য করতে ব্লক অফিসে ডাকা হয়েছিল। সেখানে তাঁকে ‘হ্যান্ড হোল্ডিং হেল্প’ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে তাঁর চিকিৎসার বিষয়টিও দেখা হবে।’ সুমিতার কান্নায় সামনে এসেছে মাঠপর্যায়ে কাজ করা হাজার হাজার বিএলও-র চাপ, উদ্বেগ এবং প্রযুক্তিগত জটিলতার চিত্র— যা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে নির্বাচন প্রস্তুতির বাস্তবতা নিয়ে।
Advertisement